বিক্ষোভ নয়, গণমিছিলে জোর বিএনপির

আওয়ামী লীগের কর্মীরাও যোগ দেবেন, আশা খসরুর

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২০ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বিক্ষোভ মিছিলের পরিবর্তে গণমিছিলে জোর দিচ্ছে বিএনপি। এমনটাই জানিয়েছেন দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, গণমিছিল মানে জনগণের সম্পৃক্ততা। বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপি নেতাকর্মীর বাইরের লোকজন আসার সাহস করবে না। তবে গণমিছিলে যত বেশি সংখ্যক লোক রাস্তায় নামাতে পারব আন্দোলনের সাফল্য তত বেশি হবে। জনসম্পৃক্ততা যত বাড়বে পুলিশের সংখ্যা তত কমবে। পুলিশ তখন আর জনগণের বিরুদ্ধে যাবে না। কারণ পুলিশের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ সুরক্ষা করা। আগামী সোমবার থেকে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে শুরু হতে যাওয়া ধারাবাহিক কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি। গতকাল সকালে দুপুরে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় মনিটরিং টিমের প্রধান ও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলো থেকে নির্বাচিত বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য, আওতাভুক্ত জেলা ও মহানগরগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
সভায় আমীর খসরু আন্দোলনের জোয়ার শুরু হয়েছে মন্তব্য করে দলের আসন্ন কর্মসূচির বিষয়ে বলেন, আমাদের কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুশৃঙ্খল জনসম্পৃক্ততা। তিনি বলেন, অনেকেই আছেন এখনো আন্দোলনে নামেনি কিন্তু তাদের নামার ইচ্ছে আছে। যদি অবস্থা-সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি তাহলে ওই লোকগুলো নেমে আসবে। এ সব বিবেচনায় নিয়ে এবার কর্মসূচি ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনকে সফলভাবে এগিয়ে নিতে হবে জানিয়ে খসরু বলেন বলেন, জনস্রোত, জনজোয়ারকে ভয় পাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এখন আন্দোলনের মেজাজ হচ্ছে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সরকারের পতন ঘটানো। আমরা যদি দুই হাজার লোক রাস্তায় প্রাণ দিয়েও ফেলি শেখ হাসিনা সরকারের পতন সম্ভব না। কিন্তু লক্ষ লক্ষ লোককে যদি রাস্তায় নামাতে পারি তাহলেই পতন হবে। এখন সরকারের সঙ্গে যারা লম্পজম্প করছে তাদের মধ্যেও ভয় কাজ করছে। তারাও ক্রমান্বয়ে বুঝতে পারবে কোনদিকে যেতে হবে। বাংলাদেশ কোনদিকে যাচ্ছে সে ম্যাসেজ স্পষ্ট হলে তারাও সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে, তখন তারাও আন্দোলনের দিকে ধাবিত হবে। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের কর্মীরাও আন্দোলনে যোগ দিবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমাদের যে জনসমর্থন সৃষ্টি হয়েছে সেটা কাজে লাগাতে হবে। এখানে আমাদের সুবিধা হলো দেশের জনগণ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলে গেছে এবং আমাদের পক্ষে আছে। সুতরাং তারা টাকা দিয়ে, মাস্তান দিয়ে ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে যে কাজটি করতে পারবে না সেটি আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে সহজেই করতে পারবো। এতে তাদের পরাজয় অনিবার্য। সরকার যে শক্তি নিয়ে টিকে আছে সেই শক্তি জনগণের সাথে মোকাবেলা করতে পারবে না।
খসরু বলেন, বক্তব্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে সরানো যাবে না। পরিকল্পিত আন্দোলনে সরকারের পতন হবে। অনেক সময় শক্তি থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পনার অভাবে যুদ্ধে পরাজিত হতে হয়। বিএনপি এ ব্যাপারে সজাগ আছে। তাই আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ সুচিন্তিত। আন্দোলন পরিকল্পিত।
ক্ষমতাসীন সরকারের মধ্যে চরম ভয়-ভীতি কাজ করছে মন্তব্য করে খসরু বলেন, শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে যাদের সঙ্গে আমাদের এদিক-সেদিক দেখা হচ্ছে তাদের মধ্যে সে ভয়টা আমরা লক্ষ্য করছি। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা, সাহস, উদ্যোম দেখতে পাচ্ছি। সমর্থকরাও ক্রমান্বয়ে রাস্তায় আসছে। বাংলাদেশে এবং বিদেশে সব জায়গায় একটি প্রশ্নই উঠেছে, শেখ হাসিনা আর কতদিন ক্ষমতায় আছে? কিন্তু আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ। তাদের নেত্রী, তাদের সেক্রেটারি জেনারেল এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তাদের কথায় বুঝতে পারছেন, তাদের মধ্যে সিরিয়াস নার্ভাসনেস কাজ করছে। তারা তর্জন গর্জন শুরু করেছে। কিন্তু কথায় আছে যত গর্জে তত বর্ষে না কিন্তু। যখন গর্জন বাড়তে থাকবে তখন বুঝবেন তাদের দুর্বলতা ততবেশি বাড়ছে। আমাদের র্তজন-গর্জনের দরকার হবে না। কাজের মধ্য দিয়েই হবে আমাদের গর্জন। বেশি কথা বলে আন্দোলনে এগিয়ে যাওয়া যাবে না।
