বেহাল দশা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের

নেই সাইটস্ক্রিন, ডাগ আউট, গরমে গাছ তলায় বসতে হয় ক্রিকেটারদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার দুটি ক্রিকেট লিগ চলছে এক সাথে। একটি প্রিমিয়ার লিগ আর অন্যটি প্রথম বিভাগ লিগ। প্রিমিয়ার আর প্রথম বিভাগের মধ্যে তফাৎটা বলতে গেলে একেবারে সামান্যই। কারন প্রিমিয়ার থেকে নেমে আসে প্রথম বিভাগে। আর প্রথম বিভাগ থেকে উঠে আসে প্রিমিয়ারে। কিন্তু এই দুই লিগের সাথে আয়োজক চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার আচরন যেন দু রকমের। প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ যেন সতীনের সন্তান। যেখানে ক্রিকেটের ন্যুনতম সুযোগ সুবিধাটাও নেই। সাগরিকাস্থ মহিলা কমপ্লেঙ মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ। এমনিতেই সে মাঠটি ক্রিকেট খেলার উপযোগী না। তার উপর এই মাঠের আয়তন সর্বোচ্চ তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগের জন্য উপযুক্ত। আর সেখানেই কিনা হচ্ছে প্রথম বিভাগ লিগ। মাঠে এবং উইকেটে যা অবস্থা তাতে ক্রিকেট খেলাটা তামাশাই বটে।

অথচ এই প্রথম বিভাগ লিগে থেলছে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় সারির ক্রিকেটারদের পাশাপাশি ঢাকা থেকে আসা ক্রিকেটাররাও। কিন্তু মাঠে ক্রিকেটারদের জন্য নেই কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা। ড্রেসিং রুম বলতে মহিলা কমপ্লেক্সের হোস্টেলের দুটি কক্ষ। যেখানে নেই কোন বাথরুম সুবিধা এমনকি পর্যাপ্ত পাখার ব্যবস্থাও। তারপরও সেই ড্রেসিং রুম থেকে বের হয়ে মাঠে যে ক্রিকেটাররা বসবে তার জন্য নেই কোন ছাউনি কিংবা সামিয়ানার ব্যবস্থা। রোদের মধ্যে গাছের নিচে বসে খেলা শেষ করছেন ক্রিকেটাররা। এই তপ্ত রোদে গায়ের জামা খুলে খালি গায়ে বসে কোন রকমে যেন খেলাটা শেষ করার ক্ষণ গননা করে ক্রিকেটাররা। নামে প্রথম বিভাগ লিগ হলেও নেই কোন সাইটস্ক্রিন। ফলে এই লিগকে প্রথম বিভাগ লিগ না বলে অনেকেই পাড়া গায়ের ক্রিকেট হিসেবে অবিহিত করছেন।

মহিলা কমপ্লেঙ মাঠের দুটি উইকেটে টানা চলছে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের ম্যাচ গুলো। তার সাথে চলে বিসিবির নানা বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটও। কিছুদিন আগে বিসিবির একটি কর্মসুচি ছিল তখন তারা উইকেটের পরিচর্যা করেছিল। এখন দুজন লোক নিয়োগ দিয়ে উইকেট প্রস্তুতির কাজ করানো হচ্ছে। যা মোটেও মান সম্মত হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন ক্রিকেটাররা। সিজেকেএস ক্রিকেট সম্পাদক আবদুল হান্নান আকবর জানিয়েছেন সাইটস্ক্রিন লাগানো হলেও তা বাতাসে ভেঙ্গে গেছে। চিটাগাং ক্লাবের একটি শ্যাচ রয়েছে। সেটি শেষ হলে তারা আবার সাইটস্ক্রিন লাগিয়ে দেবেন। প্রতি দুই দিন পরপর বাইরে থেকে কিনে এনে পানি সরবরাহ করছেন বলেও জানান তিনি। কিন্তু কোন ডাক আউট না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন ক্রিকেটাররা ড্রেসিং রুমে বসে খেলা দেখতে পারে। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন সেখানে খুব গরম। তাছাড়া ড্রেসিং রুম থেকে খেলা দেখাও সম্ভব না। তবে আগামী শনিবারের পর থেকে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সিজেকেএস ক্রিকেট সম্পাদক।

দেশের সবচাইতে ধনী ক্রীড়া সংস্থা চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তাদের সবকিছুতেই আভিজাত্যের ছাপ। সবকিছুতেই যেন আধুনিকতার ছোঁয়া। কেবল মাঠের খেলা ছাড়া। মাঠের বাইরে যতটানা সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান মাঠে খেলা ক্রীড়াবিদদের জন্য তা নেই ছিটেফোটাও। তাইতো প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ চলছে একরকম বেহাল দশায়। অবস্থাটা এমন যে কোন রকমে লিগ শেষ করতে পারলেই যেন হলো। এখানে কারো কোন দায় নেই। দায়িত্ববোধ নেই। ভাবখানা এমন, চলছেতো। আর এভাবে চালাতে গিয়ে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা মাঠের বাইরে যতটানা সমৃদ্ধ হচ্ছে মাঠে ততটা পিছিয়ে যাচ্ছে। এই কোন রকমে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতার কারণেই দিন দিন খেলাধুলায় পিছিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। জাতীয় পর্যায়ে খেলতে হয় দ্বিতীয় স্তরে। অথচ বান্দরবান, রাঙ্গামাটির মত পার্বত্য জেলা গুলো এখন জাতীয় ক্রিকেটে প্রথম স্তরে খেলে। সেখানে চট্টগ্রামের মত ক্রিকেট ঐতিহ্যের জেলা খেলে দ্বিতীয় স্তরে। তারপরও কর্মকর্তাদের টনক নড়েনা। কে জানে কখন তাদের মাঝে দায়িত্ববোধ জাগ্রত হবে। কে জানে আবার মাঠের বাইরের চাইতে মাঠের দিকে মনযোগী হবে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজব্বারের বলী খেলা ছড়িয়ে দিতে চান সারা বিশ্বে
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ২৬.০৭ কোটি টাকা