বার্থিং মিটিং পণ্ড, বরাদ্দ হয়নি জাহাজ

বে ক্রসিং পারমিশন ইস্যু, বহির্নোঙরে ১৬ জাহাজে পণ্য হ্যান্ডলিং ব্যাহত

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ৬ জুন, ২০২৩ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

উত্তাল সাগরে ঝুঁকির মধ্যে বে ক্রসিংয়ের অনুমোদন নেই এমন জাহাজে পণ্য পরিবহনে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে পণ্ড হয়ে গেছে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) বার্থিং সভা। গতকাল সন্ধ্যায় আমদানিকারকদের প্রতিনিধিদের আপত্তির মুখে কোনো জাহাজ বরাদ্দ হয়নি। এতে করে বহির্নোঙরে অবস্থানকারী মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাসে গতকাল কোনো লাইটারেজ জাহাজ যায়নি। বে ক্রসিং ছাড়া অননুমোদিত জাহাজ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না আসলে আমদানিকারকেরা কোনো লাইটারেজ জাহাজ নেবেন না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে বহির্নোঙরে ১৬ জাহাজে পণ্য হ্যান্ডলিং ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন খাতে অস্থিরতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর এবং বন্দরের অভ্যন্তরের ওভারসাইট থেকে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে কোটি কোটি টন পণ্য পরিবাহিত হয়। এসব পণ্য পরিবহনে হাজার দেড়েক লাইটারেজ জাহাজ নিয়োজিত রয়েছে। এসব জাহাজের অনেকগুলোরই বে ক্রসিং পারমিশন নেই। একটি জাহাজের বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষানিরীক্ষার পর নৌ পরিবহন অধিদপ্তর থেকে ওই জাহাজটি সাগর পাড়ি (বে ক্রস) দিয়ে নদীপথে চলাচল করতে পারবে কিনা তা অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু এই অনুমোদন নেই এমন অনেক জাহাজ বহির্নোঙর থেকে প্রায়ই পণ্য পরিবহন করছে। এসব জাহাজ সাগর পাড়ি দিয়ে বহির্নোঙর থেকে পণ্য বোঝাই করে বন্দর চ্যানেলে আসে। আবার সাগর পাড়ি দিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াপাড়াসহ দেশের নানা অঞ্চলে যাতায়াত করে। নৌ পরিবহন অধিদপ্তর থেকে সাগর পাড়ি দেয়ার যোগ্যতার সনদ না নিয়েও এসব জাহাজ অবাধে চলাচল করে। লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডব্লিউটিসি থেকেও এদেরকে চলাচলের জন্য বরাদ্দপত্র দেয়া হয়।

বে ক্রসিং পারমিশন ছাড়া চলাচলকারী জাহাজগুলোর ব্যাপারে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর গত জুলাইয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছিল। এতে বলা হয়, বহির্নোঙর কিংবা বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করতে হলে যেকোনো জাহাজের বে ক্রসিং ছাড়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রচলিত আইনের এই শর্তটি লংঘন করে ডব্লিউটিসি বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের জন্য জাহাজ বরাদ্দ দিয়ে আসছে। বিষয়টিকে বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ বলে আখ্যায়িত করে ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে ডব্লিউটিসিকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল। নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক কমডোর এ জেড এম জালাল উদ্দিন গত বছরের ১৯ জুলাই এই পত্র প্রদান করেন। ডব্লিউটিসির নির্বাহী পরিচালককে চিঠিটি প্রদান করা হয়েছিল। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে ডব্লিউটিসি বেশ কিছুদিন বে ক্রসিং পারমিশন নেই এমন জাহাজকে বরাদ্দ দেয়া স্থগিত করেছিল।

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে আবার অননুমোদিত লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ শুরু হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। ডব্লিউটিসির তালিকাভুক্ত আমদানিকারকদের প্রতিনিধিরা বে ক্রসিং অনুমোদন নেই এমন জাহাজ বরাদ্দ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। এই ধরনের জাহাজ ডুবে গেলে বীমা কাভারেজ পাওয়া যায় না। তাই আমদানিকারকেরা অননুমোদিত জাহাজে পণ্য পরিবহনে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু ডব্লিউটিসি অননুমোদিত জাহাজ বরাদ্দের ব্যাপারে অনড় থাকে।

এই অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যায় ডব্লিউটিরি বার্থিং সভা ভণ্ডুল হয়ে গেছে। পণ্যের এজেন্টরা কোনো জাহাজ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বার্থিং সভা থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে গতকাল কোনো জাহাজ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ ১৬টি মাদার ভ্যাসেলের বিপরীতে ৫০টির মতো লাইটারেজ জাহাজের চাহিদা ছিল। কিন্তু বার্থিং সভা ভণ্ডুল হওয়ায় কোনো জাহাজ সাগরে যায়নি। এতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই ১৬টি জাহাজের হ্যান্ডলিং কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট একজন আমদানিকারক বলেছেন, অননুমোদিত জাহাজ দিয়ে পণ্য পরিবহন আইনত অপরাধ। তবুও সাগর শান্ত থাকলে আমরা বে ক্রসিং ছাড়পত্র নিয়ে মাথা ঘামাই না। কিন্তু এখন সাগরের অবস্থা ভয়াবহ। যেকোনো সময় জাহাজডুবির ঘটনা ঘটতে পারে। বে ক্রসিং পারমিশন নেই এমন জাহাজ ডুবে গেলে আমরা বিপদে পড়ে যাই। বীমা কোম্পানি অননুমোদিত জাহাজে পণ্য বোঝাইয়ের জন্য উল্টো আমদানিকারকদের শাসিয়ে থাকে। এই ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনায় কয়েক কোটি টাকার বীমা দাবি নাকচ করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় জাহাজ ডুবে যাওয়ায় আমদানিকারকদের অন্তত ১শ কোটি টাকার দাবির সুরাহা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। সবকিছু মিলে বে ক্রসিং পারমিশনের ইস্যু নিয়ে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সেক্টরে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

বার্থিং মিটিং না হওয়ার কথা স্বীকার করে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) একজন কর্মকর্তা বলেন, বে ক্রসিংবিহীন জাহাজের ব্যাপারে হঠাৎ করে কার্গো এজেন্টদের তোড়জোড় রহস্যজনক। বাজারে জাহাজের সংকট থাকলে তখন বে ক্রসিং ছাড়পত্রবিহীন জাহাজের জন্য তারা তদবির করে। এখন অলস জাহাজের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নিজেদের জাহাজগুলো যাতে বেশি ট্রিপ পায় সেজন্য তারা নতুন নতুন নাটক সাজাচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই
পরবর্তী নিবন্ধশাহ আমানতে ফের দরজার কব্জায় আনলেন ৬৩ লাখ টাকার স্বর্ণ