ফটিকছড়িতে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু সংঘরত্ন মহাথেরর শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন

| সোমবার , ৭ জুন, ২০২১ at ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

হাজার হাজার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জনগণের অংশগ্রহণে বিগত ২৮ মে শুক্রবার ফটিকছড়ির বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু, হাইদচকিয়া গৌতমাশ্রম বিহারের অধ্যক্ষ সদ্ধর্মজ্যোতি ভদন্ত এস এম সংঘরত্ন মহাথের’র শেষকৃত্যানুষ্ঠান দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে মহাসমারোহে বিহার এলাকা ও সংলগ্ন হাইদচকিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণে উদযাপিত হয়েছে।
ভোর থেকে বিহারে বিশ্ব শান্তি কামনায় জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলনের পর সমাবেত প্রার্থনা, কক্সবাজার জেলার রামু গ্রামবাসী ও প্রয়াতের পরিবারের প্রজন্মগণের উদ্যোগে মহাথের’র নৈর্বাণিক শান্তি কামনায় সংঘদান ও অষ্টপরিষ্কার দান করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের অন্তেবাসী প্রধান ভদন্ত প্রিয়রত্ন মহাথের।
প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভদন্ত সুনন্দপ্রিয় থের এবং রামু থেকে ও স্থানীয় বিভিন্ন বিহার থেকে আগত ভিক্ষু সংঘ।
রামু গ্রামবাসী ও হাইদচকিয়া গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে এসময় স্মৃতিচারণ করেন প্রয়াতের ভাইপো প্রকৌশলী তিলক বড়ুয়া, উদযাপন পরিষদের কার্যকরী সভাপতি অঞ্জন কুমার বড়ুয়া, রামু সীমা বিহারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভদন্ত শীলপ্রিয় থের, ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ থের, ভদন্ত লোকশ্রী থের প্রমুখ ভিক্ষুসংঘ। এর পরে আগত ভিক্ষুসংঘ প্রাতরাশ গ্রহণ করেন।
সকাল ৯টায় প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে পূজনীয় ভান্তের পবিত্র শবদেহ বিহার কমপ্লেক্স থেকে অন্তিম শোভাযাত্রা ও অন্তিম গাথা পাঠ সহকারে অনুষ্ঠানস্থলে নির্ধারিত ও সু-সজ্জিত “আলংশালায়” এনে সকলের দর্শনের জন্য রাখা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সংঘরত্ন মহাথের’র নৈর্বাণিক সুখ-শান্তি প্রার্থনায় সংঘদান ও অষ্টপরিষ্কার দান শতাধিক ভিক্ষুসংঘের উপস্থিতিতে পূর্ণ ধর্মীয় মর্যাদায় সুসম্পন্ন হয়।
এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সভাপতি ভদন্ত বুদ্ধরক্ষিত মহাথের।
প্রধান অতিথি ছিলেন ভদন্ত প্রিয়ানন্দ মহাথের, প্রধান ধর্মদেশক ভদন্ত শাসনবংশ মহাথের।
উদ্বোধন করেন ভদন্ত প্রিয়রত্ন মহাথের।
স্বাগত ও শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রধান করেন প্রকৌশলী প্রবেশ চন্দ্র বড়ুয়া, চাইলাপ্রু চৌধুরী, রামু সীমা বিহারের সম্পাদক রাজু বড়ুয়া। ভিক্ষুসংঘের আসন গ্রহণের পর উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন উত্তম বড়ুয়া চিনু।
দুপুর দেড়টায় মহান ভিক্ষুসংঘের আসন গ্রহণের পর পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করার পর প্রয়াতের পরম শিষ্য রাহুলরত্ন ভিক্ষু কর্তৃক মঙ্গলাচরণ ও সংগীত শিল্পী প্রমিত বড়ুয়া কর্তৃক অন্তিম সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মাননীয় উপ-সংঘরাজ ভদন্ত ড. শীলানন্দ মহাস্থবির।
