বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে জনসচেতনতার বিকল্প নেই

প্রদীপ ভট্টাচার্য্য | মঙ্গলবার , ৬ জুন, ২০২৩ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সাধারণত বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাসের বেশিরভাগ সময়ে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বজ্রপাতে আমাদের দেশে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। এই বজ্রঝড় বা বজ্রপাত সর্বোচ্চ ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট স্থায়ী হয়ে থাকে। আর এই বজ্রপাতের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যাছে শুধু মাত্র বৈশাখ মাসেই সারাদেশে প্রায় চল্লিশ জন প্রাণ হারিয়েছেন এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে। তাছাড়া গত ১৭ ই মে পাবনার ঈশ্বরদীতে খোলা মাঠে গরু চড়াতে গিয়ে ১৪ গরুসহ সজিব হোসেন নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে এই বজ্রপাতে যা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। অসচেতনতার কারণেই দেশে প্রতিনিয়ত ঘটছে এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আবহাওয়াবিদদের মতে এই বজ্রপাতের মূল কারণ হচ্ছে ভয়াবহ বায়ুদূষণ ও গাছপালা ধ্বংসের জন্যে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমান বেড়ে গিয়ে বজ্রপাতসহ ঝড়বৃষ্টি বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এছাড়া এখন অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল ফোন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, টাওয়ার ও কৃষি জমিতে যন্ত্রপাতির ব্যবহারের কারণে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। অথচ এক সময়ে ট্রেন স্টেশন, বহুতলভবন, সরকারিবেসরকারি স্থাপনায়, খালিমাঠ ও গুরুত্বপূর্ণ জাগায় বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন থাকতো অর্থাৎ লম্বা খাম্বা বসিয়ে এতে আর্তিং এর ব্যবস্থা ছিল যার কারণে বজ্রপাতে প্রাণহানি কম হতো। তাছাড়া শহর ও গ্রামেগঞ্জের রাস্তাঘাটে প্রচুর পরিমাণ লম্বা লম্বা নারিকেল, তাল, সুপারি, বটসহ নানান ধরনের গাছ ছিল যা বজ্রপাতের আঘাত নিজের শরীরে নিয়ে মানুষকে বাঁচাতো। কিন্তু এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই গাছপালা প্রায় বিলুপ্ত। যার কারণে সাধারণত দেখা যায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশির ভাগই খালি মাঠে ময়দানে খেটে খাওয়া সাধারণ চাষি গেরস্ত মানুষ। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে বজ্রপাত একটি আকস্মিক ঘটনা, যা প্রতিরোধ করা অত্যন্ত কঠিন। তাই রাস্তঘাটে থাকাকালীন সময়ে হটাৎ বজ্রপাত ও ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে নিজ বাড়িতে ফিরতে নাপারলেও কোন কংক্রিটের ছাদের নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিতে হবে। বজ্রপাতে মৃত্যু বা হতাহত হবার ঘটনা এড়াতে অবশ্যই আরও বেশ কিছু বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। বজ্রপাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে খোলা জায়গা, খেলার মাঠ, উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার, বা ধাতব খুঁটি থেকে দূরে থাকতে হবে এবং পুকুর, ডোবা, নদী ও জলাশয়ে কোনো অবস্থাতে থাকা যাবে না। কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংস্পর্শ রাখা যাবে না। বজ্রঝড়ে বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে।

পাশাপাশি মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টিভি ও ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যাবহার থেকেও বিরত থাকতে হবে এবং ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা, বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং ও লৌহার নলকূপ ইত্যাদি স্পর্শেও থাকা যাবে না। বজ্রপাত চলাকালীন সময়ে অতি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে অবশ্যই রবারের জুতা পায়ে পড়ে বাইরে যেতে হবে এবং বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে হলে উল্লেখিত বিষয়ের উপর জনসচেতনতার বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলাচলের পথ অবমুক্তি প্রসঙ্গে মাননীয় ভূমিমন্ত্রী সমীপে
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বাস করতে হয় তুমি নেই