বিদায় প্রিয় নেতা

আ ন ম অহিদুল আলম | সোমবার , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

কোনো অনুষ্ঠানে রঙিন পোস্টারে ছাপা হবেনা আপনার ছবি। প্রধান অতিথি হয়েও আর আসবেন না। অভিভাবকের আসন আজ শূন্য। যা পূরণ হওয়ার নয়। আপনার মনে একটি দুঃখ ছিল, মৃত্যুর পর জাতীয় সংসদে আপনার শোক প্রস্তাব পাস হবেনা। সৃষ্টিকর্তা সেই ইচ্ছাটি পূর্ণ করেছেন। জীবনের অন্তিম সময়ে

 

সংসদ সদস্য হয়েছেন। আপনাকে নিয়ে সংসদে শোক প্রস্তাব হয়েছে, সংসদ নেতা শোক প্রকাশ করেছেন। আহা কালুরঘাট সেতু। কত লড়াই করলেন সেতুটির জন্য। দেখে যেতে পারলেন না। দীর্ঘ চার দশক ধরে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ছিলেন। শিশু সংগঠন থেকে আরম্ভ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ হয়ে

আওয়ামী লীগ। মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াই করলেন। পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের অন্ধকারতম যুগের কঠিন সময়ে আলোর মশাল হাতে সাহসী সৈনিক ছিলেন মোছলেম উদ্দিন আহমদ।

আজ আপনি ইতিহাস হয়ে গেলেন। একটি বিস্তীর্ণ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হয়ে গেল। কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে মোছলেম উদ্দিন আহমদের সুখ্যাতি ছিল। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এই বিচক্ষণ রাজনীতিককে খুব কাছ থেকে দেখার, বুঝার সুযোগ আমার হয়েছে। একদিনে বা কেউ ডেকে এনে

এই জায়গায় তাঁকে বসিয়ে দেননি, তিনি উত্তরাধিকার সূত্রের নেতাও নন। কৈশোরের দুরন্তপনার দিনগুলিতে অন্য কিশোররা যখন বৃষ্টির পানিতে ফুটবল খেলছে তখন ছাত্রনেতা মোছলেম উদ্দিন শিক্ষা শান্তি প্রগতির পতাকা হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং মহানগর

ছাত্রলীগের কঠিন দায়িত্ব পালন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে লালন এবং ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। যৌবনের উত্তাল দিনগুলিতে সংসার, সুখ বিসর্জন দিয়ে দেশমাতৃকার পুনর্গঠনে তিনি দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের

সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। জেল খেটেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। আদর্শের সাথে, নৈতিকতার সাথে আপোষ করেননি।

মোছলেম উদ্দিন আহমদের নিজস্ব কোনো বলয় ছিল না। কেউ বলতে পারবে না আমি মোছলেম গ্রুপ করি। তিনি চট্টগ্রাম আওয়ামী পরিবারের অভিভাবক। চরম বৈরিতার মধ্যে উনি আমাকে ডেকে বললেন-‘অহিদ, কেন তোমরা সব ভাই সবসময় স্রোতের বিপক্ষে রাজনীতি কর। তোমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান

হিসাবে তোমাদের জন্য কিছু করতে চাই। তোমরা দলের সমর্থনে নির্বাচন কর। আমি সেদিন অনেক অবাক হয়েছি। কারণ আমার জানা মতে আমাদের এলাকায় অনেকেই আছে যারা অনেক টাকার মালিক এবং তারা দলের সমর্থনের আশায় যাচ্ছে না এমন কোনো জায়গা নেই। সর্বশেষ ভাইয়ের মনোনয়ন

নিশ্চিত হওয়ার পর যখন মোছলেম ভাইয়ের বাসায় যাচ্ছি আমার সাথে থাকা অনেকের পীড়াপীড়িতে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই আমার কি কিছু আনতে হবে, কিছু করতে হবে?’ উনি প্রতিবার উত্তরে না বলার পরে আমি বার বার বলছিলাম আমি কিছু আনতে চাই, কিছু করতে চাই। যদি চাও কিছু কলা আর

বিসু্কট আনতে পার, আমি সারাদিন কিছুই খাই নি। এমনকি সেদিনের সহানুভূতির জন্য আমি আমেরিকা আসার পর অনেক বার ফোন দিয়েছি, অনেক বার জিজ্ঞেস করেছি ‘আপনার কি কিছু লাগবে? কিছু লাগলে আমাকে বলেন’ প্রতিবারই একই উত্তর তুমি ভাল থাক, আমার জন্য দোয়া কর। এটাই মোছলেম উদ্দিন আহমদ।

লেখক : সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট, এমপিআই, লসএঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া, ইউএসএ

পূর্ববর্তী নিবন্ধএশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন : সময়ের চাহিদা পূরণে লিবারেল আর্টস এন্ড সায়েন্সেস
পরবর্তী নিবন্ধঅগ্রপথিক এম এ মালেক