ব্যয় বাড়ছে ১২শ কোটি টাকা

২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যয় প্রায় ১২শ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ের অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন, নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ, টোল প্লাজা নির্মাণ, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করে কন্ট্রোল টাওয়ার নির্মাণ, বিভিন্ন পয়েন্টে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, সাউন্ডপ্রুফ ব্যারিয়ার স্থাপন এবং বৈদ্যুতিক পোল স্থানান্তরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারণার চেয়ে খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকল্পের শুরুতে বিষয়গুলো না রাখায় নতুন করে ব্যয় বৃদ্ধির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর বাইরে বিভিন্ন পয়েন্টে নতুন করে কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় খরচ বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের কাজ ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। অবশ্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে বিভিন্ন খাতে খরচ কমানোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। কাঠগড় থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির কাজ শুরুর পর থেকে নানা ধরনের বিপত্তির মুখে পড়ে। বন্দর এলাকায় প্রকল্পটি রাস্তার মাঝ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে বন্দরের আপত্তির মুখে তা বাতিল করতে হয়। বন্দরের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিবর্তন করা হয় অ্যালাইনমেন্ট। এতে করে নতুন করে বন্দরের জায়গা অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ বাবদ খরচ বৃদ্ধি পায় ৪শ কোটি টাকা।

দেওয়ানহাট থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলাকায়ও অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তনে খরচ বৃদ্ধি পায়। আগ্রাবাদ এলাকায় বক্স কালভার্টের বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। শুরুতে বিষয়গুলো মাথায় না রাখায় নতুন করে ডিজাইন করতে গিয়ে বাড়তি খরচের মুখে পড়তে হয়। অপরদিকে প্রকল্প এলাকা থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পোল ও আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন স্থানান্তর খরচ ১৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২২০ কোটি টাকায়। প্রকল্প এলাকায় টোল প্লাজা নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। সিসিটিভি স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি টাকা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৮টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণে ব্যয় যুক্ত হয়েছে ১২ কোটি টাকা।

প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু জায়গায় ড্রয়িং, ডিজাইন পরিবর্তন করতে হয়েছে। এতে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন চেঞ্জ করতে হচ্ছে। এতে করে কাজের ধরন পাল্টে গেছে, বাড়ছে ব্যয়। প্রকল্পের খুঁটিনাটি দিকেও খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্দর এলাকায় ফ্লাইওভারের উপর দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন যুক্ত করতে হচ্ছে। স্থাপন করতে হচ্ছে সাউন্ডপ্রুফ ব্যারিয়ার।

এসব কারণে ৩ হাজার ২শ ৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার প্রকল্প ব্যয় ১ হাজার ১৯৯ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা বা ৩৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বর্তমানে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ৪৫০ কোটি ৫৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।

শুরুতে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে গত বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। তৃতীয় দফায় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ে প্রকল্পটির মেয়াদ। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। বন্দর এলাকায় কাজ শুরু করতে ঝামেলায় পড়ায় প্রকল্পটির কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। বর্তমানে দেওয়ানহাট থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত এলাকায় রেলওয়ের সাথে দেখা দেওয়া জটিলতায় প্রকল্পটির কার্যক্রম গতি পাচ্ছে না। প্রকল্প এলাকায় পিডিবির বৈদ্যুতিক পোল ও আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন স্থানান্তরেও জটিলতা কাজ করে। সবকিছু মিলে প্রকল্প ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি পায় বলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রকল্প ব্যয় না বাড়িয়ে উপায় ছিল না। ডিজাইন পরিবর্তনসহ নতুন বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য খরচ বাড়ছে। একই সাথে বাড়ছে সময়ও। নাগরিক বিড়ম্বনা কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করে কাজ করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ লাইন স্থানান্তরে বেগ পেতে হচ্ছে। ওয়াসার লাইন নিয়েও সমস্যা রয়েছে। প্রভৃতি কারণে ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, শুরু থেকে প্রকল্পটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। বিশেষ করে বন্দর এলাকায় শুরুতে যেভাবে প্রকল্পের ডিজাইন করা হয়েছিল সেভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। বন্দরের নিরাপত্তার ব্যাপারটি মাথায় নিয়ে নতুন করে ডিজাইন করতে হয়েছে। এতে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে, বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনের ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। শুধুমাত্র বন্দর এলাকার ডিজাইন পরিবর্তনে ৪শ কোটি টাকা খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, শহরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি নিয়ে বেশ কিছু জটিলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও ওয়াসার পাইপলাইন স্থানান্তরে বেগ পেতে হয়েছে। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে প্রকল্পটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য সিডিএ কাজ করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওমিক্রনের প্রধান উপসর্গ নাক দিয়ে পানি ঝরা
পরবর্তী নিবন্ধনগরীর ৩৮ স্পটে হবে ফুটওভার ব্রিজ