প্যান্ডোরার বাক্স খুলল

বিশ্ব নেতাদের গোপন সম্পদ ও লেনদেনের তথ্য ফাঁস

| সোমবার , ৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

মোনাকোয় ভ্লাদিমির পুতিনের গোপন সম্পদ, গোপনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে জর্ডানের রাজার ৭ কোটি পাউন্ড সম্পদ, কর ফাঁকি দিয়ে টনি ব্লেয়ারের অফিস ভবন কেনা- সবই প্রকাশ পেয়ে গেল। শুধু এরাই নন, বিশ্বজুড়ে ৩৫ রাষ্ট্র নেতা, ৩০০ সরকারি কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তা, শ খানেক বিলিয়নেয়ারের গোপন সম্পদ ও লেনদেন ফাঁস করে দিল ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’। গ্রিক উপকথায় বিশ্বের প্রথম মানবী প্যান্ডোরার বাঙের মতোই এক এক করে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বিশ্বের প্রভাবশালীদের গোপন সম্পদের খবর। খবর বিডিনিউজের।
গত সাত বছর ধরে ফিনসেন ফাইলস, প্যারাডাইস পেপার্স, পানামা পেপার্স এবং লাঙলিকসের প্রতিবেদনে অনেকের গোপন সম্পদের অনেকটাই ফাঁস করে। তবে ২০১৬ সালে যখন পানামা পেপার্স ঝড় তুলেছিল, তখন এটাও বলা হয়েছিল- ল’ ফার্ম মোস্যাক ফনসেকার কোটি নথি ফাঁস ‘গল্পের অর্ধেকটা’ মাত্র। সেই অর্ধেক গল্পের ধারাবাহিকতায়ই গতকাল রোববার যেন এল প্যান্ডোরা পেপার্স, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সেই সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ (আইসিআইজে) এর মাধ্যমে।
৯৫ হাজার অফশোর ফার্মের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ নথি নিয়ে সাড়ে ছয়শর বেশি সাংবাদিকের পরিশ্রমে খুলেছে এই প্যান্ডোরার বাঙ। নথিগুলো নিয়ে বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের যৌথ অনুসন্ধান ‘বহু বাঙ খুলে দিচ্ছে’ বলে আইসিআইজে প্রতিবেদনের নাম দিয়েছে প্যান্ডোরা পেপার্স। এসব নথিতে মোট ৩৫ জন রাষ্ট্র নেতার তথ্য মিলেছে। আছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা। তাদের মধ্যে কেউ এখনও পদে বহাল, কেউবা সাবেক। ৩০০ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন ৯০টির বেশি দেশের মন্ত্রী, বিচারক, মেয়র, মিলিটারি জেনারেল। যে একশ বিলিয়নেয়ারের তথ্য এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী নেতা, রক তারকা, বিনোদন জগতের তারকা। এদের অনেকে শেল কোম্পানির মাধ্যমে সম্পদ গড়েছেন, ইয়ট কিনেছেন, এমনকি পেইন্টিংও কিনেছেন। শেল কোম্পানি হচ্ছে একটি বৈধ ব্যবসার খোলস। মূল অর্থের মালিক কে, তা গোপন রাখার পাশাপাশি ওই অর্থের ব্যবস্থাপনা করাই এ ধরনের কোম্পানির কাজ। সাধারণত আসল মালিকের নাম এসব কোম্পানির কোনো কাগজে থাকে না। শেয়ার মালিকদের মধ্যে থাকেন আইনজীবী ও অ্যাকাউন্টেন্টরা। কখনো কখনো মালিকের অফিসের অফিস সহকারীও এসব শেল কোম্পানির পরিচালক বনে যান।
লন্ডনে একটি অফিস কেনার সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রী শেরি ব্লেয়ারের ৩ লাখ ১২ হাজার পাউন্ডের কর ফাঁকি দেওয়ার তথ্য প্যান্ডোরার নথিতে এসেছে। তারা একটি অফশোর ফার্ম কিনেছিলেন, যার মালিকানায় ছিল ওই ভবনটি। তালিকার আছেন জর্ডানের রাজা। তিনি গোপনে মালিবু এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন এবং লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে আটটি সম্পত্তি কিনেছেন। এ সপ্তাহে নির্বাচনের মুখে থাকা চেক প্রধানমন্ত্রী কীভাবে ফ্রান্সের দক্ষিণে ১ কোটি ২০ লাখ পাউন্ডের দুটো ভিলা কেনার ক্ষেত্রে অফশোর কোম্পানিকে কাজে লাগানোর বিষয়টি চেপে গেছেন, তাও প্রকাশ পেয়েছে ফাঁস হওয়া নথিতে। আজারবাইজানের ক্ষমতাসীন অলিয়েভ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অর্থ লুকাতে এই পরিবার একটি বিশাল অফশোর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এই পরিবার এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা যুক্তরাজ্যে ৪০ কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি কেনাবেচায় কীভাবে জড়িত তা উঠে এসেছে, প্যান্ডোরার নথিতে। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে আছেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা ও তার পরিবারের ছয় সদস্য, যাদের অফশোর কোম্পানি আছে। গোপন সম্পদ এবং লেনদেনের তালিকায় আরও আছেন সাইপ্রাস এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগ হবে গরীবের স্বার্থরক্ষার রাজনৈতিক প্লাটফর্ম
পরবর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার