ফাঁকা নগরী, সুনসান নীরবতা

কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন ।। ২৯ মামলা, জরিমানা, জব্দ চারটি গাড়ি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩ জুলাই, ২০২১ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে চট্টগ্রামের প্রধান প্রধান সড়ক ছিল দৃশ্যত ফাঁকা। তদুপরি দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের লোকজনের তৎপরতার কারণে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছিল বন্দর নগরী চট্টগ্রামজুড়ে। জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হওয়া বেশিরভাগ লোকজন রিকশা করে যাতায়াত করেছেন। তবে মাঝেমধ্যে দু-একটি ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেখা গেছে। অপ্রয়োজনে বের হওয়া লোকজনকে ঘরে ফেরাতে রাস্তায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের।
সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ আজাদীকে বলেন, সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নির্দেশনার আলোকে সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের নেতৃত্বে নগরীর ৪টি প্রবেশ ও বাহির পথসহ মোট ২০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের পক্ষ থেকে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা যাতে কেউ অমান্য করতে না পারে সে লক্ষ্যে পুলিশের ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগ চেক পোস্টগুলোতে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছে। সপ্তাহব্যাপী লকডাউনে অভিযান চলমান থাকবে। প্রাইভেট গাড়ি ও রিকশা যাত্রী কী কারণে বাসা থেকে বের হচ্ছে তা চেকপোস্টে তদারকি করা হচ্ছে। যারা করোনার দু’টি ভ্যাকসিন দিয়েছেন তারাও যাতে জরুরি প্রয়োজনে মাস্ক ছাড়া বের না হয় সে বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে সড়কে বের হওয়া মোটরসাইকেল চালকদের ‘ওয়ান বাইক ওয়ার মোটর সাইকেল’ নিশ্চিতসহ যাদের মুখে মাস্ক নেই তাদের মাঝে মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
নগরীর সিটি গেট, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, জিইসি, ওয়াসা, টাইগার পাস, নিউমার্কেট, জামালখান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় অফিসে যাওয়ার তাড়া ছিল না, ছিল না তাই চিরায়ত কর্মব্যস্ততা।
নগরীর অন্যতম প্রবেশ পথ সিটি গেট। সেখানে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দেখা গেছে, আশপাশের দোকানপাট বন্ধ। পুরো সড়কই ফাঁকা। মাঝে মধ্যে দু-একটি রিকশা চলাচল করছে। অলঙ্কার মোড় এলাকায় বন্ধ রয়েছে দূর পাল্লার বাসগুলোর কাউন্টার। লোকে লোকারণ্য থাকা এ এলাকায় নেই আগের চিত্র।
একই চিত্র নগরীর অন্যতম টাইগারপাস মোড় এলাকায়। সকাল ১০টার দিকে সেখানে দেখা গেছে, রিকশা ছাড়া কিছু নেই। মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁরা রিকশায় করে যাতায়াত করা যাত্রীদের কাছে কারণ জানতে চাচ্ছেন। যথাযথ কারণ ছাড়া বের হলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা নিউ মার্কেট মোড়। বেলা ১১টার দিকে সেখানে দেখা যায় ফাঁকা। বন্ধ দোকানপাট। রিকশা ছাড়া চলাচল করছে না অন্য কোনো যান।
সকালে পাড়া, মহল্লায় হাট-বাজারের জন্য কিছু লোক বের হতে দেখা গেছে। দুপুরের দিকে জুমার নামাজের সময় আবার জন চলাচল আর কিছু যানবাহন সড়কে চলে।
দ্বিতীয় দিনে বিধিনিষেধ মেনে না চলায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিভিন্ন দোকান, রেস্টুরেন্ট এবং শপিং মলে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি পালনে সচেতন করেন। অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা ইসলাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় ১০টি মামলায় ২০০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। বাকলিয়া ও চকবাজার এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইনামুল হাসান ৩টি মামলায় ১৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। অন্যদিকে নাসিরাবাদ ২নং গেট, কর্ণফুলী কমপ্লেঙ, বাংলা বাজার, ডেবার পাড়, অঙিজেন, বালুছড়া এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী ১৬টি মামলায় ২০০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
এদিকে সরকারি আদেশ অমান্য করে বের হওয়ায় ১০টি মামলা আর ৪টি গাড়ি জব্দ করেছে পুলিশ। সিএমপির এডিসি (গণমাধ্যম) আরাফাতুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সড়কে মানুষের আনাগোনা খুবই কম ছিল। এদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ৫টি ও ডবলমুরিং থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ৫টিসহ মোট ১০টি মামলা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে এ দিন জব্দ করা হয়েছে ৪টি গাড়ি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের বিদেশগামী কর্মীদের নিবন্ধন কখন কীভাবে
পরবর্তী নিবন্ধবাস্তবে রূপ পাচ্ছে ১৫ তলা ক্যান্সার ভবন