বলিউডে নারীরা কি পরিবারের সদস্য হয়েই থাকবে?

নাজমুস সাকিব রহমান | শনিবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২৩ at ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ

কারো পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কি কখনো নিজেকে ‘পরিবারের সদস্য’ পরিচয় দেবেন? আপনি যা খুশি বলতে পারেন, কিন্তু বলিউডের বাণিজ্যিক সিনেমার অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই ‘হ্যাঁ’ হতে বাধ্য। অন্তত আরব সাগরের পাড়ে তৈরি হওয়া গত এক দশকের ১০টি ব্যবসাসফল সিনেমা বিবেচনায় নিলে এমন চিত্রই দেখা যায়।

এই সময়ে অভিনেত্রীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ এমন সব নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিনেমায় যাদের পেশা রহস্য হয়েই থেকে গেছে। আসলে এই চরিত্রগুলো সাধারণত কোনো পুরুষ চরিত্রের বোন, মা ও স্ত্রীর। আর সিনেমায় তাদের অস্তিত্বের অন্যতম কারণ, তাদের প্রতি পুরুষ চরিত্রের বিশেষ করে নায়কের প্রেমের আগ্রহ।

সাধারণত বলিউডে কয়েক বছর পর পর সাড়া জাগানো নারীপ্রধান সিনেমা মুক্তি পায় এবং তর্কবিতর্ক সৃষ্টি করে। এসব সিনেমার সাফল্য হয়তো অল্পক্ষণের জন্য হলেও নারী চরিত্রের পেশা এবং তার চাওয়াপাওয়া নিয়ে পুনরায় ভাবতে বাধ্য করে। এদিক থেকে বলা যায় ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ (২০১১) এবং ‘কুুইন’এর (২০১৩) মতো সিনেমা বলিউডে নারীদের প্রতিনিধিত্ব করেছে।

এটি সত্যি বলিউডে নারী চরিত্রগুলো আগের তুলনায় কিছুটা হলেও সুলিখিত হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভারতের ৫২ শতাংশ নারী কাজ করতে চায়। কিন্তু দেশটিতে দিনদিন নারী শ্রমিক কমছে।

ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালে ভারতে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল ৩২ শতাংশ, যা ২০২১ সালে কমে ১৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির গবেষণা বলছে, ১৫২৯ বছর বয়সী প্রতি চারজন নারীর মধ্যে একজন কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না। তাই কেউ কেউ ভাবতে পারে বলিউড হয়তো ইচ্ছাপূরণের এই বিষয়টি কাজে লাগাবে এবং অভিনেত্রীদের কর্মজীবী নারীদের পর্দায় তুলে ধরবে। কিন্তু তিতকুটে সত্যটা হলো অভিনেত্রীদের জন্য গত এক দশকে পরিবারের সদস্য হওয়াটাই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় পেশা।

জানিয়ে রাখা ভালো, বলিউডে নারী অভিনেত্রীদের জন্য দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় পেশা হলো পুলিশ, গুপ্তচর বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা চরিত্র, যা প্রায় ১২ শতাংশ। অবশ্য ফ্র্যাঞ্চাইজি সিনেমার বদৌলতে এ ধরনের চরিত্রের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে এক্ষেত্রে এই দৃঢ়চেতা নারীরা কি কোনো পরিবর্তন আনছে? অথবা বাণিজ্যিক হিন্দি সিনেমা কি তাদের মাধ্যমে এমন একজন নারীকে তুলে ধরছে যিনি নায়কের সমান হতে পারেন?

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত এক দশকের ১০০টি সিনেমায় নারী প্রকৌশলীর চরিত্র ছিল মাত্র একটি। ভারত (২০১৯) নামের সেই সিনেমায় চরিত্রটি করেছিলেন ক্যাটরিনা কাইফ। এছাড়াও এই সময়ের মধ্যে নারীরা চিকিৎসক, গ্যাংস্টার, ক্রীড়াবিদ, উদ্যোক্তা, শিক্ষিকা, নৃত্যশিল্পীগায়িকা, লেখকসাংবাদিককবি এবং চোরের চরিত্র পেয়েছেন। কিন্তু প্রতিবছর বলিউড যে পরিমাণ সিনেমা তৈরি করে সে তুলনায় এসব চরিত্রের সংখ্যা খুবই কম।

যদিও পুরুষশাসিত বলিউডে অন্তত কিছু অভিনেত্রী আছে যারা ধারাবাহিকভাবে কর্মজীবী নারীদের চরিত্র রূপায়ণ করেছেন। তাদেরই একজন সোনম কাপুর। সিনেমার গল্প যতই দুর্বল হোক না কেন, সোনমের চরিত্রটির প্রায় সবসময় একটি কাজ থাকে। তবে অন্যদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটে। অভিনেত্রী সারা আলি খানের বেশিরভাগ নারী চরিত্রের কোনো কাজ নেই। যেন বলিউডের জন্য স্বাধীন কর্মজীবী নারীর ধারণা এখনো কল্পনাপ্রসূত বিষয়।

অন্যদিকে বলিউডে নারী চরিত্রগুলোর জন্য ২০২২ সাল ছিল একটি ভয়ঙ্কর বছর। ওই বছরের সিনেমাগুলোয় তাদের ভূমিকা যেন একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে ২০২৩ সালেও। এবছর মুক্তি পাওয়া ‘জওয়ান’ এবং ‘গাদার২’এ যেন নারীদের কিছুই করার নেই। নয়নতারা ও আমিশা প্যাটেল সিনেমায় অংশ নিতেই যেন একটা চরিত্র করেছেন।

তবে ‘তু ঝুটি ম্যায় মক্কর’ সিনেমায় লাভ রঞ্জন স্বাধীন কর্মজীবী নারীর ছবি এঁকেছেন। এছাড়াও ‘সত্যপ্রেম কি কথা’র কথা উল্লেখ করা যায়, যেখানে নারী চরিত্রটির যৌন নিপীড়নের একটি অতীত আছে। ফলে বলিউডের বাণিজ্যিক সিনেমায় নারী চরিত্রগুলোর জন্য এখনো কিছুটা হলেও আশা আছে। একদিন তো কর্মজীবী নারীদের জয় হবেই।

ফিল্ম কম্পনিয়ন অবলম্বনে

পূর্ববর্তী নিবন্ধনৌকার বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রভাবশালী নারী পরিবেশ-যোদ্ধারা