প্রশাসনকে কঠোর ও নির্মোহ হতে হবে বজায় রাখতে হবে সমপ্রীতির সহাবস্থান

| রবিবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু লোক ধর্মান্ধতায় ভোগে এবং তারা সব সময় সামপ্রদায়িক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চায়। এটা শুধু আমাদের দেশে না, শুধু মুসলমান হিসেবে না, সব ধর্মেই কিন্তু এই ধর্মান্ধতা আছে তারা সব সময় একটা গোলমাল, একটা কিছু করার চেষ্টা করে। আমরা যদি সবাই এক হয়ে চলি, নিশ্চয়ই তারা ক্ষতি করতে পারবে না। শেখ হাসিনা বলেন, মাঝেমধ্যে কিছু দুষ্টু চক্র কিছু ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের ভেতরে এই চেতনা নষ্ট করতে চায়। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, যখন একটা জিনিস সুন্দরভাবে চলছে সেটাকে নষ্ট করা। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে সেই সময় এই যাত্রাটাকে ব্যাহত করা আর সেই সঙ্গে সঙ্গে দেশের ভেতরে একটা সমস্যা করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে না, বিশ্বাস অর্জন করতে পারে না। রাজনীতি নেই, কোনো আদর্শ নেই, আসলে তারাই এ ধরনের কাজ করে। এটা তাদের এক ধরনের দুর্বলতা।
গত ১৫ অক্টোবর দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় প্রধানমন্ত্রীর এসব কথা প্রকাশিত হয়েছে। কুমিল্লায় সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি নষ্টের অপচেষ্টার ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপরাধীদের খুঁজে বের করা হবে এবং এমন শাস্তি দিতে হবে ভবিষ্যতে যেন আর কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়।
প্রধানমন্ত্রীর এমন দৃঢ়তাপূর্ণ বক্তব্যের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও আস্থা রেখে আমরা বলতে চাই, এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর ও নির্মোহ হতে হবে। এখানে কোনো ধরনের আপসের সুযোগ নেই।
মনে রাখা দরকার যে, সামপ্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি অসামপ্রদায়িক রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল। যার নাম বাংলাদেশ ফলে আমাদের এই বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছে। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির দেশ। সুদীর্ঘকাল থেকে বাংলা ভূখণ্ডে নানা জাতি-গোষ্ঠী ও ধর্ম মতের অনুসারীরা পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে মিলেমিশে একত্রে বসবাসের মাধ্যমে সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি বা আন্তঃধর্মীয় সমপ্রীতির ঐতিহ্য সংহত রেখেছে। যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে- এটাই ধর্মের শিক্ষা। মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও মালিক এক। তার ধর্মও এক ও অভিন্ন। তার সব সৃষ্টির মাঝে মানুষ সর্বোৎকৃষ্ট। তার এ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি যেন নিজেদের মাঝে সাম্য, একতা, মানবতা এবং সহমর্মিতা প্রকাশের মাধ্যমে সহাবস্থানে বসবাস করেন এ শিক্ষাই সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন। এ দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, বাঙালি, মগ, চাকমা –সব ধর্মের, সব জাতির মানুষের যে সহাবস্থান এবং সামপ্রদায়িক সম্পর্ক, তা পৃথিবীতে বিরল। তবু পরিতাপের সঙ্গে উচ্চারণ করতে হয়, আমাদের এই দেশে মাঝেমধ্যে সামপ্রদায়িক বিষবাষ্প মাথাচাড়া দিয়ে প্রভাব ফেলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু আমাদের এই অসামপ্রদায়িক মনোভাব এই অপশক্তিকে সব সময় দমন করেছে। এখনো একটি সামপ্রদায়িক গোষ্ঠী আমাদের এই দেশকে, আমাদের সমাজকে হেয় করার চেষ্টায় আছে। আমাদের দেশের উন্নয়নকে বাধাপ্রাপ্ত করতে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। তাদের চক্রান্ত সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বোঝাতে হবে যে, প্রকৃতপক্ষে সব ধর্মের মর্মবাণী হচ্ছে মানবসেবার মাধ্যমে সৌহার্দ্য ও সমপ্রীতি স্থাপন করা, মানুষের মঙ্গল করা। ধর্মের এই মর্মবাণী সবাই ধারণ করতে পারলেই পৃথিবীতে কোনো হানাহানি, মারামারি ও অশান্তি আর থাকবে না। এ কথা বলা বাহুল্য যে, বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে বিভিন্ন ধর্মের লোকদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধান সবাইকে যে কোনো ধর্ম গ্রহণ, চর্চা ও পালন করার অধিকার দিয়েছে। আরো বলেছে, প্রত্যেক ধর্মীয় সমপ্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করার অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের এক অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্র কখনোই তার নাগরিকদের মধ্যে ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ ও জন্মস্থান ভেদে কোনো প্রকার বৈষম্য করবে না। তাই সমপ্রীতি আর আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের এগোতে হবে সামনে। কোনো দ্বন্দ্ব বা হিংসা-বিদ্বেষ যেন না থাকে, তার প্রয়াস চালাতে হবে। পৃথিবীর সব দেশের কাছে আমরা সমপ্রীতির মডেল হতে চাই। অসামপ্রদায়িক এই উজ্জ্বল আদর্শকে রক্ষা করে চলতে হবে আমাদের। বজায় রাখতে হবে সমপ্রীতির সহাবস্থান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে