বিমর্ষ প্রদীপ ও লিয়াকত কনডেম সেলে প্রথম রাত

| বুধবার , ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কনডেম সেলের নিঃসঙ্গ জীবন শুরু হয়েছে। পাশের প্রকোষ্ঠে সঙ্গী হিসেবে থাকছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি সাবেক পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী। দেড় বছর আগে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে হত্যার পর এতদিন বিচারাধীন মামলায় হাজতি হিসেবে কক্সবাজারের কারাগারে ছিলেন তারা। সোমবার রায় হয়ে যাওয়ার পর বন্দি হিসেবে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়। খবর বিডিনিউজের।
কক্সবাজারের জেল সুপার মো. নেছার আহমেদ গতকাল দুপুরে বলেন, সোমবার কারাগারে আনার পরপরই কারাবিধি অনুযায়ী আসামিদের কয়েদির পোশাক পরানো হয়। পরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে দুটি কনডেম সেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, একটি কনডেম সেলে একজন আসামিই থাকেন। গতকাল রাত থেকেই তারা সেখানে দুটি আলাদা সেলে একাকী রয়েছেন। ফাঁসির আসামি হিসেবে প্রদীপ ও লিয়াকতের সামনে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রয়েছে। আপিলে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে তারা আবেদন করতে পারবেন আপিল বিভাগে। সেখানে রায়ের পর তা পুনর্বিবেচনার আবেদনও করতে পারবেন। তবে ততদিন পর্যন্ত কনডেম সেলেই থাকতে হবে তাদের। কারাগার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাজাপ্রাপ্তদের কারাগারে আনার পর সবাইকে কয়েদির পোশাক পরতে দেওয়া হয়। তখন প্রদীপ কুমার দাশ সেই পোশাক পরতে ঝামেলা তৈরি করেন। তিনি কয়েদির পোশাক পরবেন না বলে গোঁ ধরেন। পরে অবশ্য তাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে কয়েদির পোশাক পরানো হয়। লিয়াকত অবশ্য কারারক্ষীদের কথামতো পোশাক পরে কনডেম সেলে ঢুকে যান। তিনি কোনো কথা বলছিলেন না; কিছুটা বিমর্ষ ছিলেন। বাকিরা কোনো ঝামেলা না করেই নিজ নিজ ওয়ার্ডে চলে যান। তারা রাতে ও সকালের খাবার গ্রহণ করেছেন। প্রদীপ আর লিয়াকতকে বিমর্ষ দেখা গেছে।
সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আরও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। খালাস পেয়েছেন সাতজন।
জেল সুপার নেছার বলেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছয়জনকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। যে সাতজন বেকসুর খালাস পেয়েছেন, তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, একজন আসামি খালাস পেলে তিনি কাঠগড়া থেকেই চলে যেতে পারেন। কিন্তু যেহেতু শনাক্তকরণের ব্যাপার থাকে তাই তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এই মামলার সব আসামিই রায় শেষে কারাগারে এসেছেন। পরে সাতজনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গতকাল রাতেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা চলে গেছেন।
খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল-মামুন, এএসআই মো. লিটন মিয়া এবং এপিবিএনের এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, টেকনাফ থানার কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও এএসআই সাগর দেব এবং সিনহার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলার তিন সাক্ষী পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় সিনহাকে। সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর কয়েকজন তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর জন্য কক্সবাজারে গিয়েছিলেন এ যুবক। টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ওসি প্রদীপের বন্দুকযুদ্ধে ছদ্মাবরণে হত্যা ও চাঁদাবাজির ঘটনা জেনে যাওয়ায় সিনহাকে পরিকল্পিতভাবে প্রদীপ হত্যা করেন বলে আদালতের রায়ে উঠে এসেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমার্চের মধ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকার গ্রাহকের জন্য টিভি ডিজিটাল সেট টপ বক্স : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস আজ