এ সময় তিনি বিএনপি’র কর্মীদের কেবল গর্জন নয়, বর্ষণও করতে হবে জানিয়ে বলেন, বর্ষণের মাধ্যম সরকারকে ডুবিয়ে দিতে হবে। ভাসিয়ে বঙ্গোপসাগরে পাঠিয়ে দিতে হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ফেসবুকে ছবি তোলার জন্য এই আন্দোলন নয়। কঠিন আন্দোলন করতে হবে। চট্টগ্রামের নেতারা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে তাহলে চট্টগ্রাম থেকেই সরকারের পতন হবে। আমাদের কথা হবে কম, কাজ হবে বেশি।
বিভাগীয় টিমের সমন্বয়কারী ও বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফরুক, ড. মামুন আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন।
মীর মো. নাছির উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না, আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে। এখন নেতাকেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে নেতাকর্মীদের নিয়ে। বিএনপি কোন বাহিনীর দল নয়, বিএনপি জনগণের দল। নেতারা এবার ঈমানী দায়িত্ব পালন করে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রসু্তত।
আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার দাঁড়িয়ে থাকতে চায় অন্যের শক্তির ওপর দিয়ে। সরকার যে শক্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে সেটা জনগণের নয়। সেটা প্রকাশ্যে প্রকাশ করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আমরা বলতে চাই অন্যের উপর ভিত্তি করে আর বেশিদিন ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখতে পারবে না। জনগণ জেগে উঠেছে, অবৈধ ক্ষমতার মসনদ ভেঙে চুরমার করে দিবে।
জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য। এ থেকে বুঝা যায় দেশে কারা রাজত্ব করছে, কাদের ইশারায় দেশ পরিচালিত হচ্ছে। আজকে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে।
ড. মামুন আহমেদ বলেন, জনগণের সরকার না থাকার কারণে যেমন ইচ্ছে তেমন করছে। লুটপাট ভোট ডাকাত এই সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আজ আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়। সব দল-মত, সবাই মিলে আজ এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে হবে।
লুৎফর রহমান কাজল বলেন, এবার আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায় শুরু হয়েছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। অতিশীঘ্রই কঙবাজার বিএনপি সেখানে ৫০ হাজার মানুষের গণমিছিল করবে।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, জনগণ এ সরকারকে আর চায় না। তারা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপি তৃণমূলেও সাংগঠনিকভাবেও শক্তিশালী। জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত আমরা।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, ভিপি হারুনুর রশিদ, বেলাল আহমেদ, এড. জাকির হোসেন, এড. দীপেন দেওয়ান, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, মনি স্বপন দেওয়ান, কঙবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নোয়াখালীর সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, লক্ষীপুরের সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দীন সাবু, রাঙামাটি জেলার সভাপতি দীপেন তালুকদার দীপু, বিএনপির নির্বাহী সদস্য আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ, সাচিং প্রু জেরী, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, কাজী মুফিজুর রহমান, মশিয়ুর রহমান বিপ্লব, এবিএম জাকারিয়া, এড. তাহেরুল ইসলাম, ফোরকান ই আলম, তরিকুল ইসলাম তেনজিং, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, নোয়াখালী জেলার সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, ফেনী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাল উদ্দিন আলাল, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মতবিনিময়
পরবর্তী নিবন্ধমুরগি ও ডিমে কমল উত্তাপ