ভালোবাসার দিন আজ

ভ্যালেন্টাইনস ডে

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

ফাগুনের আগুনে আজ পুড়বে মন। বয়সের ব্যবধান ভুলে সে আগুনে আত্মাহুতি দিতে তাড়া। ভালোবাসার প্রকাশে ভিন্নতা থাকবে হয়তো; তবে আবেগে পূর্ণ থাকবে মনের প্রতিটি কোণ। ভালোবাসা তো কোনো যুক্তি মানে না। অদম্য টানে প্রিয় মানুষকে উদ্দেশ্য করে বারবার বলা হবে, ‘মনে ক’রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো/ আমার হাতের রাখী তোমার/ কনককঙ্কণে।’ প্রিয়জনকে কনককঙ্কণে বেঁধে প্রতীক্ষার ছায়া হয়ে থাকা আর তাকে মন দিয়ে ছুঁয়ে দেওয়ার নামই তো ভালোবাসা। প্রগাঢ় অনুরাগে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্লাবিত হবে আজ কোটি কোটি হৃদয়। অনুরাগতাড়িত সব হৃদয় এফোঁড়ওফোঁড় হবে গ্রিক দেবতা কিউপিডের বাঁকা ইশারায়। পর্বতসম ব্যস্ততা উপেক্ষা করে প্রিয়জনকে বলবে, ‘শুধু তোমাকেই ভালোবাসি’।

ভালোবাসা’ শব্দটা এতই মধুর যে, বারবার শুনলেও তৃষ্ণা মিটে না। শব্দটির মধ্যে লুকানো স্বর্গীয় সুখের ছোঁয়া অনুভব করেন শুধু তারাই, যারা ভালোবাসেন। এক অনন্য আবেশের মৌতাতে আবিষ্ট থাকার নামই তো ভালোবাসা। হিয়ার পরশে চমকে ওঠার অনুভূতির নাম ভালোবাসা। প্রখর রোদে হিমেল হাওয়ায় শীতল হওয়ার নামই ভালোবাসা।

কিন্তু এরই মাঝে মনের কোণে উঁকি দিয়ে যায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি; বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের জন্য ভালোবাসার ফুল সেদিন ফোটেনি। ফুটেছিল দিপালী সাহা, জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, কাঞ্চনের বুকের তপ্ত রক্তের রঞ্জিত হওয়া রাজপথের রক্তাক্ত গোলাপ। সেদিন ছিল স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সচিবালয় অভিমুখে প্রতিরোধ মিছিল। তিন দফা দাবির ভিত্তিতে সেই প্রতিরোধের ডাক দেয়া হয়েছিল। মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল, সব ছাত্র ও রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিদান ও সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দাবিতে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সমাবেশ ও সচিবালয় অভিমুখে মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। সেদিনের সেই রক্ত গোলাপের কথা ভুলি কী করে হলুদ গাঁদার ভিড়ে?

কবি আরণ্যক বসু লিখেছিলেন জন্মজন্মান্তরের ভালোবাসার কথা, ‘এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব/ এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন/ এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন/ মনে থাকবে?’ আর তুর্কি কবি নাজিম হিকমত তার ‘জেলখানার চিঠি’তে জীবনের শেষ সময়ের কথা উল্লেখ করে লিখেছিলেন, ‘নতজানু হয়ে আমি চেয়ে আছি মাটির দিকে/ উজ্জ্বল নীল ফুলের মঞ্জরিত শাখার দিকে আমি তাকিয়ে/ তুমি যেন মৃন্ময়ী বসন্ত, আমার প্রিয়তমা/ আমি তোমার দিকে তাকিয়ে।’

তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে সারা বিশ্বের মতো চট্টগ্রামের তারুণ্য ভালোবাসা দিবস পালন করবে। ভালোবাসার উৎসবে মুখর হবে চট্টগ্রামসহ সারা দেশ। গ্রামবাংলার জনজীবনেও লাগবে এ উৎসবের ছোঁয়া। মোবাইলের মেসেজ, মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার কিশলয় হয়ে উঠবে প্লাবিত।

ভালোবাসা আসলেতে পিটুইটারীর খেলা/ আমরা বোকারা বলি প্রেম। ইট’স এ গেইম , ইট’স এ গেইম।’ আসলে কি তাই? হয়তো বিজ্ঞান তাই বলে। আবেগ অনুভূতি সেখানে মূল্যহীন। তবু ভালোবাসা অমূল্য। প্রিয় মানুষটির হাতে বাগানের তরতাজা গোলাপটি তুলে দিতে সারা রাত কল্পনার রাজ্যে ওড়াউড়ি, নীল খাম চিঠি; চিঠির প্রতিটি লাইনে হৃদয়ের ব্যাকুলতা আর খাম বন্ধ হওয়ার আগে সেখানে ছড়িয়ে দেওয়া সেই গোলাপের পাপড়ি। আহ! বুকের ধুকধুকানি যে কমে না। ভালোবাসার জন্য আলাদা কোনো দিবসের প্রয়োজন আছে কি? এমন প্রশ্ন বারবার উঠেছে। ভালোবাসা দিবসে উৎসবের মাতামাতি দেখে অনেকে দিনটির সমালোচনায়ও মেতে উঠেন। আবার কেউ কেউ বলেন, থাক না ভালোবাসার জন্য বিশেষ একটি দিন; ক্ষতি তো নেই। আসলেই ক্ষতি তো নেই।

ইংরেজ কবি ও নাট্যকার শেঙপিয়রের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট নাটকে : ‘ভালোবাসা সমুদ্রের মতো গভীর। যতই আমি তোমাকে ভালোবাসি ততই এর গভীরতা বাড়ে। ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না।’

রোমের দ্বিতীয় সম্রাট ক্লডিয়াসের সময় যুবকযুবতীদের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য, যোদ্ধাদের কোনো প্রকার পিছুটান থাকবে না। আর এই আইন অমান্য করে বিদ্রোহী যাজক ভ্যালেন্টাইন লুকিয়ে যুবকযুবতীদের বিয়ে দিতেন। পরিণাম খুব ভালো ছিল না, ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয় ভ্যালেন্টাইনকে। আর ফাঁসির দিনই ভ্যালেন্টাইন চিরকুট লেখেন তাঁর প্রেয়সী জেলারের মেয়ের উদ্দেশে। এরপর থেকে ভ্যালেন্টাইনের প্রতি শ্রদ্ধার স্মারক হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন করা হয়। এ তো গেল ইতিহাসের কথা। ভালোবাসার জন্য এ ধরনের ইতিহাসের পথ ধরে না হাঁটলেও কিছু আসে যায় না। আমাদের বসন্তকালই বলে দিচ্ছে, এসব ভালোবাসাবাসির জন্য ইতিহাস লাগে না। আমরা ভালোবাসব, বাসতেই থাকব। আজ ভালোবাসব গতকালের চেয়ে একটু বেশি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজাদীতে সংবাদ প্রকাশের পর পরিবেশের অভিযান
পরবর্তী নিবন্ধ১১ জনের নাম উল্লেখ, অজ্ঞাতনামা ১২শ জন