প্রধান অতিথি ছিলেন ভদন্ত জিন লংকার মহাস্থবির, প্রধান ধর্র্মদেশক ছিলেন ভদন্ত ড. জ্ঞানরত্ন মহাস্থবির, উদ্বোধক ছিলেন ভদন্ত সুনন্দ প্রিয় থের, ধর্মদেশক ভদন্ত মৈত্রীপ্রিয় মহাস্থবির, ভদন্ত বিপুলসেন মহাস্থবির, ভদন্ত সুগতপ্রিয় মহাস্থবির, ভদন্ত প্রিয়রত্ন মহাস্থবির ও প্রজ্ঞাপাল থের এবং উদযাপন পরিষদের সভাপতি ভদন্ত রতনপ্রিয় মহাস্থবির।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, বৌদ্ধদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান অজিত রঞ্জন ব ‍ুয়া, ধর্মীয় সচিব শচী ভূষন বড়ুয়া, দপ্তর সচিব সরোজ কুমার বড়ুয়া, সমাজ কল্যাণ সচিব টিংকু বড়ুয়া এবং হাইদচকিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ এ বি এম গোলাম নুর। স্বাগত বক্তব্য প্রধান করেন উদযাপন পরিষদের সচিব প্রণয়ন বড়ুয়া, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রকৌশলী মৃগাংক প্রসাদ বড়ুয়া, উদযাপন পরিষদের কার্যকরী সভাপতি অঞ্জন কুমার বড়ুয়া এবং স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন প্যানেল চেয়ারম্যান গৌতম সেবক বড়ুয়া, কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, রঞ্জিত ব ‍ুয়া, ধনঞ্জয় বড়ুয়া প্রমুখ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন উদযাপন পরিষদের কোষাধ্যক্ষ মাস্টার রাতুল বড়ুয়া, বিহার কমিটির সম্পাদক সনজীব বড়ুয়া তিনু, হাইদচকিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার বিশ্বজিৎ বড়ুয়া।
পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন বিহার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী প্রবেশ বড়ুয়া। রাষ্ট্রপতির সচিব বাবু সম্পদ বড়ুয়া কর্তৃক প্রেরিত শোকবার্তা পাঠ করেন রুপক বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে মাঠের নির্ধারিত স্থানে সুদূর রামু ও খাগড়াছড়ি থেকে আগত সু-সজ্জিত নৃত্যদল দর্শনীয় আলং ও সইং নৃত্য পরিবেশন করে প্রয়াত ভান্তের প্রতি সম্মাননা প্রদর্শন করেন।
অনুষ্ঠান শেষে ভান্তের পবিত্র শবদেহ পুনরায় শোভাযাত্রা সহকারে বাদ্য বাজিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করে শ্মশানে আনয়নপূর্বক দৃষ্টিনন্দন আতশ বাজি প্রজ্জলনের মাধ্যমে অগ্নিসংযোগ করে সকল কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটে।
এ সময় আরেকটি অন্তিম সংগীত দ্বারা পুণ্যময় আবহ সৃষ্টি করা হয়।
উল্লেখ্য, পূর্ব রাত্রে বিহার আঙ্গিনায় কীর্তনীয়া বিকাশ দত্ত ও সুলাল বড়ুয়া কর্তৃক বৌদ্ধ সংকীর্তন পরিবেশন করা হয়।
পুরো অনুষ্ঠানমালা সঞ্চালনায় ছিলেন প্রণয়ন বড়ুয়া ও পবন বড়ুয়া পংকজ এবং সমগ্র অনুষ্ঠান এলইডি ডিসপ্লের মাধ্যমে সম্পদ বড়ুয়ার পরিচালনায় প্রদর্শন করা হয়।
আরো উল্লেখ্য, বিগত ২২ মে পূজনীয় ভান্তে ইহধাম ত্যাগ করার পর থেকে যাবতীয় ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে সদ্ধর্মজ্যোতি এস এম সংঘরত্ন মহাথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদ, প্রগতি সংঘ, মৈত্রী সংঘের সদস্য ও হাইদচকিয়া গ্রামবাসী এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীদের সর্বাত্মক সহযোগিতায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্ষণ-বজ্রপাত দুটোই বাড়ার আভাস
পরবর্তী নিবন্ধবিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়ল আরো ১০ দিন