প্রাচীন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের দাবি

মীরসরাইয়ের লাল বিবি ওয়াছি খাঁ মসজিদ

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ২৫ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাইয়ের প্রাচীন কয়েকটি প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের মধ্যে উপজেলার ১১ নম্বর মঘাদিয়া ইউনিয়নের শেখেরতালুক লাল বিবি ওয়াছি খাঁ জামে মসজিদটি অন্যতম। সতেরশ শতাব্দিতে নবাব আলিবর্দী খানের রাজত্বকালে নির্মিত এই মসজিদটি সময়ের বিবর্তনে অনেক পরিবর্তন করা হলেও কিছু প্রাচীন প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। এটি সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের অধীনে আনা হলে এখনো অবশিষ্ট প্রাচীন নিদর্শন রক্ষা সম্ভব বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

 

মীরসরাই উপজেলার ইতিহাস গবেষক বাংলা একাডেমির সহপরিচালক প্রয়াত আহমদ মমতাজ রচিত ‘চট্টগ্রামের সূফি সাধক দ্বিতীয় খন্ডের ২৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছেমাওলানা মুহাম্মদ মোয়াজ্বেম খানের পূর্বপুরুষ আমিনুদ্দিন আহমদ খান তার সহোদরসহ বিহার প্রদেশের রাজধানী পাটনার আম্বরাবাদ

পরগনায় জায়গিরদার ছিলেন। সে সময় বাংলাবিহারউড়িষ্যার নবাব ছিলেন আলিবর্দী খা (১৭৪০১৭৫৬)। দুই ভাইয়ের মতবিরোধের এক পর্যায়ে আমিনুদ্দিন খাঁন নিজ পরিবার নিয়ে নিজামপুর পরগনায় হিজরত করেন। তারই দুই পুত্র আজিম খান ও ওয়াছি খান এর সঙ্গে মানু বিবি ও লাল বিবি এর বিবাহ

হয়। লাল বিবি ও ওয়াছি খান দম্পতি ছিলেন নিঃসন্তান। তাদের বিপুল সম্পত্তি থেকে তারা বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করতেন। মসজিদের নামে বিশাল দীঘি, কয়েকটি পুকুর, জমি অনেক সম্পদই দিয়ে যান প্রতিষ্ঠাতা এই দম্পতি। মঘাদিয়ার এই শেখের তালুক গ্রামে স্বামীস্ত্রী নিজেদের নামে একটি মসজিদ ও

সরাইখানা করেন। মসজিদ আর সরাইখানা করতে নির্ধারিত স্থানের পাশেই নিজেরা শ্রমিক দিয়ে ইট পুড়িয়ে মসজিদের পার্শ্বে তৈরি করেন দুটি পৃথক সরাইখানা। নয়টি ছোট ও দুটি বড় গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটিতে ছিল লাল বিবি ও ওয়াছি খানের পারিবারিক কিছু স্মৃতিচিহ্নও। কালের বিবর্তনে মসজিদের

ভেতরের অংশে স্থান বাড়াতে কিছুটা পরিবর্তনও আনা হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রাচীন পুরাকীর্তির অনেক নিদর্শন এখনও অক্ষত রয়েছে। চারপাশের চওড়া দেয়াল, কারুকার্য খচিত ছোট ছোট ইটের তৈরি শিল্পকর্ম এখনও নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসেও অবশিষ্টাংশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে এলে প্রাচীনতম এই পুরাকীর্তি প্রাণ ফিরে পাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এই বিষয়ে উক্ত প্রাচীন মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. ঈসমাইল খাঁন এবং তার বড় ভাই চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালের অন্যতম পরিচালক আজম খাঁন বলেন, এই মসজিদটি এতোটাই প্রাচীনতম ইতিহাসের অংশ যে, সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে এলাকার আঞ্চলিক ইতিহাসও গৌরবাহ্নিত হবে। পাশাপাশি এসব প্রত্নতত্ত্ব দেখতেও আসবে অনেকে।

এই বিষয়ে মীরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, এমন প্রাচীন নিদর্শন অবশ্যই সংরক্ষণ প্রয়োজন। সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেয়া হলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব।

জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক একেএম সাইদুর রহমান বলেন, এমন প্রাচীন মসজিদ ও সরাইখানা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেব অবশ্যই। শীঘ্রই আমরা সরেজমিন পরিদর্শনের উদ্যোগ গ্রহণ করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষের একবেলার আহারের যোগান
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