বাংলাদেশের একটি মহৎ এবং গৌরবোজ্জ্বল অর্জন

| সোমবার , ১ মার্চ, ২০২১ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার আনন্দে ভাসছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সমস্ত কৃতিত্ব দিয়েছেন তাঁর জনগণকে। তিনি বলেন, ‘এ কৃতিত্ব সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের। দেশে-বিদেশে প্রবাসে যারা রয়েছে, আমি সকলকে এই কৃতিত্বের অংশীদার মনে করি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছি। সমগ্র জাতির জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের।’
জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশ ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ মানদণ্ডের চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ৭ গুণ বেশি। মানবসম্পদ সূচকে নির্ধারিত মানদণ্ড ৬৬-এর বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন ৭৫.৪। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে উত্তরণের জন্য মানদণ্ড নির্ধারিত ছিল ৩২ বা তার কম। কিন্তু ওই সময়ে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৭।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে সত্যিই এক উদাহরণ। এই উদাহরণ অগ্রগতির উদাহরণ। অর্থনীতি ও আর্থ সামাজিক বেশির ভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে। নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। আজ উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) একটি প্রতিবেদনে বলেছে, একটি জনবহুল ও নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেভাবে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য দূর এবং বৈষম্য কমানোকে সংযুক্ত করেছে, তা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।
বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কৌশিক বসু বাংলাদেশ ঘুরে গিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন দেশের অর্থনীতির সূচক নিয়ে। প্রশংসা করেছেন নিজেদের অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতুর মতো সাহসী পদক্ষেপের।
এছাড়া সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন উদাহরণ দেওয়ার মতো একটি দেশ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রধান ১২টি সূচকের মধ্যে বেশির ভাগেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং অন্য নিম্ন আয়ের দেশের তুলনায় এগিয়ে গেছে।
অন্যদিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির অভাবে অর্থনীতির সাফল্য পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এ বছরের শুরুতে অর্থনীতি নিয়ে খুব বেশি ভয় নেই। তবে উদ্বেগ থেকে পুরোপুরি বের হতে পারছি কী। গত দুই দশকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের যে কোনো সূচকের বিচারে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে।
বাংলাদেশ ১৯৯০-এর পর সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধিতে উন্নয়নশীল দেশের গড় হারের তুলনায় অনেক এগিয়েছে। দারিদ্র্যের হার অর্ধেক হয়ে গেছে। মেয়েদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদানের হার দ্রুত বেড়েছে। জনসংখ্যা, গড় আয়ু, শিশুমৃত্যুর হার, মেয়েদের স্কুলে পড়ার হার, সক্ষম দম্পতিদের জন্ম নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গ্রহণের হার ইত্যাদি সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ সমপর্যায়ের উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশ, এমনকি প্রতিবেশী ভারতকে পেছনে ফেলতে সমর্থ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। ওই সময় ৪০ শতাংশ খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। কিন্তু খাদ্য আমদানি করতে হয় না। এ ছাড়া শিল্প খাতের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে গার্মেন্ট শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম। চীনের পরেই আমাদের অবস্থান। একই অবস্থা সেবা খাতেও। তাঁদের মতে, বৈষম্যের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে আমাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছিল। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে মাইলফলক স্পর্শ করতে চলেছে বাংলাদেশ। তলাবিহীন ঝুড়ির খেতাব পাওয়া ছোট্ট বদ্বীপটি আজ বিশ্বের অন্যতম অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বাংলাদেশের একটি মহৎ এবং গৌরবোজ্জ্বল অর্জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে