ব্লেড শামীম ভাড়াটে সন্ত্রাসী

নির্বাচনের দিন তার গুলিতেই আহত হন দুজন পাহাড় কাটা, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ এর আগে তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন : র‌্যাব

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১০ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:০২ পূর্বাহ্ণ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ইতোপূর্বে তিনবার গ্রেপ্তার করেছে। তিনবারই তিনি জামিনে এসে অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। নাম তার শামীম আজাদ। তবে ‘ব্লেড শামীম’ নামেই পরিচিত। পৈতৃক বাড়ি মীরসরাইয়ে। বসবাস করেন নগরীর খুলশীতে। স্নাতক পাস শামীমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পাহাড় কাটা, হুমকি দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের হওয়া অন্তত ৫ মামলার আসামি তিনি। ছাত্রলীগ ক্যাডার হিসেবেই পরিচিত তিনি। ভোটের দিন অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়ে ফের আলোচনায় আসেন। সোমবার তাকে সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় র‌্যাব৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। শামীম মীরসরাই থানার সায়েরখালী গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, শামীম একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিলেন। শুধু এসব কর্মকাণ্ড নয়, তার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা, হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন অপরাধের তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। এসব অপকর্মের জন্য তার বিরুদ্ধে এর আগে ৫টির অধিক মামলা হয়েছে। তিনি মূলত ৭ জানুয়ারি পাহাড়তলী এলাকায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত করার জন্য আরও কিছু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে কেন্দ্রের সামনে আধিপত্য বিস্তার, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা বা সহিংসতা ঘটান। তিনি ভোটকেন্দ্রের সামনে নিজে বিদেশি পিস্তল দিয়ে প্রতিপক্ষকে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করেন। তার গুলিতেই শান্ত ও জামাল নামে দুজন গুরুতরভাবে আহত হন।

তিনি বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার শামীমের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়। সেই মামলায় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর শামীম সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে আত্মগোপনে যান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার অবস্থান নিশ্চিত করলে তিনি সেটি বুঝতে পেরে অন্য স্থানে আত্মগোপনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এর আগেই সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।

শামীম কার পক্ষে কাজ করেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, একজন সন্ত্রাসীর পরিচয় সে একজন সন্ত্রাসী। গ্রেপ্তার ব্লেড শামীমের পরিচয় তিনি একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজ। তিনি বিভিন্ন সময় অর্থের বিনিময়ে ভাড়ায় খেটে বিভিন্ন অপকর্ম করেছেন। আমরা তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। মূলত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে ভোটের দিন অপকর্ম বা এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করেছেন। এ সংক্রান্ত তথ্য আমরা যাচাইবাছাই করছি। নির্বাচনের দিন তিনি প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছেন এবং দুজনকে গুরুতর আহত করেছেন। ভিকটিম যে মামলা দায়ের করেছেন সেখানে উল্লেখ আছে, শামীম স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অর্থাৎ ফুলকপি মার্কার প্রার্থীর (মঞ্জুর আলম) পক্ষে কাজ করছেন। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি এবং তদন্ত করছি। এর আগে তাকে আমরা তিনবার আটক করেছি। তিনবারই তিনি কারাভোগ করে জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পরিচয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিলেন। এ ঘটনায় আর কেউ তাকে উস্কে দিয়েছিলেন কিনা বা কেউ জড়িত কিনা সে বিষয়টি তদন্ত করছি। যদি কারও সংশ্লিষ্টতা বা মদদদাতা পাই তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।

যে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এটি নির্বাচনের দিন ব্যবহার করা অস্ত্র কিনাএমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, এটি অবৈধ অস্ত্র। আমরা যে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছি সেটির সাথে নির্বাচনের দিন ব্যবহার করা অস্ত্রের অনেকটা মিল রয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানিয়েছেন, এটি সেই অস্ত্র নয়। এটি আসামি নিরাপত্তার জন্য তার পাশে রেখেছিলেন। এই অস্ত্র সেই অস্ত্র কিনা তা যাচাইয়ের জন্য কিছু ফরেনসিক চেক আছে। সেটি করলে জানতে পারব ওই অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছিল নাকি অন্য অস্ত্র দিয়ে।

৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় খুলশীর পাহাড়তলী কলেজ এলাকায় ভোটগ্রহণ চলাকালীন পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিপক্ষকে গুলি ছোড়েন শামীম। সেই ঘটনায় শান্ত বড়ুয়া (৩০) ও মো. জামাল (৩২) নামে দুজন গুরুতর আহত হন। জানা গেছে, শামীম ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ জামালের স্ত্রী বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে শামীমকে। এছাড়া কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুমানা চৌধুরী, কাজী কাউসার, সুমন, পারভেজের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৪৫ থেকে ৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

শামীম ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ছাত্র নাসিম আহমেদ সোহেল হত্যা মামলার আসামি। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয় ২০১৮ সালের ১১ জুন। এরপর ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই শামীমকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধ২৩০ টাকায় চাকরি শুরু, বর্তমানে কোটিপতি