বিজয় দিবসের প্রত্যাশা গণতান্ত্রিক ধারা

নাসের রহমান | শুক্রবার , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বিজয় দিবস আমাদের গৌরবের দিন, অহংকারের দিন। এ বিজয় দিবস নিয়ে অনেক গৌরবগাথা। বহু ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে এ বিজয় অর্জিত হয়েছে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে। তিন লক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে। লক্ষ কোটি বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ করে এ বিজয় অর্জন করেছে। ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বর্তমানের সোহরাওয়ারর্দি উদ্যানে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আত্মসর্মপণের মধ্য দিয়ে চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি। তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটেছে। এ বাংলাদেশে অনেক স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়েছে বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে কিন্তু স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনা করা যায় না। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তুলেছিলেন। তাঁরই ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত পথ বেয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন করতে সক্ষম হয়। এজন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে, বিজয় দিবসে বা যে কোন জাতীয় দিবসে বঙ্গবন্ধু অনিবার্য।

বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ আলোচনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে। অনেক জাতিকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে এমন দেশের সংখ্যা বেশি নয়। তবে স্বাধীনতার জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে এমন দেশের সংখ্যা একেবারে হাতে গোনা। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে ত্রিশ লক্ষ মানুষের আত্মহুতির বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। এদেশের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা দিবসের সাথে গৌরবদীপ্ত বিজয় দিবসও যুক্ত হয়েছে। যে বিজয়ে বিশ্ববাসীও অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকেছে। যে বিজয় সাড়ে সাত কোটি বাঙালির স্বপ্ন ও আশা আকাঙ্ক্ষার বিজয়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের খুব কম জাতির সৌভাগ্যে এরকম গৌরবময় বিজয় দিবস আছে।

সেজন্য বিজয় দিবসকে ঘিরে জাতির আনন্দ উৎসবের সাথে গর্ব ও অহংকারের শেষ নেই। প্রতিবছর দিবসটি জাতিকে নতুন করে উদ্দীপ্ত করে। এবারের বিজয় দিবস কেমন হবে। এতদিন যেভাবে উদযাপিত হয়েছে নিশ্চয় সেভাবে হবে। যদিও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। জ্বালানী তেল, ভোগ্যপণ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের মনে নানা রকম প্রশ্ন জেগেছে, এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে। সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যাতে স্বল্প আয়ের মানুষেরা সহনীয় মূল্যে ক্রয় করতে পারে।

রাজনৈতিক কঠোর কর্মসূচির কারণে স্বাভাবিক জনজীবন বাধাগ্রস্ত হয়, জনদুর্ভোগ বাড়ে। আবার কোনও কোনও সময় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক এসব কর্মকাণ্ডে অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মন্দার সময় এরকম ছোটখাট বিরূপ প্রভাব অর্থনীতির চাকাকে পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো এত ব্যাপক আকারে চলতে থাকে যাতে ব্যবসা বাণিজ্য নির্বিঘ্নে চলতে পারে না। কোনও কোনও জায়গায় কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। যেখানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কষাঘাতে সবদেশের অর্থনীতি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। সেখানে এসময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন করা আর সরকার পতনের আন্দোলন এক হতে পারে না। এরকম বৈশ্বিক বিপর্যয়ের সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্থিতিশীলতা। এসময়ে স্থিতিশীল সরকারের পক্ষে সম্ভব সকল বাধা অতিক্রম করে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা। তাই সব পক্ষের ঐক্যমতের ভিত্তিতে স্থিতিশীল সরকারের বিকল্প নেই।

সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসুক এটাই সবার প্রত্যাশা। সাধারণ মানুষ তা চায়, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়াও একই রকম। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সেই নির্বাচনের সময় এখনো এক বছরের চেয়েও বেশি আছে। এরইমধ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। বড় দলগুলো জনসভায় দাঁড়িয়ে ভোট চাইতে শুরু করেছে। এবারের বিজয় দিবসের পরে সামনের নির্বাচনের আগে আরো একটি বিজয় দিবস উদযাপিত হবে। সেই বিজয় দিবসের সময় নির্বাচনী প্রচারণা থাকবে তুঙ্গে।

তবে এবারের বিজয় দিবসের কয়েক মাসের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন সংগ্রমের রূপরেখা নির্ধারিত হয়ে যাবে। আসলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি সংঘাত সহিংসতার দিকে যাবে নাকি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যাবে। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং গণন্তান্ত্রিক ধারা অক্ষুন্ন থাকবে। এমন এক গণতান্ত্রিক ধারা যার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। অর্থনৈতিক মন্দা আর বৈশ্বিক বিপর্যয়ের অভিঘাত কাটিয়ে সকল বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাবে। এটাই হোক এবারের বিজয় দিবসের প্রত্যাশা।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও ব্যাংকার

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণের দাবি