বন্ধু

রাজিব উল হাসান | বুধবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ঝাঁপিয়ে শীত পড়ছে এবার দেশে….। রায়ান রা শহর থেকে একটু দূরে মফস্বল শহরে থাকে। শীতের আমেজ তাই এখানে একটু বেশিই বোঝা যায়। সারারাত টুপটাপ কুয়াশার শব্দ, শিশিরভেজা ভোর এক অন্যরকম আমেজ তৈরি করে। সে এবার নতুন ক্লাসে উঠেছে। ফলাফল আহামরি গোছের। এমনিতেই সে খুব ভালো ছেলে। তেমন কারো সাথেই ঝগড়া বিবাদ করে না। নিয়ম করে পড়াশোনাও করে। কিন্তু, ওই যে রেজাল্ট খুব একটা ভালো হবে না। মা তাকে বকেন,শাসন করেন। দূর দেশে থাকা তার পাপ্পা কে অভিযোগ করেন। রায়ান বাছা জানে পাপ্পা তাকে কিছুই বলবেন না।

পাপ্পা, সবসময়ই একটা কথা বলেন,সারাদিন বই নিয়ে বসে রোবট হয়ে যেও না। পরিবেশ, প্রকৃতিকে ও জেনো। মানবিক মানুষ হওয়ার চেষ্টা করো। এতেই রায়ান বাছা বুঝে গেল কিভাবে চলতে হবে। ও হ্যাঁ, রায়ান কে আদর করে পাপ্পা রায়ান বাছা ডাকে। রায়ানের বন্ধুর সংখ্যা বেশি। তার মধ্যে সোলেমান আলী কে সে একটু বেশিই পছন্দ করে। কারণ ছাড়া তো আর পছন্দ না।কারণ একটা আছেই….। আর তা হলো, সোলেমান আলীরা ছাগল পালে। ছাগল আবার বাচ্চা দিয়েছে। তার মধ্যে বাদামি রঙের বাচ্চাটা রায়ানের খুব পছন্দ। সে বাচ্চাটাকে আদর করার জন্য সময়ে অসময়ে সোলেমান আলীদের ঘরে চলে যায়। ঘর বললে ভুল হবে। ঝুপড়ি। কোন মতে গাদাগাদি করে থাকা। রায়ান কে আসতে দেখে সোলেমান আলী ডাক দেয়,বন্ধু আয়। একলাফে রায়ানও ঘরে ঢুকে পড়ে। সোলেমান আলীদের ঘরে রায়ান যতোবারই আসে তার মা সাধ্যমতো সমাদর করার চেষ্টা করে।

কোন সময় মুড়ি বা বেলা বিস্কুট দিয়ে চা খেতে দেয়।রায়ান সোলেমান আলী কে নিয়ে এগুলো ভাগাভাগি করে খায়। সোলেমান আলী বলে, চল ছাগলটাকে একটু ছড়িয়ে আনি। এটার জন্য তো রায়ানের এখানে আসা। সোলেমান আলী মা টাকে ছড়াবে। আর রায়ান বাচ্চাগুলো নিয়ে খেলবে। রায়ান দৌঁড় দেয় আর তিড়িং বিড়িং করে বাচ্চাগুলো ও তার সাথে দৌড়ায়। আর এতেই রায়ান খিলখিল করে হাসে। বাসা থেকে আসার সময় পকেটে করে রায়ান বিস্কুট ও জুসের প্যাকেট নিয়ে আসে। দুবন্ধু ভাগাভাগি করে এগুলো খায়। তারপর ছাগলছানা গুলো নিয়ে খেলে। ওদের আদর পেয়ে ছাগলছানাগুলো পোষ মেনে গেল। সন্ধ্যার একটু আগেই সে বাসায় ফিরবে। কেউ না জানে মতো সে পুরনো কাপড় পাল্টিয়ে সাবান দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসে গেল। রায়ানের গলার আওয়াজ পেয়ে প্রতিবারের মতো আম্মু পড়ার রুমে এসে জেরা শুরু করে দিবে। পাপ্পা শিখিয়ে দিয়েছে আম্মু যতোই রাগারাগি করুক চুপ করে থাকবে। আর এতেই সে ভালো ফলাফল পাই। আম্মু কিছুক্ষণ রাগারাগি করে চুপ মেরে যান। আর এতে রায়ান ও পড়ায় মন দেয়। রায়ানের জন্য খাবার আনতে আনতে আম্মু বলেন, স্কুল থেকে ম্যাডাম আজ কল দিয়েছেন। তুমি নাকি গাধামার্কা ছেলেদের হোমওয়ার্ক ও পড়া বুঝিয়ে দাও। রায়ান চুপ মেরে থাকে। তুমি যদি ওদের পেছনে সময় দাও তাহলে তো তোমার ক্ষতি হবে। কি ক্ষতি আম্মু? তুমি ও গাধা হয়ে যাবে। কি যে বলেন আম্মু। এতে তো আমার আরো লাভ হবে। আমার চর্চা বাড়বে। ছেলের এই কথায় আম্মু মনে মনে খুশি হন।পরদিন স্কুলে সোলেমান আলীর সাথে দেখা। সে বলল বন্ধু, ছুটির পরে কথা আছে। সব ছাত্রকে সহযোগিতা করে বলে ম্যাডাম রায়ানকে আলাদা বসতে দেন এবং চোখে চোখেই রাখেন। এতে সে সব বন্ধুদের সাথে মন খুলে মিশতে পারেনা। ছুটির পর স্কুলের পাশে এবাদত খানার পুকুর ঘাটে সোলেমান আলী কে দেখতে পেল রায়ান। বল কি কথা? জানিস, কাল আমাদের ছাগলটা কেনার জন্য মানুষ এসেছিল। বাবার টাকার দরকার তাই ছাগলগুলো বিক্রি করে দিবেন। এই কথা শুনে রায়ানের মন খারাপ হয়ে গেল। মনমরা হয়ে সে সারাদিন বাসায় পড়ে রইলো। রাতে পাপ্পাকে ভয়েস দিতে গিয়ে সে একথা বলতে গিয়ে কেঁদে দিলো। রায়ানের মনের অবস্থা পাপ্পা বুঝে গেলেন। আচ্ছা, এই অবস্থা। দেখি কি করা যায়? দুএকদিন পর ছাগলগুলো নিয়ে সোলেমান আলী রায়ানদের বাসার সামনে চলে এলো। সোলেমান আলী ও ছাগলের ডাক শুনে রায়ান বাসা থেকে বের হয়ে বললো, বন্ধু কি খবর বল?সোলেমান আলী হাসতে হাসতে বললো, ভালো খবর। তোর বাবা আমাদের ছাগলগুলো কিনে ফেলেছেন। এগুলোর মালিক এখন তুই বলে সোলেমান আলী হাসতে লাগলো। কিন্তু, মা তো এগুলো বাসায় রাখতে দিবেন না। পেছন থেকে আম্মু এসে বললেন, না এগুলোর মালিক তুমি তবে সোলেমান আলীরা এগুলোর দেখাশোনা করবে। একথায় সবাই খুশি হয়ে গেল। এখন বাদামি রঙের ছাগলছানাটা রায়ানের পায়ের কাছে ওম খোঁজার চেষ্টা করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবইয়ের হাত ধরে
পরবর্তী নিবন্ধআবদুল আউয়াল ইতিহাসে উপেক্ষিত নাম