বিক্ষিপ্ত সংঘাত, বর্জনে শেষ তৃতীয় ধাপের পৌর নির্বাচন

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ৩১ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ

সংঘর্ষ, মারামারি ও ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় ধাপে ৬২টি পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অবশ্য অনেক পৌরসভায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত।
কটিয়াদীতে সংঘর্ষ, রামগঞ্জে গোলাগুলি, ধুনটে ও ফেনীতে প্রার্থীকে মারধর এবং গৌরীপুরে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সিংড়া, দর্শনা, কটিয়াদী, কলারোয়া, সরিষাবাড়ীসহ বেশ কয়েকটি পৌরসভায় বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌরসভা নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তড়িয়াকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি। ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষের বিষয়টি স্বীকার করে নির্বাচনে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় কিছুক্ষণ ভোট বন্ধ থাকার পর আবার ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এদিকে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থীর তোফাজ্জল হোসেন খান। তিনি বলেন, নৌকার সমর্থকেরা সকাল থেকে সব কটি কেন্দ্রে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ধানের শীষের ভোটারদের বাধা দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কাজিরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনের সড়কে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য রয়েছেন দুজন। দুপুর ১২টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ার হোসেন জিতু (উটপাখি প্রতীক) ও মামুনুর রশিদের (পাঞ্জাবি) সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম কাজিরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সিল মারাকে কেন্দ্র করে ওই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে তারা কেন্দ্রের বাইরে গিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ লাগে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে তারা পুলিশের ওপর পাল্টা হামলা চালান। অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রিয়াজুল কবির বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ সময় ৯০টি গুলি ছোড়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। বগুড়ার ধুনট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ জি এম বাদশাহর এজেন্ট সেলিম হোসেনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টি আই এম নুরুন্নবী তারিকের ভাগনে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সেলিমকে মারধরের এই অভিযোগ ওঠে। নির্বাচন কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ধুনট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন মিয়া জানান, মতিউর জোর করে কেন্দ্রে ঢুকে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিযোগে সেলিমকে মারধর করেন। ঘটনার পর থেকে মতিউর পলাতক। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌরসভার বিএনপি-মনোনীত মেয়র প্রার্থী পৌর বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাবিবুর রহমান নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার সময় হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ফারুখ হোসেনসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. তায়জুল ইসলাম নাটোরের সিংড়া পৌর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। বেলা একটায় সিংড়া পৌর বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। বিএনপির ভোট বর্জনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ভোট গ্রহণ নিয়ে কোনো অনিয়মের খবর তার জানা নাই। বিএনপি অনেক আগেই ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এখন শুধু প্রশাসনকে বিব্রত করার জন্য বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিইউএফএলের জ্বালানি তেল কর্ণফুলীতে, ক্ষতি পরিবেশের
পরবর্তী নিবন্ধসব পথ এসে মিশেছে বহদ্দারবাড়িতে