প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ভাগ্য বদল অর্ধলাখ মানুষের

ভূমিকা রাখছে পরিবেশ সুরক্ষায়, সাশ্রয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ

পানি বা জুসের যে বোতলটি ছুঁড়ে ফেলা হয় সেটি কুড়িয়ে নিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশে। কুড়িয়ে নেয়া বোতলসহ বিভিন্ন প্লাস্টিকের বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের এই প্রক্রিয়া পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ এই বর্জ্য কুড়ানো থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে জড়িত বলে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এই সেক্টর বিকশিত হচ্ছে। সরকারি কিছু পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কুড়ানো বোতল দেশের প্লাস্টিক শিল্পের আমদানি নির্ভরতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সূত্র জানায়, বোতলজাত পানি এবং বিভিন্ন কোমল পানীয়ের লাখ লাখ বোতল প্রতিদিন পথে ঘাটে ছুড়ে ফেলা হয়। বিভিন্ন ক্লাব রেস্তোরায়ও লাখ লাখ পানির বোতল জড়ো করা হয়। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও দেশে প্রতিদিন ছুঁড়ে ফেলা এসব বোতলের ঠাঁই হয় ডাস্টবিনে। খালে বিলে নালা নর্দমায় প্রচুর বোতলের ছড়াছড়ি দেখা যায়। বছর কয়েক আগেও কিনে পানি খাওয়ার প্রবনতা এত ব্যাপক ছিল না। বোতলজাত পানি এবং কোমল পানীয়ের বোতলে কাঁচের পরিবর্তে প্লাস্টিক যুক্ত হওয়ার পর প্রতিদিনই বাড়ছে বোতলের সংখ্যা। বছরের পর বছর ভাগাড়ে ঠাঁই হওয়া এসব বোতল বর্তমানে দারুণ এক সম্পদে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে হাজার হাজার মানুষ এই বর্জ্য সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করার কার্যক্রম চালাচ্ছে। সংগৃহীত বোতলের একটি বড় অংশ চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশেও তৈরি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্লাস্টিকের বর্জ্য এবং বোতলগুলো কুড়িয়ে জড়ো করা হয়। চট্টগ্রামের দুইশ’ জনের মতো ব্যবসায়ী এসব প্লাস্টিক বর্জ্য কিনে নেন। প্রতি কেজি ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০ টাকা পর্যন্ত দরে কেনা হয় এসব বর্জ্য। পরবর্তীতে বর্জ্যগুলো ধানের কলের মতো মেশিনে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করা হয়। ছোট ছোট এসব টুকরোর বেশ কিছু অংশ চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। রাজধানীকেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এসব প্লাস্টিক বর্জ্য বিদেশে রপ্তানি করে বলেও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান। চট্টগ্রামের কোনো ব্যবসায়ী বিদেশে রপ্তানির সাথে সরাসরি জড়িত নন বলে জানিয়ে তারা বলেন, আমরা এখান থেকে সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠায়। ওখান থেকে রপ্তানি হয়। চট্টগ্রামে এই বোতল সংগ্রহের সাথে কয়েক হাজার লোক জড়িত বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, পথশিশু এবং টোকাইদের বেশির ভাগই বোতল সংগ্রহ এবং বিক্রির সাথে জড়িত। তারা পথে ঘাটে সারাদিনই বোতল সংগ্রহ করে। এসব বোতল তারা এনে কেজি হিসেবে বিক্রি করে। এক একজন টোকাই দিনের পাঁচ থেকে দশ কেজি পর্যন্ত বোতল সংগ্রহ করে বলেও জানালেন ব্যবসায়ীরা। কখনো কখনো এর পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারের স্টাফেরা বিয়ে মেজবানসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের পর শত শত কেজি বোতল বিক্রি করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের বোতলকে প্রক্রিয়াজাত করে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠা কারখানা নতুন করে বালতি, মগ, জগ, চেয়ারসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়। তৈরি করা হয় বিভিন্ন খেলনা। প্লাস্টিকের শত শত পণ্য তৈরি হচ্ছে কুড়ানো বর্জ্য থেকে। যা দেশের স্থানীয় অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করে গতকাল একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, বিদেশ থেকে শত শত টন প্লাস্টিকের দানা আমদানি করা হতো। এতে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করা হতো। বর্তমানে কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী জানান, চট্টগ্রামের বহু কারখানায় প্লাস্টিকের পণ্য তৈরি হচ্ছে। এগুলোর কাঁচামালের পুরোটাই কুড়িয়ে পাওয়া বোতল থেকে সংগ্রহ করা হয়। দেশের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তৈষজপত্রের চাহিদার প্রায় পুরোটাই এখান থেকে মিটে যাচ্ছে। ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েকশ’ কারখানায় প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হয় বলেও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীর যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি
পরবর্তী নিবন্ধউখিয়া ক্যাম্পে ফের একজনকে কুপিয়ে হত্যা