বিশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির একটি দিন

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আজ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

‘ভালোবাসা আসলে যে পিটুইটারীর খেলা/ আমরা বোকারা বলি প্রেম। ইট’স এ গেইম, ইট’স এ গেইম।’
আসলে কি তাই? হয়তো বিজ্ঞান তা-ই বলে। আবেগ অনুভূতি সেখানে মূল্যহীন। তবু ভালোবাসা অমূল্য। প্রিয় মানুষটির হাতে বাগানের তরতাজা গোলাপটি তুলে দিতে সারা রাত কল্পনার রাজ্যে ওড়াউড়ি, নীল খাম চিঠি; চিঠির প্রতিটি লাইনে হৃদয়ের ব্যাকুলতা আর খাম বন্ধ হওয়ার আগে সেখানে ছড়িয়ে দেওয়া সেই গোলাপের পাপড়ি।
আহ! বুকের ধুকধুকানি যে কমে না। মাধুর্য, বিশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির প্রকাশ সেই ফুলটি। নানা রঙের ফুলের আবির আর গন্ধ কেড়ে নেয় বিষাদ, ভালোবাসার প্লাবনে ভাসিয়ে দেয় মন। কই, চোখে পড়ে না তো এমন আকুতি। ফুলের টানে ভ্রমর যে আর আসে না। বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে না যে আর! ভালোবাসার সেই রক্তরাঙা গোলাপ যে আর নেই! ভালোবাসার অবিচ্ছেদ্য অংশ ফুল আজ শুধুই স্ট্যাটাস বাড়ানোর নিয়ামক মাত্র। প্রতিযোগিতা আর বদলে যাওয়ার পাল্লায় পড়ে ভালোবাসাটাও যেন মোড়ের দোকানে সাজানো সেই ফুলের স্তূপ; যা দূরদূরান্ত থেকে পণ্য হিসেবেই জমা হয় ফুটপাতে। তাতে ম-ম গন্ধ নেই, সৌন্দর্যও যেন ঘুটে কুড়ানির হঠাৎ রাজরানি হয়ে ওঠার মতোই। বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে ১০৮টি নীলপদ্ম আনার সময় কোথায়? তোমার জন্য ৭টি অমরাবতী নিয়েও তাই অপেক্ষার প্রহর গুণে না কেউ।
বনেই শুধু নয়, ফাগুনের আগুনে পুড়বে মন। বয়সের ব্যবধান ভুলে সে আগুনে আত্মাহুতি দিতে কী ভীষণ তাড়া! ভালোবাসার প্রকাশে ভিন্নতা থাকবে হয়তো। তবে আবেগে পূর্ণ থাকবে মনের প্রতিটি কোণ। ভালোবাসা যে কোনো যুক্তি মানে না। প্রিয়জনকে কনককঙ্কণে বেঁধে প্রতীক্ষার ছায়া হয়ে থাকা আর তাকে মন দিয়ে ছুঁয়ে দেওয়ার নামই তো ভালোবাসা।
প্রগাঢ় অনুরাগে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আজ প্লাবিত হবে কোটি কোটি হৃদয়। অনুরাগতাড়িত সব হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় হবে গ্রিক দেবতা কিউপিডের বাঁকা ইশারায়। পর্বতসম ব্যস্ততা উপেক্ষা করে প্রিয়জনকে বলবে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
এরই মাঝে মনের কোণে উঁকি দিয়ে যায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের জন্য ভালোবাসার ফুল সেদিন ফোটেনি। ফুটেছিল দিপালী সাহা, জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, কাঞ্চনের বুকের তপ্ত রক্তে রঞ্জিত হওয়া রাজপথের রক্তাক্ত গোলাপ। সেদিন ছিল স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সচিবালয় অভিমুখে প্রতিরোধ মিছিল। তিন দফা দাবির ভিত্তিতে সেই প্রতিরোধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল, সব ছাত্র ও রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিদান ও সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এই তিন দফা দাবিতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সমাবেশ ও সচিবালয় অভিমুখে মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। হলুদ গাঁদার ভিড়ে সেদিনের সেই রক্ত গোলাপের কথা ভুলি কী করে?
কবি আরণ্যক বসু লিখেছিলেন জন্ম-জন্মান্তরের ভালোবাসার কথা, ‘এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব/ এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন/ এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন/ মনে থাকবে?’
তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে সারা বিশ্বের মতো চট্টগ্রামের তারুণ্য ভালোবাসা দিবস পালন করবে। ভালোবাসার উৎসবে মুখর হবে চট্টগ্রামসহ সারা দেশ। গ্রাম-বাংলার জনজীবনেও লাগবে উৎসবের ছোঁয়া। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার কিশলয় হয়ে উঠবে প্লাবিত।
কারো কাছে ভালোবাসা রবীন্দ্রনাথের লাইনের মতো ‘সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময়?’ তবে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় ভালোবাসা নিছক যাতনা বা বেদনা পাওয়ার জায়গা নয়। সুখের মাঝে এক চিলতে বেদনা তো থাকবেই।
রোমের দ্বিতীয় সম্রাট ক্লডিয়াসের সময় যুবক-যুবতীদের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য, যোদ্ধাদের কোনো প্রকার পিছুটান থাকবে না। আর এই আইন অমান্য করে বিদ্রোহী যাজক ভ্যালেন্টাইন লুকিয়ে যুবক-যুবতীদের বিয়ে দিতেন। পরিণাম খুব ভালো ছিল না, ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয় ভ্যালেন্টাইনকে। আর ফাঁসির দিনই ভ্যালেন্টাইন চিরকুট লেখেন তাঁর প্রেয়সী জেলারের মেয়ের উদ্দেশে। এরপর থেকে ভ্যালেন্টাইনের প্রতি শ্রদ্ধার স্মারক হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন করা হয়।
চট্টগ্রামে এবারও ভালোবাসার স্মৃতিচারণ, কবিতা আবৃত্তি, গান, ভালোবাসার চিঠি পাঠ এবং ভালোবাসার দাবিনামা উপস্থাপনসহ আরও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাঙিয়ে তোলা হবে দিবসটিকে। জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এবার আয়োজন করেছেন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের। ‘বাংলাদেশ দেখবে জামালখান, ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে’ শিরোনামে ডা. খাস্তগীর স্কুল সংলগ্ন চত্বরে আজ সকাল ১০টা থেকে এ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউল্লেখযোগ্য ১০ কলেজের ফল
পরবর্তী নিবন্ধ১৬ কলেজে শতভাগ পাস