বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের কাছে ইংল্যান্ড হারল ৪ উইকেটে

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ১৩ মার্চ, ২০২৩ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

টিটোয়েন্টি ক্রিকেটটা খুব বেশি ভালো খেলে না বাংলাদেশ। তেমন কথা প্রায়শই শুনতে হয়। তারপরও বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে। ৯টি সিরিজ জেতা বাংলাদেশের সে তালিকায় ছিল না ইংল্যান্ডের নাম। থাকবেইবা কোথা থেকে। এর আগে বাংলাদেশ যে কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজই খেলেনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এই সিরিজের আগে একটি মাত্র টিটোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ ইংলিশদের বিপক্ষে। সে ম্যাচের স্মৃতি বড়ই ধূসর। তার উপর ইংলিশরা টিটোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু এ কথা অনেকবারই প্রমাণ হয়েছে যে নিজেদের দিনে বাংলাদেশ যে কাউকে হারাতে সক্ষম। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে হেরে সিরিজ হার। তবে চট্টগ্রামে এসে ঘুরে দাঁড়াল টাইগাররা। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে জিতে এড়াল হোয়াইট ওয়াশ। সেই যে ইংলিশদের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো। দুই দিন পর সেই চট্টগ্রামেই টিটোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে কুপোকাত করে দিল ইংলিশদের। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংলিশদের একেবারে কুপোকাত করে জিতে নিল সিরিজ। এ যেন ওয়ানডে সিরিজে হারের মধুর প্রতিশোধ। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণির পর নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিং টাইগারদের এনে দিল ঐতিহাসিক সিরিজ জয়। দ্বিতীয় টিটোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিল সাকিব বাহিনী এক ম্যাচ হাতে রেখেই।

টসে হেরে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডকে শুরুতেই ধাক্কা দেন তাসকিন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আউট হন ডেভিড মালান। তবে শুরুর ধাক্কাটা অনেকটাই সামলে উঠেনি ইংল্যান্ড। পাওয়ার প্লেতে ৫০ রান তুলে ফেলে ইংল্যান্ড। পরের ওভার থেকেই ম্যাচের চিত্র বদলাতে থাকে সাকিবের হাত ধরে। নিজের প্রথম ওভারেই ফিরতি ক্যাচ বানিয়ে সাকিব ফেরান ১৯ বলে ২৫ রান করা সল্টকে। পরের ওভারে ইংল্যান্ডকে বড় ধাক্কাটা দেন হাসান মাহমুদ। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড করেন বাটলারকে। ৪ রান আসে ইংলিশ অধিনায়কের ব্যাট থেকে। এরপর দৃশ্যপটে মিরাজের আবির্ভাব । তার স্পিন বিষে নীল হয়ে যায় ইংলিশ ব্যাটাররা। নিজের প্রথম ওভারেই ফেরান ১৭ বলে ১৫ রান করা মইন আলিকে । পরে এক ওভারে ফিরিয়ে দেন তিনি স্যাম কারান ও ক্রিস ওকসকে। নিজের শেষ ওভারে ক্রিস জর্ডানকে ফিরিয়ে তিনি ১২ রানে তুলে নেন চার উইকেট। যা তার ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং। বেন ডাকেট ২৮ বলে ২৮ রান করে দলকে একশ রান পার করতে বড় ভুমিকা রাখেন। অভিষিক্ত রেহান আহমেদের ১১ রানের কল্যানে ১১৭ তে থামে ইংল্যান্ড।

এর জবাবে শুরুটা ভাল হয়নি টাইগারদের। তৃতীয় ওভারে স্যাম কারানকে পুল করতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন লিটন দাশ। পুরো সিরিজে ব্যর্থতার বলয় থেকে বের হতে পারছেন না এই ওপেনার। এবার করেন ৯ রান। এরপর অর্চারের শট বল মারতে গিয়ে মঈন আলির ক্যাচে পরিনত হন ৯ রান করা রনি। তবে আস্থায় অবিচল ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তৌহিদকে নিয়ে তিনি শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেন। জুটিতে ২৯ রান করার পর বিচ্ছিন্ন হয় এই জুটি। ১৭ রান করে ফিরেন হৃদয়। এরপর শান্ত আর মিরাজের জুটিতে আসে ৩২ বলে ৪১ রান। ১৬ বলে ২ ছক্কায় করেন ২০ রান করেন মিরাজ। এরপর অধিনায়ক সাকিব ক্রিজে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন রানের খাতা খোলার আগেই। আর্চারের বলে আফিফ যেভাবে বোল্ড হলেন তা ছিল একেবারেই দৃষ্টিকটু। কিন্তু শান্ত ছিলেন বাংলাদেশের নির্ভরতা হয়ে। চট্টগ্রামে ওয়ানডে এবং টিটোয়েন্টিতে হাফ সেঞ্চুরি করা শান্ত এই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি না পেলেও দলকে এনে দিয়েছেন ঐতিহাসিক জয়। ১৯ তম ওভারের প্রথম বলেই চার দিয়ে শুরু শান্তর। এরপর চতুর্থ এবং পঞ্চম বলে পরপর দুইটি চার মেরে দলকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ৪৭ বলে ৪৬ রান করে অপরাজিত শান্ত। আর তাসকিনের নামের পাশে ৩ বলে ৮ রান। টাইগারদের সামনে এখন ইংলিশদের হোয়াইট ওয়াশ করার স্বপ্ন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেডিকেল ভর্তির ফল প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধখেতাব বর্জন করলেন জয়নুল আবেদিন ও আবদুল হাকিম