ধনী-গরিব এক কাতারে

আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদে ইফতার

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৫ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

ধনীগরিব, বয়স ও শ্রেণিপেশার ভেদাভেদ নেই। সারিবদ্ধভাবে পাশাপাশি বসেছেন সবাই। তাদের সামনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নয় পদের ইফতারি। সন্ধ্যায় সময় হওয়া মাত্রই একসঙ্গে ইফতার করলেন তারা।

 

গতকাল শুক্রবার এ দৃশ্য গেছে নগরের আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদে। অবশ্য এবারসহ গত ২২ বছর ধরে এ মসজিদে রোযাদারদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হল। গতকাল প্রথম রমজানে অংশ নিয়েছেন ১৮শ রোজাদার। আয়োজকরা তাদের অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে জানিয়েছেন, রমজানের শেষ

দিকে এসে ইফতারে অংশ নেয়া লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তিন হাজারও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তখন ইফতারের আয়োজনও বাড়ানো হবে। এর কারণ হচ্ছে, রমজানের শেষের দিকে আশপাশের মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা লোকজনও ইফতার করতে মসজিদে ছুটে আসেন। তাই তখন লোকসংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।

জানা গেছে, ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে মোগলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মৃতি হিসেবে নির্মাণ করা হয় আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদ। এর ৩২৯ বছর পর ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে মসজিদের খতিব হিসেবে যোগ দেন মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল মাদানী। তখন তিনি মক্কামদীনার আদলে আন্দরকিল্লাহ

শাহী জামে মসজিদে রোজাদারদের জন্য ইফতার আয়োজনের চিন্তাভাবনা করেন এবং আলাপআলোচনা শুরু করেন। এরপর খতিবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০১ খ্রিস্টাব্দে ছোট পরিসরে রোজাদারদের জন্য আয়োজন করা হয় ইফতারের। এ আয়োজন ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে রূপ নেয় বড় পরিসরে। সেই থেকে প্রতি

রমজানে এখানে একসঙ্গে হাজারের অধিক রোজাদার ইফতার করে আসছেন। জানা গেছে, সকাল থেকেই শুরু হয় ইফতার আয়োজনের কর্মযজ্ঞ। ১০ জন বাবুর্চি পুরো রমজান মাসজুড়ে ইফতার তৈরিতে কাজ করবেন। ইফতার সরবরাহে কাজ করবেন ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক। অতীতের ন্যায় এবারও ইফতারে ছিল

নয় পদ। এগুলো হচ্ছেখেজুর, ছোলা, চমুচা, পেয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, মুড়ি, অন্তন ও জিলাপি। এর সঙ্গে থাকে শরবত। এছাড়া অতীতে মাঝেমধ্যে মৌসুমী ফল এবং বিরিয়ানিও দেয়া হয়েছে। ছয়জন একসঙ্গে ইফতার করতে পারে মত বড় থালার পাশাপাশি সিঙ্গেল প্লেটেও সরবরাহ করা হয় এসব

ইফতার। তবে ধনীগরীবের জন্য আলাদা কোনো ইফতার উপকরণ থাকে না। সবার জন্যই একই উপকরণ থাকে। যা সামগ্রিক আয়োজনের অনন্য সৌন্দর্য এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচায়ক। আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের খতিবের একান্ত সহকারী মো. হাছান মুরাদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, খতিব

হুজুরের তত্ত্বাবধানে সামগ্রিক আয়োজন চলছে। আজ (গতকাল) প্রায় ১৮শ জন রোজাদার ইফতারে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, এবারও পুরো রমজান মাস জুড়ে আয়োজন চলবে। গতকাল ইফতারিতে অংশ নেন ব্যবসায়ী মনছুর আলম। তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার বাসা কাছেই। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও

অল্পদূরে। এরপরও প্রতিবছর এখানে বেশ কয়েকটা রোজায় ইফতার করি। কারণ, সবার সঙ্গে বসে ইফতার করায় আলাদা আনন্দ আছে। ধনীগরীব ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে পাশাপাশি বসে ইফতার করার মধ্য দিয়ে ইসলামের যে সৌন্দর্য তা দেখে মনকে তৃপ্ত করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাক স্বাধীনতার সুযোগে বিএনপির নেতারা মিথ্যাচার করছেন : কাদের
পরবর্তী নিবন্ধঅসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষের একবেলার আহারের যোগান