ফকির লালন শাহ ও একতারা ভাস্কর্য

রূপম চক্রবর্ত্তী | রবিবার , ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির স্বকীয়তা আর ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় যে বাদ্যযন্ত্রটি আদি ও অকৃত্রিমভাবে বহমান রয়েছে তার নাম একতারা। পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিম বাংলা লোকসংগীতপ্রধান দেশ। লোকসংগীতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কীর্তন, পল্লীগীতি, বাউল, ভাটিয়ালি প্রভৃতি। এসব গান গাওয়ার সময় বাদ্যযন্ত্র হিসেবে একতারা ব্যবহার করা হয়। এই বাদ্যযন্ত্রটির বাদন ভঙ্গি আর সুরের মূর্ছনায় আজো মাটির ঘ্রাণ খুঁজে পাওয়া যায়। এদেশের গ্রাম-গ্রামান্তর আর নগরে পাড়ি জমানো নগর বাউলদের কাছে শুনতে পাওয়া যায় এ বাদ্যযন্ত্রের বোল। আর মাত্র একটি তারের তৈরি এ বাদ্যযন্ত্রটি দিয়ে বাউল সাধকেরা সুরের যে বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তোলেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। ফকির লালন শাহের গান ও একতারার সুর যেন অবিচ্ছেদ্য। একতারার সুরেই গান বাঁধতেন তিনি। সেই একতারার ভাস্কর্য স্থান পেল কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়ির সামনে। এক হাত দিয়ে ধরা একতারা, এক আঙুল তারে রাখা। একতারা বাউলগানের প্রধান অনুষঙ্গ। লালনের সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতেই আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণে একটি একতারা নির্মাণ করা হয়েছে। ফকির লালন শাহ ও একতারা একে অপরের পরিপূরক। লালনের গানের প্রধান হাতিয়ার ছিল একতারা। এখনও লালন অনুসারীরা একতারা হাতেই গান পরিবেশন করেন। এই গানের মাধ্যমে লালন আজীবন স্বপ্ন দেখতেন ধর্ম বর্ণ গোত্র জাতহীন এক মানবিক সমাজের, যে সমাজে মানুষই সব; মানুষের মানবিক মূল্যবোধই সমাজের সহায়ক। লালন মানুষের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অধরা সেই পরমাত্মা রূপে বিরাজমান মনের মানুষকেই সতত সন্ধান করেছেন। এখন নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কম্পিউটার গেমস আর বাচ্চাদের কাছে বিনোদন বলতেই বোঝায় কার্টুন ও আধুনিক ডিভাইস। দেশের উন্নয়নে আধুনিকায়নের প্রয়োজন অবশ্যই আছে, কিন্তু সেই আধুনিকতার নামে নিজের সংস্কৃতিকে ভুলে যাওয়া তো কখনো কাম্য নয়। আমাদের ঐতিহ্য রক্ষায় সজাগ হতে হবে এখনই। বিশ্বায়নের স্রোতে গা ভাসিয়ে হারিয়ে ফেলা যাবে না আমাদের নিজস্বতাকে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই বাঁচাতে হবে আমাদের চির পরিচিত বাঙালি সংস্কৃতিকে। বাংলার চারপাশে ছড়িয়ে থাকা লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে তারা জানেনা। নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলার এই সম্পদের কথা জানাতে হবে। লেখক: প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বর্ণশিল্পীদের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নেই
পরবর্তী নিবন্ধসন্তানদের সুবচনে এবং সুশিক্ষায় মানুষ করার ব্রত হোন