ফেডারেশন কাপের শিরোপা উৎসব মোহামেডানেরই

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ৩১ মে, ২০২৩ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

৬ গোলের রোমাঞ্চকর ৯০ মিনিট। ৮ গোলের শিহরণ জাগানো ১২০ মিনিট। অতঃপর হৃদ কম্পন তোলা টাইব্রেকার। আর সে টাইব্রেকারে নতুন এক ইতিহাস গড়ল মোহামেডান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ১৪ বছর পর হারিয়ে ৯ বছর পর জিতল শিরোপা। এমন শিরোপা জয়ের উৎসব করতেই পারে মোহামেডান। একেতো ১৪ বছর পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষে ফাইনাল। তার উপর নয় বছর পর শিরোপা খরা কাটা। দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে সমতা ফেরানো। আবার পিছিয়ে পড়ে আবার সমতা ফেরানো। এরপর এগিয়ে গিয়ে আবার সমতা। এমন নাটক আর রোমাঞ্চ বাংলাদেশের ফুটবলে কে কবে দেখেছে ? তবে সব রোমাঞ্চকে সঙ্গী করে মোহামেডান যেন ফিরে গেলে সেই পুরানো মোহামেডানে। যে মোহামেডানকে অন্তত দেড় দশক ধরে দেখেনি দলটির সমর্থকরা। দেশের ফুটবলে আলোডন তোলা এবারের আবাহনীমোহামেডান ফেডারেশন কাপের ফাইনালটি সত্যিকারের এক ফাইনালে পরিণত হয়েছে। যেখানে টাইব্রেকারে আবাহনীকে ৪২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান। নির্ধারিত এবং অতিরিক্ত মিলিয়ে ১২০ মিনিটের খেলা ছিল ৪৪ গোলে ড্র। এই মৌসুমতো বটেই নংয় বছর পর কোন ট্রফি পেল মোহামেডান। আর গত আসরে দুটি ট্রফি জেতা আবাহনী এবারে থাকলো ট্রফি শূন্য।

কুমিল্লার ধীরেন্দ্র নাথ স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতে তেমন উত্তেজনা ছিল না। তবে যত সময় গড়িয়েছে ম্যাচের উত্তেজনার পারদ ততই তুঙ্গে উঠেছে। প্রথমার্ধে ২০ গোলে পিছিয়ে পড়া মোহামেডান দারুণ এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছে দ্বিতীয়ার্ধে। মোহামেডানের সোলেমান দিয়াবাতেও গড়েছেন নতুন এক ইতিহাস। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে প্রথম চার গোল করলেন তিনি।

খেলার ১৫ মিনিটে এগিয়ে যায় আবাহনী। এমেকার ডিফেন্স চেরা ক্রস পেয়ে যান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তার নিচু শট গোলরক্ষক সুজনের পায়ে লেগে জালে জড়ায়। ১০ গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী। ৪৩ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কলিনদ্রেস। মাঝ মাঠ থেকে লম্বা করে বল বাড়ান হৃদয়। বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান কলিনদ্রেস। দ্রুত গতির শটে বল জালে জড়িয়ে দলকে ২০ গোলের লিড এনে দেন তিনি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বদলে গেল খেলার দৃশ্যপট। বদলে যাওয়া এক মোহামেডানকে দেখা গেল মাঠে। আক্রমণাত্মক ফুটবলে মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোলে মোহামেডানকে সমতায় ফেরান সুলেমান দিয়াবাতে। ৫৬ মিনিটে বক্স বরাবর কামরুল ইসলামের শটে বল বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন রহমত মিয়া। ফাঁকায় বল পান দিয়াবাতে। তার প্লেসিং শট আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলকে ফাঁকি দিয়ে জড়ায় জালে। চার মিনিট পর আবারও সুলেমান জাদু। ৬০ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মুজাফফরভের শট ফিস্ট করে ফেরান আবাহনী গোলরক্ষক সোহেল। তার ফিস্টে বক্সের বাঁ প্রান্তে বল পান জাফর ইকবাল। জাফরের শট থেকে লাফিয়ে হেডে বল জালে জড়িয়ে মোহামেডান সমর্থকদের উল্লাসে ভাসান দিয়াবাতে।

সমতার পর জমে ওঠে ম্যাচ। ৬৬ মিনিটে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের শট ঝাঁপিয়ে ফিস্ট করেছিলেন মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন। সুযোগের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ওগবাহ আলতো টোকায় বল জড়ান জালে। ৮৩ মিনিটে আবার সমতা ফেরান দিয়াবাতে। তুলে নিয়েছেন হ্যাটট্রিক। কামরুল ইসলামের কর্নার থেকে দিয়াবাতের হেড দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না আবাহনী গোলরক্ষকের। ফেডারেশন কাপের ৪৩ বছরের ইতিহাসে ফাইনালে এটিই প্রথম হ্যাটট্রিক।

এরপর খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে ম্যাচের ১০৫ মিনিটে পেনাল্টি পায় মোহামেডান। স্পটকিক থেকে দলকে এগিয়ে দেন দিয়াবাতে। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে প্রথম ফুটবলার হিসেবে চার গোলের কৃতিত্ব গড়লেন এই ফুটবলার। মোহামেডান যখন নিশ্চিত জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ম্যাচে নাটকীয় মোড়। ১১৮ মিনিটে রহমতের গোলে সমতায় ফিরে আবাহনী। বঙের বাইরে থেকে রহমতের শট ঝাপিয়ে পরেও ঠেকাতে পারেননি বদলি গোলরক্ষক বিপু। তার হাতে লেগে বল জালে জড়ালে ৪৪ গোলের সমতায় শেষ হয় ম্যাচ। এরপর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে প্রথম শটেই মোহামেডানকে এগিয়ে দেন দিয়াবাতে। কিন্তু আবাহনীর হয়ে মিস করেন আগুস্তো। দ্বিতীয় শটে গোল করেন আলমগীর কবির । বিপরীতে এমেকা বল জালে জড়িয়ে কিছুটা স্বস্তি ফেরান আবাহনী শিবিরে। তৃতীয় শটে মোহামেডানের হয়ে রজার ও আবাহনীর হয়ে গোল করেন ইউসেফ মোহাম্মদ। এরপর মোহামেডানের শাহরিয়ার ইমনের শট ঠেকিয়ে দিয়ে রোমাঞ্চ জাগিয়ে তোলেন সোহেল। কিন্তু সেটা খুব বেশিক্ষণ টেকেনি। কেননা আবাহনীর অন্যতম ভরসার জায়গা সেই কলিন্দ্রেসই মিস করে বসেন পেনাল্টি। দুটো পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিনশেষে মোহামেডানের নায়ক বনে যান বিপু। এরপর চতুর্থ শট নিতে আসা কামরুল ইসলাম জাল খুঁজে পেলে উল্লাসে মেতে ওঠে মোহামেডান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে বার্ডস ও বক্সিরহাটের জয়
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ১৬.১৬ কোটি টাকা