আবদুল আউয়াল ইতিহাসে উপেক্ষিত নাম

রেজাউল করিম | বুধবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

ভাষাআন্দোলন বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস এক গৌরবময় মাইলফলক, উজ্জ্বল অধ্যায়। মাকে নিয়ে তো বটেই, মাতৃভাষা নিয়ে এমন আবেগ আর আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত গোটা দুনিয়ায় সত্যিই বিরল। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়েই বাঙালি নতুন করে খুঁজতে শুরু করে নিজের পরিচয়। আর আত্মপরিচয় সন্ধানের সংগ্রামমুখর পথ ধরেই এ জাতি পৌছে যায় মহান মুক্তিযুদ্ধে, মাতৃভূমি মুক্তির লড়াইয়ে। অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। শুরুটা কিন্তু ভাষাআন্দোলন থেকেই। বাঙালির ভাষাআন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি।

ভাষা শহীদদের তালিকায় আবদুল আউয়ালের নামটি বরাবরই উপেক্ষিত রয়ে গেছে। সেদিন (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে একুশের ভাষা শহীদদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ব্যারাক হোস্টেল প্রাঙ্গণে। ওই জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন আউয়াল। জানাজা শেষে বিশাল শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই শোক মিছিলেও অংশ নেন তিনি। মিছিলটি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনের রাস্তা অতিক্রম করছিল, তখন অতর্কিতভাবে একটি সামরিক বাহিনীর ট্রাক মিছিলের এক পাশে উঠিয়ে দেয়া হয়। ট্রাকের আঘাতে সরকারি নির্যাতনের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন রিকশাচালক আবদুল আউয়াল। সরকারি প্রেসনোটে অবশ্য বলা হয়েছে, এটা নেহায়েত একটা সড়ক দুর্ঘটনা মাত্র। কিন্তু এ কথাও ঠিক যে, শোক মিছিল ছত্রভঙ্গ করতেই সরকারি নির্দেশে মিছিলের উপর দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর ট্রাক চালিয়ে দেয়া হয়েছিল ফলে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে শহীদ হয়েছিলেন তিনি।

ভাষা শহীদ আবদুল আউয়াল সম্পর্কে ভাষা সৈনিক আহমদ রফিক বলেন, দৈনিক আজাদ এবং দৈনিক মিল্লাতে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায় যে, ‘২২ ফেব্রুয়ারি রিকশাচালক আবদুল আউয়াল মিলিটারির ট্রাকের আঘাতে নিহত হন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ হালিম। তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সরকারি তত্ত্বাবধানে অজ্ঞাত স্থানে সমাহিত করা হয়।’ (সূত্র : ভাষা আন্দোলন ও ভাষাসংগ্রামীগণ, পৃ২৬)। বশীর আল হেলাল ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা৪৮৩) বলেন, আবদুল আউয়াল সম্পর্কে উক্ত সরকারি বিবরণে বলা হয় : ‘মোহাম্মদ হাশিমের ছেলে মোটর দুর্ঘটনার মারা যায়। জনাব ওবায়দুল্লার উপস্থিতিতে তাহার জানাজা পড়া হয়’। ১৪ মার্চ, ১৯৫২ইং তারিখে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ‘আবদুল আউয়ালের পিতার নাম মোহাম্মদ হাশিম। মোটর দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট জনাব ওবায়েদউল্লার উপস্থিতিতে মাওলানা আব্দুল গফুর তার জানাজা পড়ান’।

আউয়াল সেদিন শোক মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। মিলিটারি ট্রাক তাকে চাপা দেয়। রিকশাচালক আউয়ালের পিতার আসল নাম মোহাম্মদ হাশেম। তার বাড়ি ছিল ঢাকার ১৯ হাফিজুল্লাহ রোডে। পিতার নাম মোহাম্মদ হাশেম। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যখন মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল শুরু হয় এবং সেখানে মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে গুলিবর্ষণ করে। এর প্রতিবাদে পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় মিছিল শুরু হয় ও সেখানে পুলিশ গুলিবর্ষণের পাশাপাশি আন্দোলনরতদের ওপর ট্রাক তুলে দেয় এবং আউয়াল পুলিশের গাড়ি চাপায় সেদিনই নিহত হন। আউয়াল ইতিহাসে অনুচ্চারিত এক ভাষাশহীদ। তার সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি। বাংলার জন্য তার আত্মত্যাগর জন্য তাকে আমরা সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করব। আউয়ালের মতো ভাষা আন্দোলনে সকল শ্রেণিপেশার লোকজন যুক্ত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্ধু
পরবর্তী নিবন্ধশোক প্রকাশ