বিকল স্লুইচ গেটে দুর্ভোগ

বর্জ্যে ভরাট কুরমাই খাল, বন্ধ পানি প্রবাহ ।। পাউবোর গাফেলতির অভিযোগ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ৪ জুলাই, ২০২১ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ার কুরমাই খালের উপর নির্মিত একটি বিকল স্লুইস গেটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয় কয়েক হাজার মানুষ। রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার রোয়াজারহাট এলাকার এই স্লুইচ গেটটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফেলতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এতে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে অল্প বৃষ্টিতেই খালের পানি উপচে পড়ে। অন্যদিকে বর্জ্যে ভরা খালের জমাট পানিতে সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধ ও নানা মশা-মাছি। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে রোয়াজারহাটে বাজার করতে আসা জনসাধারণও পড়ছে ভোগান্তিতে। স্লুইচ গেটটি সংস্কার সহ খাল সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শস্যভাণ্ডার গুমাই বিলে পানি সেচ দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৮০ সালে কুরমাই খাল খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। খালের রোয়াজারহাট অংশেই নির্মিত হয়েছে স্লুইচ গেটটি। নির্মাণের পর থেকে এর কোনো সুফলই পায় নি বলে জানান স্থানীয়রা। দিনের পর দিন তদারকির অভাবে এটি একসময় নষ্টই হয়ে যায়। এমনকি স্লুইস গেটটির দুটি ধাপ অন্তত ১৫ বছর ধরে নামানো অবস্থায় রয়েছে। এতে কুরমাই খালে ইছামতী থেকে পানি প্রবেশ করতে পারে না। ফলে খালটি শুকিয়ে গিয়ে আশেপাশের মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টিতে পানি উপচে এলাকায় প্রবেশ করে। পাউবোর কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় তদারকির অভাব ও অবহেলায় খালটি দিনের পর দিন আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় বিকল স্লুইচ গেট দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে না পারায় খালের বর্জ্য থেকে আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া মশা-মাছির উৎপাত বেড়েছে কয়েক গুণ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী। উপজেলার বৃহত্তর রোয়াজারহাট বাজারও এই খালের পাড়ে। ফলে দূর-দুরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ এখানে আসলে নাক চেপে চলাচল করতে হয়। শনিবার সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইসলাম খাতুন (৫০) নামে একজন মহিলা বলেন, আনুমানিক ২৭ বছর আগে এই স্লুইস গেটটি স্থাপন করা হয়। স্থাপনের পর থেকেই দেখছি এর রক্ষণাবেক্ষণ নেই। এমনকি কি উদ্দেশ্যে এটি স্থাপন করা হয়েছে তাও বুঝছি না। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরেই দেখে আসছি স্লুইস গেটের ধাপগুলো নিচে নামানো। এভাবেই পড়ে থাকতে থাকতে এটি একেবারে বিকল হয়ে গেছে। এতে পানি আটকানোর পরিবর্তে বৃষ্টির পানি আটকে বর্জ্য থেকে দুর্গন্ধে স্থানীয়রা চরম কষ্ট পাচ্ছে। মোহাম্মদ সিরাজ নামে অন্য একজন বলেন, কুরমাই খালের পাশে যাদের ঘরবাড়ি আছে তারা সকল বর্জ্য খালে ফেলে। ওই বর্জ্যগুলো স্লুইচ গেট বন্ধ থাকায় মূল খালে যেতে পারছে না। এতে একদিকে খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে খালে চরম দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। যা কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে সাধাণ মানুষ চরম কষ্ট পাচ্ছে।
খাল থেকে মাত্র ১০ মিটারের মধ্যে বাড়ি সোহেল খান নামে এক ব্যক্তির। তিনি বলেন, একদিনের হাল্কা বৃষ্টিতে ময়লা জমে ওই স্লুইস গেটে জমে যায়। এতে সৃষ্ট দুর্গন্ধে বাজার থেকে বাড়ি যেতে নাক চেপে যেতে হয়। এমনকি ঘরে বসেও দুর্গন্ধ থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না। দুর্গন্ধে আশেপাশের বাড়ির সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলেও তিনি জানান।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে গুমাইবিলের পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কুরমাই খালের বিকল স্লুইস গেটটি সংস্কার না হওয়ায় পানি শুকিয়ে খালের জায়গা দখলে চলে যাচ্ছে। তাই স্লুইস গেটটি সংস্কার ও খালটি দ্রুত খনন করার ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আমরা আবেদন করে আসছি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটি (পউর) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কুরমাই খালের বিকল স্লুইস গেট সংস্কারসহ এটি খননে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। শীঘ্রই মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করা হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধভূজপুরে নিখোঁজের তিন দিন পর খালপাড়ে প্রবাসীর লাশ
পরবর্তী নিবন্ধগোপনে বৌভাতের আয়োজন, গুনতে হলো জরিমানা