প্রাণ হারিয়ে নগরবাসী প্রমাণ করছে তারা কতটা অনিরাপদ

বিপ্রতীপ অপু | শুক্রবার , ১ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

একটা সময় ছিল গ্রামে মহিলারা ব্লাউজ পরতো না। কেউ কেউ অভাবে পরতো না। কেউ কেউ আবার এটাকে বাড়তি খরচ মনে করতো। অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের মহিলারাদের মাঝেও ব্লাউজের বহুল ব্যবহার ছিল না। আমার দাদা ছিলেন সমাজসেবী পল্লী চিকিৎসক। ভোর হতেই এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে ঘুরে গ্রামের সব পরিবারের খোঁজ-খবর নিতেন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতেন। সে আমলে গ্রামের বৌ-ঝিরা ঘর গেরস্থালী কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন হাতের কাজ করতো। যেটি এখন কুটিরশিল্প নামে পরিচিত। নিকোনো উঠোনে বসেই চলতো তাদের সুনিপুণ হাতের কাজ। তো দাদা যখন গলা খাঁকারি দিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকতেন। পুরুষের উপস্থিতি টের পেয়ে নারীরা ঘোমটা টেনে নিতেন। এতে করে মাথা ঢাকতে গিয়ে পুরো পিঠ উদোম হয়ে যেতো। দাদা বলতেন, থাক থাক যেমনে বসে আছিস বসে থাক। ঘোমটা দিতে গিয়া উদলা হয়ে যাইস না। দাদা কথাটা মজা করে বললেও বিষয়টা ছিল অর্থবহ ছিল। আমাদের শহরের নালা-নর্দমা গুলোর অবস্থাও সেই গ্রামের নারীদের ব্লাউজ পরার মতো। অধিকর্তারা কেউ মনে করছেন নালা নর্দমার সংস্কার করা অপচয়। কেউ মনে করছেন না করলেই বা কী হয়। মাঝে মাঝে আবার সেই অবস্থা সম্পন্ন নারীদের ব্লাউজ পরার মতোই নাম সর্বস্ব সংস্কার হয়। বস্তুত এর কোনো সুফল নগরবাসী পান না। উপরন্তু বেঘোরে প্রাণ হারিয়ে নগরবাসী প্রমাণ করছে কতটা অনিরাপদ, অদক্ষ আর উদাসী নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে আছি আমরা।
একটি অন্যতম বিভাগীয় শহরের নালায় পড়ে একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। অথচ কর্তৃপক্ষের কোনো হেলদোল নেই। নিদেনপক্ষে একটু দুঃখ প্রকাশ করবে সেই মানবিক দায়িত্ববোধ টুকুও নেই। আজ এই প্রশ্ন গুলো বার বার মনে খোঁচা দিচ্ছে, কার পিছে হাঁটছি আমরা? কাকে নিরংকুশ সমর্থন দিচ্ছি? কার পেছনে গলা ফাটাচ্ছি? ভাবতেই নিজেকে খুব অসহায় লাগে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরিবার ও কর্মস্থলে আনন্দ
পরবর্তী নিবন্ধফরগিভনেস ইজ এ ফ্রিডম