বান্দরবানে বাণিজ্যিকভাবে এলাচের চাষ সাফল্য পেয়েছেন কয়েকজন চাষি

বান্দরবান প্রতিনিধি | শনিবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে মশলা জাতীয় ফসল এলাচ। এলাচ চাষ করে জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কয়েকজন চাষি। ইতোমধ্যে সাফল্যও পেয়েছেন তারা। পাহাড়ে উৎপাদিত এ ফসল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন এলাচ চাষিরা।

কৃষি বিভাগের মতে, ২০১৮ সালে বান্দরবান সদরের চিম্বুক পাহাড়ের ওয়াইজংশন এলাকায় পাহাড়ে পরীক্ষামূলক ১২০টি সুবজ রঙের এলাচ চারা লাগান স্কুল শিক্ষক মেনয়াং ম্রো ও তার স্ত্রী। পরিমাণে কম হলেও চারা লাগানোর দু’বছর পরই বাগানে এলাচ উৎপাদন হয়। সাফল্যের হাতছানিতে পরবর্তীতে প্রায় দেড় একর পাহাড়ী জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষ করেন মেনয়াং। তার দেখাদেখি চিম্বুকের বসন্ত পাড়া, কুহালং এবং রুমার মুন্নুম পাড়া এলাকায় আরও কয়েকজন চাষি সবুজ ও কালো রঙের এলাচ চাষ করেছেন পাহাড়ে। গত বছরের তুলনায় এ বছর এলাচের উৎপাদন কয়েকগুণ বেশি হবে বলে ধারণা করছেন চাষিরা।

দেশে বর্তমানে সবুজ-কালো, নিল-সাদা ও বেগুনীসহ বিভিন্ন জাতের ১৩ ধরনের এলাচ আমদানি করা হয়। দেশের খুচরা বাজারে আকার অনুপাতে প্রতি কেজি এলাচ ১২শ থেকে ১৬শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাহাড়ে এলাচ চাষ কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। সরকারিভাবে আমদানি নির্ভরতা কমাতে বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষে উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে চাষিদের। এলাচ চাষ সমপ্রসারণের জন্য সফল চাষিরা স্থানীয়ভাবে এলাচের চারা উৎপাদন করে আগ্রহী চাষিদের মাঝে বিক্রি করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জাতের এলাচ চাষ করা গেলে আগামীতে বিদেশ থেকে সুগন্ধি মশলা এলাচ আর আমদানি করতে হবে না। বরং পাহাড়ে উৎপাদিত এলাচ স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছে চাষিরা। পাশাপাশি অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
চাষি মেনয়াং ম্রো বলেন, শখের বসে খুলনার বেনাপুল থেকে এলাচ চারা সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে এলাচ চাষ করেছিলাম। সফলতা পেয়ে বাণিজ্যিকভাবে পাহাড়ে এলাচ শুরু করেছি। এ বছর দশ কেজির বেশি এলাচ ফল পেয়েছি। আমার বাগানে প্রায় তিন শতাধিক এলাচ গাছ রয়েছে। নতুন করে আরও এলাচ চারা সংগ্রহ করেছি। আগামী বছর তিন একর জায়গা জুড়েই এলাচ চাষ সম্প্রসারণ করা হবে।

চাষি এনিমং মারমা বলেন, এলাচ চারা লাগানোর দুবছর পর থেকেই ফলন আসে। তবে পরিমাণে কম, চারা লাগানোর পাঁচ বছর পর থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছের গোড়ায় গুচ্ছ আকারে ফুল হয় লতার মতো, সেই ফুলগুলো থেকেই এলাচ ফল হয় গুচ্ছ আকারে। প্রতিটি গাছ থেকে কমপক্ষে ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এলাচ ফল পরিপক্ক হলে বাগান থেকে কাঁচা এলাচ সংগ্রহ করে রোদে শুকানো হয়। একেকটি এলাচ গাছ থেকে ২৫ থেকে ত্রিশ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এমএম শাহনেওয়াজ বলেন, পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে মশলা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। রপ্তানি কমাতে স্থানীয়ভাবে দেশে মশলা চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষিবিভাগ। মশলা চাষে উদ্ভুদ্ধ করতে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই চলে গেলেন
পরবর্তী নিবন্ধগাড়িচাপা দিয়ে নারীকে টেনেহিঁচড়ে নেওয়া ঢাবি শিক্ষকের মৃত্যু