প্রভাবশালী নারী পরিবেশ-যোদ্ধারা

রিতু পারভী | শনিবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২৩ at ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে একশ নারীকে প্রভাবশালী এবং অনুপ্রেরণাকারী হিসেবে নির্বাচন করে আসছে বিবিসি। এবছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে যারা শেকড় পর্যায়ে কাজ করে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন পরিবেশ, প্রতিবেশ, সমাজ, রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। জলবায়ু পরিবর্তন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নারীরা এই তালিকায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন এমন ২৮ জন নারী প্রভাবশালী এবং অনুপ্রেরণাদানকারীর তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।

আমেরিকার সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, মানবাধিকার আইনজীবী অমল ক্লুনি, ব্যালন ডি’য়র বিজয়ী ফুটবলার আতানা বনমাতী, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এক্সপার্ট তিমনিত গ্যাবরু, নারীবাদী আইকন গ্লোরিয়া স্টেইন্যাম, হলিউড অভিনেত্রী আমেরিকা ফেরেরা, সুন্দরী মুঘল হুদা কাত্তানের সাথে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা আঠাশ জন সাহসী নারী ২০২৩ সালের ১০০ প্রভাবশালী নারী তালিকায় যুক্ত হওয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বিশ্বজুড়ে অত্যাধিক তাপমাত্রা, দাবানল, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস পুরো বছর জুড়ে সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল ক্রমশ আগ্রাসী রূপ ধারণ করছে। নারী, শিশুরা এই পরিবর্তনের সরাসরি এবং অধিক শিকার। মাঠ পর্যায়ে নারীরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে পরিবর্তিত অবস্থার সাথে জীবনকে খাপখাওয়াতে।

ওয়ানজিরি মাথাই এমনই একজন নারী যিনি দীর্ঘ বিশ বছরের অধিক সময় ধরে সামাজিক ও পরিবেশগত পরিবর্তন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। পুরা আফ্রিকা মহাদেশে তিনি একজন প্রভাবশালী নারী যিনি সুবিখ্যাত ‘গ্রীণ বেল্ট’ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। কেনিয়ার তৃণমূল পর্যায়ের একটা সংগঠন দ্বারা পরিবেশের বিশাল এক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেন ওয়ানজিরি মাথাই। মা ওয়ানগারি মাথাই এর পথ ধরেই প্রান্তিক নারীদের কল্যাণ সাধন এবং পরিবেশের উন্নয়নকে একসূত্রে বেঁধে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন আফ্রিকায়। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইন্সটিটিউটএর আফ্রিকা এবং বিশ্বের যৌথ অংশীদারিত্বের মূল পরিচালকের দায়িত্বে আছেন ওয়ানজিরি।

ওয়ানজিরি মাথাই বলেন

কাজ হবে আঞ্চলিক পর্যায়ে। এলাকা ভিত্তিক কাজগুলোর সাহায্যের প্রয়োজন বিশেষ করে বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ পুনর্গঠন, পুনঃব্যবহার যোগ্য জ্বালানি এবং সার্কুলার এনার্জি নিয়ে যে উদ্যোক্তারা কাজ করছেন। একেবারে নীচ থেকে এই প্রচেষ্টাগুলোকে উপরে নিয়ে আসা আমাকে ভীষণ আশান্বিত করে।’

গত বছর পাকিস্তান যখন ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত, নেহা মানকিনি এগিয়ে যান বন্যা কবলিত জায়গাগুলোতে তাঁর দক্ষতা নিয়ে। ‘মামাবেবি ফান্ড’ নামে তাঁর দাতব্য সংস্থা নিয়ে বন্যা কবলিত এলাকায় ১৫০০০এর বেশি পরিবারকে প্রসবকালীন প্রয়োজনীয় কীট এবং ধাত্রী সেবা প্রদান করেন। তাঁর গতানুগতিক সেবা মূলত একেবারে কম খরচের ব্যবস্থাপত্রের আয়োজন, জরুরি ও দ্রুত সহায়তা এবং জলবায়ু আক্রান্ত গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়। ‘মামাবেবি ফান্ড’ উপকূলীয় এলাকার নারীদের দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নেয়ার জন্য নৌএম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছে সমপ্রতি। নেহা মালকিনি মূলত একজন ধাত্রী যিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রসবকালীন জরুরি সেবার কাজ পরিচালনা করছেন।

বিবিসি ১০০ প্রভাবশালী নারী তালিকায় আরেক নারী কিশোরী সাগরিকা শ্রীরাম। ‘জলবায়ু পাঠ’কে বিদ্যালয়ের শিক্ষায় অবশ্যপাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। কোডিংএর দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সাগরিকা ‘কিডস ফর আ বেটার ওয়ার্ল্ড’ অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বব্যপী শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে শিক্ষা এবং নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের বিভিন্ন প্রজেক্ট পরিচালনা করছেন।

দুবাইয়ে এলেভেল পড়াশোনার পাশাপাশি শ্রীরাম শিশু অধিকার নিয়ে জাতিসংঘ কমিটির উপদেষ্টা টিমের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন যেখানে তাঁর ভূমিকা একজন পরিবেশ চ্যাম্পিয়নের।

এখন আর সতর্কতা নয় বরং কাজে নামার সময়, প্রতিটি শিশুর দীর্ঘস্থায়ী যাপনের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আমরা যে পৃথিবীতে থাকতে চাই তার সিস্টেমকে পরিবর্তন করে পরিচালিত করতে শিখতে হবে।’ সাগরিকা শ্রীরামের এই কথাই বুঝিয়ে দেয় পৃথিবী বাঁচাতে এই প্রজন্ম বসে নেই।

সাগরিকা শ্রীরাম, নেহা মালকিনি, ওয়ানজিরি মাথাইএর মতো আরও প্রভাবশালী নারীরা বিশ্বব্যাপী নিরলস কাজ করে যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে। এই প্রেরণাদায়ী নারীরা পথ দেখিয়ে যায় অন্যদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবলিউডে নারীরা কি পরিবারের সদস্য হয়েই থাকবে?
পরবর্তী নিবন্ধসাজেকে সীমান্ত সড়কে ট্রাক উল্টে চালক নিহত