ফটিকছড়ির কৃতী সন্তান প্রফেসর তোফায়েল আহমেদ সিকদার

রুমানা নাওয়ার | বৃহস্পতিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২০ at ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ

জ্ঞানের বাতিঘর নামে খ্যাত অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। জন্ম ১৯১৩ সালে, ফটিকছড়ি উপজেলার বর্তমান ভুজপুর থানার শৈলকোপা গ্রামের সিকদার বাড়ির সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। পিতা মকবুল আলী সিকদার এবং মাতা ফয়জুন্নেছা। মকবুল আলী সিকদারের তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তোফায়েল আহমেদ ছিলেন গ্রামীণ কৃষক পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকে তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী ও ধী-শক্তির অধিকারী। পিতা মকবুল সিকদার তৃতীয় শ্রেণীর পর তাঁর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন এবং চাষাবাদের কাজে সাহায্য করতে বলেন। ঐ কিশোর বয়সেই লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আকর্ষণে তিনি বাড়ি থেকে বিনা সম্বলে বেরিয়ে পড়েন। বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে অবশেষে তাঁর আশ্রয় মিলে বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আব্দুল মান্নান সাহেবের বাবা মরহুম আবদুস সমদ সাহেবের বাড়িতে। তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। প্রতিটি বৃত্তি পরীক্ষায় তিনি মেধাবৃত্তি লাভ করেন এবং এন্ট্রান্স পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।এরপর তৎকালীন অভিবক্ত বাংলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান সহ ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ঐ সময় শিক্ষাদীক্ষায় পশ্চাদপদ উত্তর ফটিকছড়ির মানুষের কাছে তিনি বিরল উদাহরণ হিসাবে প্রতিভাত হয়েছেন। শিশু বয়স থেকে শিক্ষার জন্য অনুরাগ, অবিচল জীবন সংগ্রাম তাঁর জীবনকে এক বিরল সৌন্দর্যে মহিমান্বিত করেছে। তাঁর সমগ্র জীবন এমনভাবেই শিক্ষার দীপশিখা জ্বালিয়ে গেছে। অন্য কোন লাভজনক পেশায় না গিয়ে শিক্ষকতাকে তিনি জীবনের ব্রত হিসাবে গ্রহণ করেন।
১৯৪৪ সনে তিনি শেরে বাংলা এ, কে ফজলুল হক প্রতিষ্ঠিত বরিশাল চাখার কলেজে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, সিলেট এম, সি, কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেন। তিনি নাজিরহাট কলেজে ১৯৬৪-৬৫ সনে অধ্যক্ষ হিসাবে প্রেষণে কাজ করেন। তাঁর সময় নাজিরহাট কলেজের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয় এবং মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচয় লাভ করে। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থাকে নকলমুক্ত করার জন্য তাঁর ঐকান্তিক প্রয়াস সুবিদিত। তিনি তাঁর ছাত্রদের কাছে ছিলেন পিতৃতুল্য শ্রদ্ধেয়। লেখালিখিতেও তিনি ছিলেন তুখোড়। ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর পান্ডিত্য ছিল প্রবাদতুল্য। তাঁর রচিত ইংরেজী ভাষা ও ব্যাকরণের উপর কয়েকটি বই বিদগ্ধ মহলে যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করে এবং কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স গ্রন্থ হিসাবে সমাদৃত হয়। প্রফেসর তোফায়েল আহমেদ এর সহধর্মিণী মরহুমা আনোয়ারা বেগম ছিলেন গরিব দু:খী মানুষের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ, ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছিলেন স্নেহময়ী মায়ের মত। তাঁর যোগ্য সহধর্মিণী হিসেবে তিনিও প্রতিটি কাজে অনুপ্রেরক হয়ে সাহস যোগাতেন। অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের তিন ছেলে, ৫ মেয়ে। দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস রোগে ভুগে তিনি ১৯৬৮ সালের ১১ জানুয়ারী মাত্র ৫৫ বৎসর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ইংরেজী বিভাগের প্রধান হিসাবে কর্মরত ছিলেন। একজন গুণী ও মহান মানুষ, মানুষ গড়ার কারিগর মরহুম তোফায়েল আহমেদ আজীবন বেঁচে থাকবেন তাঁর উত্তরসূরীদের কাছে, তাঁর ছাত্রছাত্রীদের কাছে, সর্বোপরি গোটা জাতির কাছে। তিনি তাঁর সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবনানন্দ দাশ : প্রকৃতির কবি, বিষণ্নতার কবি
পরবর্তী নিবন্ধআমাদের সামাজিক ও মানবিক দায়িত্ব