বিদ্যুতের খুঁটির জন্য এক বছর পিছিয়ে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৪ মে, ২০২১ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক খুঁটির জন্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প লালখান বাজার-শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ এক বছর পিছিয়ে গেছে। প্রকল্প শুরুর পর থেকে বিদ্যুতের খুঁটি নিয়ে সংকটে থাকা এই প্রকল্পটির প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং এবং চৌমুহনী থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে প্রায় সাড়ে তিনশরও বেশি বৈদ্যুতিক খুঁটি রয়েছে। যেগুলোর কারণে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) খুঁটি সরানোর জন্য সাড়ে ১৫ কোটি টাকা প্রদান করেছে। তবে নগরীর বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে গিয়ে পিলার সরানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
সিডিএর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি বিভিন্ন সময় নানা প্রতিকূলতায় পড়ে। পাঁচটি পৃথক ধাপে ভাগ করে নির্মাণ করা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে লালখান বাজার-বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত প্রথম ধাপ, বারেক বিল্ডিং-সল্টগোলা ক্রসিং দ্বিতীয় ধাপ, সল্টগোলা ক্রসিং-সিমেন্ট ক্রসিং তৃতীয় ধাপ, সিমেন্ট ক্রসিং-কাঠগড় চতুর্থ ধাপ এবং কাঠগড় থেকে পতেঙ্গার ল্যান্ডিং পয়েন্ট পর্যন্ত পঞ্চম ধাপ চিহ্নিত করা হয়। এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল শেষ ধাপ থেকে। প্রকল্পটির পতেঙ্গা-সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত এলাকার কাজ এগিয়ে গেলেও সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত এলাকায় কাজ শুরু করা যায়নি। চৌমুহনী থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত এলাকায়ও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এসব এলাকায় কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক খুঁটি প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠেছে।
সিডিএর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, বন্দর এলাকাসহ আগ্রাবাদে যাতে যানজট পরিস্থিতি সহনীয় থাকে সেজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শর্ত হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য সড়কের মাঝখানে যে অংশটি ঘিরে ফেলা হবে তার উভয় পাশে যান চলাচলের জন্য দুই লেন করে চার লেনের রাস্তা থাকতে হবে। সিডিএ রাস্তার যে অংশটি টিন দিয়ে ঘেরাও করছে তার উভয় পাশে চার লেনের রাস্তা তৈরি করেছে। কিন্তু রাস্তার মাঝে সাড়ে তিন শতাধিক বৈদুতিক খুঁটি থাকায় গাড়ি চলাচলের জন্য দুই লেনের রাস্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। রাস্তা বড় হলেও মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। খুঁটিগুলো সরিয়ে নেওয়া হলেই দুই লেনের রাস্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং এবং চৌমুহনী থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত অন্তত সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তায় এই ধরনের বৈদ্যুতিক খুঁটির জন্য কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।
সিডিএর একজন প্রকৌশলী গতকাল আজাদীকে বলেন, বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করেছে। এগুলো সরানো না হলে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে খুঁটিগুলো সরানোর জন্য ইতোমধ্যে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু তারা এত ঢিমেতালে খুঁটি সরাচ্ছে, প্রকল্পের কাজই আটকে রয়েছে। খুঁটি সমস্যার কারণে প্রকল্পটি অন্তত এক বছর পিছিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য আমাদের কয়েকশ পিলার সরাতে হয়েছে। এখনো আমরা কাজ করছি। তবে পিলার সরানোর সাথে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপারটি জড়িত। কোনো এলাকার পিলার সরাতে হলে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হয়। আগে রোজার কারণে, বর্তমানে গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে পিলার সরানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ক্রমান্বয়ে পিলার সরাব।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, পিলার সরানোর জন্য আমরা পিডিবিকে বলেছি। তারাও চেষ্টা করছে। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে অনেক কিছু সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির মেয়াদ এই জুনে শেষ হয়ে যাচ্ছিল। ইতোমধ্যে এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। ২০২৩ সালের জুনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরেকটি ঘূর্ণিঝড় আসছে, সতর্ক থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধমোবাইল বন্ধক রেখে ইয়াবা বিক্রি