প্রিপেইড হবে নতুন সাড়ে ৪ লাখ মিটার

১১২৪ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার প্রি-ডিপিপি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২ নভেম্বর, ২০২১ at ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ

এবার কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) নতুন করে প্রিপেইড হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মিটার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ সংস্থানের জন্য ১১২৪ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার একটি প্রি ডিপিপি (ডিটেইল প্রজেক্ট প্রফর্মা) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস। বিদেশি দাতা সংস্থাদের কাছ থেকে প্রকল্পে অর্থায়নের আশ্বাস মিললেই দ্রুততম সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের আওতায় মিটারে রিফিল করার জন্য মডিফিকেশন করা হবে ওয়েভ সিস্টেমও। বর্তমানে কর্ণফুলী গ্যাসের ৬০ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটার সুবিধা ভোগ করছেন।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর “ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট” নামে ২২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় কর্ণফুলী গ্যাসের ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার সংযোজনের প্রথম প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০১৯ সালের ৩০ জুন ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের ওই প্রকল্পটি শেষ হয়। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে সবমিলিয়ে মাত্র ১৪৯ কোটি টাকা। ওই প্রকল্পে প্রায় ৭৩ কোটি টাকার বেশি ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে।
কেজিডিসিএল জানিয়েছে, ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ওই প্রকল্পের আলোকে পরবর্তীতে আলাদা দুটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এরমধ্যে কর্ণফুলী গ্যাসের নিজস্ব অর্থায়নে ২৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লক্ষ প্রিপেইড মিটার সংযোগের জন্য আরেকটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। বর্তমানে এক লক্ষ মিটার প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে কেজিডিসিএল। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কেজিডিসিএলে ৬ লক্ষ ২ হাজার ৩৩৮ গ্রাহক রয়েছেন। এরমধ্যে ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৪টি সার কারখানা, ১১৬৪টি শিল্প সংযোগ, ১৯৯টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ২৯০৯টি বাণিজ্যিক সংযোগ, ২টি চা-বাগান, ৭০টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন ও গৃহস্থালী সংযোগ রয়েছে ৫ লক্ষ ৯৭ হাজার ৯৮৫টি। এরমধ্যে বর্তমানে ৬০ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড সুবিধার আওতায় রয়েছে। বর্তমানে আরও ১ লক্ষ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্প চলমান রয়েছে। এরপর আরও ৪ লক্ষ ২৭ হাজার ৯৮৫ আবাসিক গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের বাইরে রয়েছে।
এদিকে গত ২০ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় দেশে গ্যাস ব্যবহারকারী সব গ্রাহককে দ্রুত প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার সুপারিশ করে। মূলত আবাসিক খাতে গ্যাসের অপচয় রোধে এই সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। হিসেব মতে, সারাদেশে আবাসিকে গ্যাসের গ্রাহক রয়েছে ৪৩ লক্ষ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ লাখ ৭৩ হাজার ১০০ আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়। ওই বৈঠক শেষে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্যাসের অপচয় রোধ করতে প্রিপেইড মিটার স্থাপন খুবই জরুরি। প্রিপেইড মিটার প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে।’
অন্যদিকে আগামী দুই বছরের মধ্যে সারাদেশে কমপক্ষে আরও ২০ লাখ আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। তারই আলোকে কর্ণফুলী গ্যাসের অবশিষ্ট প্রায় ৪ লক্ষ ৩৮ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার জন্য মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রিডিপিপি জমা দিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
কর্ণফুলী গ্যাসের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রিপেইড না হওয়া দুই চুলার মিটারগুলোর গ্রাহকরা গড়ে মাসে ৭৭ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন। কিন্তু সংযোজিত প্রিপেইড মিটার গ্রাহকরা গড় ৪০-৪৮ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করছেন। এতে একটি মিটারেই মাসে ২৭-২৮ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্ণফুলী গ্যাসের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার রয়েছে। ওই প্রকল্পটি জাইকার অর্থায়নে করা হয়েছিল। বর্তমানে কর্ণফুলী গ্যাসের নিজস্ব অর্থায়নে আরও ১ লক্ষ মিটার প্রিপেইড করার কার্যক্রম চলছে। শীঘ্রই ওই প্রকল্পে আবেদন নেয়া শুরু হবে। ’

এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে মিটারে রিচার্জ করার জন্য ভোগান্তি ছিল। রিচার্জ করার ভোগান্তি অনেকাংশে কমে গেছে। আগামীতে গ্যাসের গ্রাহকরা যাতে বাসায় বসে অনলাইন কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মিটারে রিচার্জ করতে পারে চলমান প্রকল্পে সেই সুবিধাও সংযোজন করা হচ্ছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধবানরের দেহে বঙ্গভ্যাক্স পরীক্ষার ফলাফল বিএমআরসিতে
পরবর্তী নিবন্ধচসিকের তিন পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