শীতের মধ্যভাগে আসিয়া পাতাঝরিবার যে উৎসব শুরু হইয়াছিলো তা এখনো প্রবাহমান বৈকি! সবকটা বৃক্ষ মাথা ন্যাড়া করিয়া ঠায় দাঁড়াইয়া আছে, তবে নব পত্রপল্লবে সাজুগুজু করিয়া কেহ কেহ আবার নব যৌবনে পদার্পণ করিয়াছে, তাহাদের ঔজ্জ্বল্য দেখিয়া মন জুড়াইয়া যায়। আর যাহাদের ন্যাড়া মাথা, তাহাদের ভেতর ভেতর বেশ একটা আয়োজন চলিতেছে, তাহা দূর হইতেই বেশ উপলব্ধি করিতে পারা যায়। তাহাদের সাজুগুজুর পর্ব এই শেষ হইলো বলে! এবার তাহাদের সগর্বে নিজেদের প্রকাশ করিবার পালা আসিতেছে। সবুজ বন বনান্ত আচমকাই হলুদে–লালে–কমলায় মিশিয়া ভিন্ন এক রঙে আবির্ভূত হইয়া ওঠে, এই শীত শেষের দিনগুলোতে। বসন্ত আসিয়াছে বটে, তবে বন বনান্ত সবুজে লীন হইয়া উঠিতে খানিক বাকি আছে বৈকি! আর এই হলুদে–লালে–কমলায় মাখামাখি বন বনান্তে সবুজের আদি–অকৃত্রিম প্রকাশ। তাহার বর্ণনা করিবার ভাষা আর খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। তাহা শুধু দুই চক্ষে দেখিয়া, অন্তরে ধারণ করিতে পারা যায়! তাহাতে অন্তরের শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়। পাগলাটে বাতাস যখন পাতা ঝরাইতে মরিয়া হইয়া ওঠে, তখন দেখিলে এক পলকের জন্য মনে হইতে পারে, সমগ্র বনময় হলুদ প্রজাপতি উড়িতেছে। বসন্ত বাতাসের সে কী টান, কী গন্ধ, কী শান্তি! সমগ্র প্রকৃতিময় এক নব আয়োজন! এক নব অপেক্ষা! পলাশের মৌসুম প্রায় শেষ। ভারী অল্পের জন্যই আসা তার। বাকি বনফুলের বুনো গন্ধ, বাতাসে মাদকতা মিশাইয়া দেয়। বসন্ত বাতাসের মতো এত মাদকতাময় বাতাস অন্য ঋতুতে খুঁজিয়া পাওয়া যায় না হয়ত! ধূসর–সাদাটে যে সজনে ফুল ফুটিয়াছিলো, তাহাতে সজনে ধরিয়াছে। আম্রমুকুলের সেই মিহি গন্ধ নাই আর, তাহাতে ফল আসিতেছে। কাঠগোলাপের ন্যাড়া মাথাভর্তি শুধু ফুল আর ফুল। তাহাতে পত্র–পল্লবের কোনো দেখা নাই। তাহাদের পাশেই এক নাম না জানা বৃক্ষ, অযত্নেই তরতর করিয়া বাড়িয়া উঠিয়াছে, তাহাতে আয়োজন চলিতেছে। মিহি সুগন্ধিফুল, মনে প্রাণে নেশার উদ্রেক ঘটায়। বসন্তের এই সময়টুকুতে রাস্তার ধার ঘেঁষিয়া এক বিশেষ ফুল ফোটে। সারাবছর অনাদরে, অযন্তে বাড়িয়া ওঠে, আর বসন্ত আসিলেই পথঘাট আলোকিত করিয়া, মিহি সুগন্ধে ফুটিয়া ওঠে ভাঁট ফুল। বসন্তের পলাশ–শিমুলের সাথে পাল্লা দিয়া ভাঁট ফুল ফুটিতে থাকে। বসন্তের সবুজের বাহারের কথা নাই বা বলিলাম। কত রকমারি সবুজে বসন্ত তাহার ডালা সাজাইয়া থাকে, তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। কত রঙিন পুষ্পরাজিতে প্রকৃতি রঙিন হইয়া ওঠে, তাহা সর্বজনবিদিত। মাতালকরা উথাল পাতাল বাতাসে তনুমনে শিহরণ জাগানো বসন্ত! আহা! এক অঙ্গে তাহার কত রূপ! কত নব রঙে, নব ঢঙে বসন্ত আসিয়া আমাদের রাঙাইয়া যায়। বৎসরের শেষ প্রসঙ্গে বসন্ত আসিয়া রঙে রঙিন করিয়া দেয় আমাদের জরাজীর্ণ জীবনখানা। নতুন বৎসরে প্রবেশের পূর্বে এমনি রঙে রঙিন হইয়া ওঠা, সে তো বসন্তেরই দান!