অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষের একবেলার আহারের যোগান

শৈবালের মেহমানখানা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৫ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

শৈবালের মেহমানখানা’। এ মেহমানখানার স্লোগান হলো, ‘পেট ভরে ভাত খাবো।’ ২১নং জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন এ মেহমানখানার উদ্যোক্তা। নিত্য নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাচ্ছেন এ মানুষটি; যাঁর লক্ষ্য ‘বাংলাদেশ দেখবে জামালখান।’

 

শৈবালের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জামালখানসহ আশপাশের এলাকার ২০০ জন ভাসমান মানুষ প্রতি শুক্রবার জামালখান মোড়ে এসে দুপুরের আহার সেরে যান পেটপুরে। রমজান মাসে অবশ্য সময়টা খানিক পরিবর্তন করা হয়েছে। বিকেল পাঁচটার পর দেওয়া হয় খাবার। অন্য সময় মেন্যু হিসেবে সাদা ভাতডিম কিংবা সাদা ভাতমুরগির মাংস থাকলেও রমজান মাসে গতকাল থেকে দেওয়া হচ্ছে বিরিয়ানি।

কেন বা কীভাবে এ চিন্তা মাথায় এলো জানতে চাইলে কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আজাদীকে জানান, হঠাৎ করেই মাথায় আসে এই প্রকল্পের চিন্তা। কারণ মানুষের পেটে ভাত থাকলে মুখে হাসি থাকে। আর এ হাসির মাধ্যমে মুহূর্তেই বদলে যায় একটি দেশ তথা পুরো পৃথিবী। কিন্তু শুধুমাত্র নিজস্ব অর্থায়নে যদি

করি তবে হয়তো যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই ২০ জন শুভাকাঙ্ক্ষীকে (আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব) নিয়ে শুরু করি একটি গ্রুপ ‘শৈবালের মেহমানখানা’। সেই গ্রুপের একজন সদস্য এক সপ্তাহে ২০০ জন অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষের একবেলার আহারের যোগান দেবে এবং আবারও ৫ মাস পর ধারাবাহিক ভাবে সেই ব্যক্তি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেই চলবে। এর ফলে একজনের ওপর চাপ পড়বে না।

আমার এই প্রস্তাবটি সকলের পছন্দ হওয়ায় লুফে নিল। আমরা প্রকল্পটি প্রথম শুরু করি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার। প্রকল্পটি সফলতার সাথে পঞ্চম সপ্তাহে উপনীত হয়েছেএই ভাবে চলতে থাকলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা লাখো মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে পারবো একদিন। আমাদের ইচ্ছে আছে জাতীয়

দিবসগুলোতে দুস্থদের জন্য এর চেয়ে বিশেষ কিছু করার। এটি ফেসবুকে প্রচারের উদ্দেশ্য; আরো মানুষ যেন আমাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়। তারা আমাদের সাথেও যোগ দিতে পারেন অথবা স্বতন্ত্রভাবে নিজেরা গ্রুপ করে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারেন।

গতকাল শুক্রবার শৈবালের মেহমানখানায় গিয়ে দেখা যায়, প্রথমেই উপস্থিত সকলকে টোকেন প্রদান করা হচ্ছে। ২০০ জনের খাবার প্রস্তুত করায় টোকেন প্রথা চালু করা ছাড়া বিকল্প ছিল না বলে জানান উদ্যোক্তাদের একজন অঞ্জন কান্তি বিশ্বাস। তিনি বলেন, আসলে উদ্যোগটা বন্ধু শৈবালেরই। সে যখন তার এ

চিন্তাটা আমাদের সাথে শেয়ার করলো, আমরা সকলে সাধুবাদ জানালাম। কারণ, এটা একটা মহৎ কাজ। কেউ উদ্যোগ না নিলে এ ধরনের কাজ হয় না।

কাউন্সিলর শৈবাল জানান, আমাদের পরিচিত অনেক ভাসমান মানুষ আছেন। যারা ভিক্ষা করে খান। প্রায়ই ভালো খেতে পান না। যেমন শাহ আনিস মসজিদ, লিচুবাগান, কদমমোবারকসহ আরো কিছু জায়গায় তারা অবস্থান করেন। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক ছোট ভাইদের দিয়ে তাদের এ ব্যাপারে পূর্বে জানিয়ে দেই

, টোকেন প্রদান করি। বয়স্ক ছাড়াও নারীশিশুরাও এখানে খেতে আসছেন। তবে আমরা যেহেতু আপাতত একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা বেঁধে দিয়েছি তাই টোকেন ছাড়া কাউকে দিতে পারছি না। সংখ্যাটা সময়ের সাথে বাড়লে নিশ্চয়ই বাকিরাও খেতে পাবে। তাদের সপ্তাহে অন্তত একটি দিন পেটপুরে ভাত খাওয়ানোর দায়িত্ব নিতে পেরে আমরা আনন্দিত।

গতকাল বিকেলে সরেজমিনে জামালখান গিয়ে দেখা গেছে, আট দশটা হোটেলের মত এখানে চেয়ার, টেবিল কিংবা বিলের আওয়াজ নেই, ওয়েটার বা ক্যাশ কাউন্টারও নেই। নেই মাথার উপর ছাদও। নির্দিষ্ট সময়ে একটি খাবারভর্তি ভ্যানগাড়ি এসে থামে। সেই গাড়ি থেকে খাবার নামায় স্বেচ্ছাসেবকেরা। এরপর

একেকজনের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন কাউন্সিলর সুমন। মুখে তার পরিতৃপ্তির হাসি। এভাবেই চলে অসহায়দুস্থ মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ। খোলা আকাশের নিচে ফুটপাতে বসেই দিব্যি আহার সেরে নেন হোটেলে আসা অতিথিরা। মূলত দিন আনা দিন খাওয়া দুস্থ, অসহায় ও শিশুদের খাবারের ব্যবস্থা

করতেই এ হোটেলের যাত্রা শুরু। খাবার নিতে আসা সায়েরা বেগম আজাদীকে বলেন, বাজারে মুরগির দাম কেবল বাড়ছেই। কেনার সাধ্য নেই। এখানে মুরগির মাংস পোলাও দেওয়ার কথা শুনে এসেছি। গরম গরম পোলাও তৃপ্তি নিয়ে খেলাম। অনেক দোয়া করি, যারা আমাদের পেট ভরিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধধনী-গরিব এক কাতারে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাচীন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের দাবি