বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পিডিবির ৪ প্রস্তাবনা

বাড়তে পারে আগামী মাস থেকে ।। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর হবে চূড়ান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

গ্রাহক পর্যায়ে আগামী মাস (ফেব্রুয়ারি) থেকে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি। ইতোমধ্যে পিডিবির এই প্রস্তাবের উপর শুনানি শেষে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পিডিবি চট্টগ্রামের এক প্রকৌশলী। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের উপর নির্ভর করছে গ্রাহক পর্যায়ে কত শতাংশ বাড়বে। এই ব্যাপারে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রাহক পর্যায়ে এবং ইন্ডাস্ট্রিয়ালে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবের উপর শুনানি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর চূড়ান্ত হবে কত শতাংশ বাড়ছে। এটা প্রথমে ৫ শতাংশও হতে পারে, ১০ শতাংশও হতে পারে আবার ১৫ শতাংশও হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী।

জানা গেছে, পিডিবির প্রস্তাবনার উপর প্রধানমন্ত্রী যত শতাংশ বাড়ানোর অনুমোদন দেবেনসেটাই বাড়বে। পিডিবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮ দশমিক ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রায় ১৫ টাকা (১৪ দশমিক ৬৮ টাকা) করার প্রস্তাব দিয়েছে। ইতোমধ্যে পিডিবির এই প্রস্তাবের উপর শুনানিও সম্পন্ন হয়েছে।

জানা গেছে, আগামী মাস থেকেই তা কার্যকরের প্রস্তাব করা হয়েছে। উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি শূন্যে নামাতে এ প্রেক্ষাপটে চারটি বিকল্প প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এর পাশাপাশি বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির ফলে বিতরণ কোম্পনি ও সংস্থাগুলোর লোকসান শূন্যে নামাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পিডিবি।

সমপ্রতি চূড়ান্ত করা এ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর বর্তমান গড় ট্যারিফ আট টাকা ২৫ পয়সা। তবে বিদ্যমান বাল্ক (ছয় টাকা ৭০ পয়সা) ট্যারিফে ভারিত গড়ে তারা ৫৫ পয়সা বা ছয় দশমিক ৬১ শতাংশ ঘাটতিতে রয়েছে। এর সাথে বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধি করলে তাদের লোকসান আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই লোকসান শূন্যে নামিয়ে আনতে বাল্কের পাশাপাশি খুচরা পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হবে।

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবে জানানো হয়েছে, ভর্তুকি শূন্যে নামাতে বাল্ক মূল্যহার ছয় টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ১১ পয়সা করতে হবে। এর সাথে বিতরণ লস, বিতরণ কোম্পানিগুলোর পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় যুক্ত করলে খুচরা মূল্যহার ভারিত গড়ে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা করতে হবে।

এতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর লোকসান শূন্য হবে। এজন্য গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার গড়ে ছয় টাকা ৪৩ পয়সা বা প্রায় ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে।

প্রস্তাবনায় জানানো হয়েছে, বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধিতে প্রস্তাব কার্যকর করলে ভর্তুকি শূন্যে নামাতে ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে পাঁচ শতাংশ হারে বাল্ক মূল্যহার বাড়াতে হবে।

এই প্রস্তাব কার্যকর হলে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ খাতে কোনো ভর্তুকি দিতে হবে না। এক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যমান ঘাটতি পূরণসহ মূল্যহার ফেব্রুয়ারিতে ১১ শতাংশ বাড়াতে হবে। এরপর মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার শতাংশ হারে এবং ডিসেম্বরে ১০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হবে।

বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় প্রস্তাব কার্যকর করা হলে ভর্তুকি শূন্যে নামাতে ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রতি মাসে ১০ শতাংশ হারে বাল্ক মূল্যহার বাড়াতে হবে। এতে করে আগস্ট থেকে আর ভর্তুকি লাগবে না। এক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যমান ঘাটতি পূরণসহ ফেব্রুয়ারিতে ১৫ শতাংশ দাম বাড়াতে হবে। তারপর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৯ শতাংশ হারে এবং জুলাইয়ে ১১ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হবে।

বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির তৃতীয় প্রস্তাব কার্যকর হলে ভর্তুকি শূন্যে নামাতে ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাস পরপর বাল্ক মূল্যহার ১৬ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির পর মে, আগস্ট ও নভেম্বরে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার বাড়াতে হবে।

এতে করে নভেম্বর থেকে আর ভর্তুকি লাগবে না বিদ্যুতে। এতে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যমান ঘাটতি পূরণসহ ফেব্রুয়ারিতে ২১ শতাংশ এবং মে, আগস্ট ও নভেম্বরে ১৪ শতাংশ হারে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে।

বাল্ক মূল্যহারের চতুর্থ প্রস্তাব কার্যকর করলে ফেব্রুয়ারিতে ৪০ ও জুলাইতে ৩০ শতাংশ বাড়াতে হবে বাল্ক মূল্যহার। এতে জুলাই থেকে ভর্তুকি শূন্যে নামবে। এক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যমান ঘাটতি পূরণসহ ফেব্রুয়ারিতে ৪২ শতাংশ ও জুলাইতে ২৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজাদীকে বলেন, পিডিবির চার বিকল্প প্রস্তাব যাচাইবাছাই করে দেখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও কম ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাবটি হয়তো প্রথম পর্যায়ে আগামী মাস থেকে গ্রাহক পর্যায়ে বাস্তবায়ন হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের দায়িত্ব বণ্টন
পরবর্তী নিবন্ধএইচএসসিতে বৃত্তি পেলেন ৯২৫ জন