বই পড়া

জোনাকী দত্ত | বুধবার , ১৮ মে, ২০২২ at ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ

 

 

অর্ক ছোটবেলা থেকেই শানতশিষ্ট। কোন ঝামেলা পছন্দ করে না। নিরিবিলি খেলাধূলা করে। সে বই পড়তে খুব ভালোবাসে। এক একটা বই সে তিন চার বার করে পড়ে। নাস্তা খাওয়ার সময়,ভাত খাওয়ার সময়, ঘুমাতে যাওয়ার সময় সে বই পড়ে। ওর বাবা ভাত খাওয়ার সময় বই পড়তে দেখলে বকা দেয়। তাই ওর বাবাকে দেখলে বই লুকিয়ে রাখে। সে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ে। তাকে শিক্ষক শিক্ষিকা খুব ভালোবাসে। কিন্তু তার বাবার ইচ্ছা সে সরকারি স্কুলে পড়ুক। তাই ৫ম শ্রেণিতে তাকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলো কিন্তু সে তখন ভর্তি হতে পারে নি। তাই এবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ওর বাবা বলল, দেখ অর্ক এবার তোমাকে সরকারি স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে, বুঝেছ? অর্ক মাথা নেড়ে বলল, ঠিক আছে। ও মা বাবার কথা সবসময় শুনে। বাবাকে ও বেশি ভয় পায়। তাই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। কিন্তু আবার ভাবছে কিন্ডারগার্টেন ছেড়ে গেলে তার বন্ধুদের সাথে খেলতে পারবে না। তাই মন খারাপ। মা তাকে বুঝাল,দেখ অর্ক, তোমার মতো অনেকেই পরীক্ষা দিচ্ছে। অর্ক বলল, মা ওরা যদি না টিকে তখন আমি একা কি করব? মা বলল, অনেকেই টিকবে। চিন্তা করো না। তুমি ভালোমত পরীক্ষা দাও।

অর্ক এবার ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো। তার বাবা মা খুব খুশি। ওদের স্কুলের আরো ৩জন ওর সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু অর্কের মন খারাপ। এই স্কুলে তার কত স্মৃতি। তার অনেক বন্ধুকে ছেড়ে যেতে হবে। তার শিক্ষক, খেলার বন্ধু সবার কথা সে ভুলতে পারবে না। সরকারি স্কুলে ভর্তির পর তার বাবার সাথে যখন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে মিনা বাজারে এলো তখন একজন স্যার ওর বাবাকে বলল অর্ক এখানে থাকলে যে রেজাল্ট করত ওখানে ও একই রেজাল্ট করবে। সে তো ভালো ছাত্র। তার শ্রেণি শিক্ষিকা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ভালো করে পড়াশোনা করো। তবে টি সি নেওয়ার সময় একটু সমস্যা হয়েছিল।

অর্ক এখন অনেক নতুন বন্ধু পেয়েছে। ও স্কুল খুব ভালোবাসে। একদিন ও স্কুল মিস দিতে চায় না। টিফিনে বন্ধুদের সাথে সে প্রতিদিন খেলে। সে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অনেকবার পুরস্কার পেয়েছে। সে গণিতে ও ভালো।একবার কিন্ডারগার্টেন ৫ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার মডেল টেস্টে গণিতে যখন সে সর্বোচ্চ নম্বর পেল, তখন বন্ধুরা তাকে জিজ্ঞেস করল, তুই পরীক্ষার সময় কি খেয়ে আসিস বল তো অর্ক।সে হাসিমুখে বলল, পান্তা ভাত। বন্ধুরা তখন বলেছিল তাহলে এখন থেকে আমাদের ও পানতা ভাত খেতে হবে। সবাই তখন হেসে উঠল।

অর্ক কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পছন্দ করত না। শুধু একবার মায়ের কথায় বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। আর গণিত অলিমিপয়াডে কয়েকবার করেছিল। খেলা পছন্দ করে কিন্তু কোন খেলার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে না। বাসায় ছোট ভাইয়ের সাথে ক্রিকেট,দাবা এগুলো খেলে। আর বেশিরভাগ সময় গল্প বই, পত্রিকায় খেলার খবর, রস আলো এগুলো পড়ে। সে মাকে বলে দিয়েছে মা, পেপারগুলো বিক্রি করলেও রস আলো বিক্রি করবে না। মা বলে, এগুলো তো পড়েছিস। তাহলে অনেক জমে গেছে না? অর্ক বলে, না না বেশি হলেও আমি ওগুলো আবার পড়ব। মা বলে, তোদের ব্যাপার কিছু বুঝি না বাপু। একবার পড়েছিস আবার পড়ার দরকার কি? শুধুই আবর্জনা। তারপর মা ওগুলো সব জমিয়ে রাখে। অর্ক খুশি হয়।

হুমায়ূন আহমেদের বই, নাটক, সিনেমা সে খুব পছন্দ করে। কোন জায়গায় বা কারো বাসায় বেড়াতে গেলে সে গল্পের বই খোঁজ করে পড়ে। পুরস্কার হিসেবে অন্য কিছু না পেয়ে যখন কোন গল্পের বই পায় তখন অর্ক খুবই আনন্দিত হয়। বইই হচ্ছে তার কাছে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বইগুলো পড়ে সে ডায়রীতে সংক্ষেপে ঘটনা লিখে রাখে। অবশ্য এটা তার মা করতে বলেছে।মা বলেছে,অর্ক বইগুলো তো পরীক্ষার সময় থাকবে না।জমা দিয়ে দিবি। এগুলো পড়ে মূল ঘটনা ডায়রীতে লিখে রাখ। তাহলে পরীক্ষায় যাওয়ার সময় একবার দেখে গেলে ভালো হবে।অর্ক

বলল, ঠিক বলেছ মা,সব বই তো মনে রাখা সম্ভব না। আমি লিখে রাখব।

অর্কর আর একটা পছন্দের জিনিস হলো মায়ের হাতের বিরিয়ানি। যেদিন বাসায় মা বিরিয়ানি রান্না করবে ঐদিন বিরিয়ানি খেতে খেতে বই পড়ার মজাই নাকি আলাদা। তার দেখাদেখি তার ছোট ভাইও বই পড়ে। এভাবেই বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তার দিন দিন বাড়তে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্রোতের তোড়ে উল্টে গেল দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন
পরবর্তী নিবন্ধপ্রভাতের রবি