প্রবাহ

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী | বুধবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

শাহ মজিদিয়া সড়কের উন্নয়নের প্রাসঙ্গিকতা

এতদঞ্চলে তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামে সাতকানিয়ালোহাগাড়ার মধ্যে শাহ মজিদিয়া সড়কের অবস্থান। এই সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য যানবাহন চলাচল করছে। একাধিক কারণে জনগণের কাছে এই সড়ক অতীব গুরুত্ব লাভ করে। কিন্তু দীর্ঘ সময় এই সড়কের তেমন উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে হয় না। চট্টগ্রামআরাকান মহাসড়কের তেওয়ারি হাট থেকে প্রায় ৬ কি.মি পশ্চিমে গারাংগিয়া দরবার পর্যন্ত “শাহ মজিদিয়া সড়ক”। গারাংগিয়া দরবার থেকে মির্জাখীল দরবার বাংলা বাজার হয়ে আরও প্রায় ৫ কি.মি অতিক্রম করে এই সড়ক দেওদিঘীতে সাতকানিয়াবাঁশখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত। ফলে এই সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত সিএনজি, মাইক্রো, কোস্টার, শত শত ছোট বড় ট্রাক চলাচল করতেই আছে। যানবাহনের চাপ বাড়লে জায়গায় জায়গায় যানজটের সৃষ্টি হয়। রাস্তাটির অধিকাংশ স্থানে কার্পেটিং ভেঙে গেছে। এতে যানবাহন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। গারাংগিয়া তরিকত দরবার আরাকান মহাসড়ক থেকে প্রধান প্রবেশপথ এই সড়ক।

১৯৮০ এর দশকে গারাংগিয়া হযরত ছোট হুজুর কেবলা কুত্‌বে মাদার হযরত আলহাজ্ব শাহ মাওলানা আবদুর রশিদ হামেদী ছিদ্দিকী জনকল্যাণে এই সড়কের প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরই অভিভাবক বড় ভাই মুরব্বি গারাংগিয়া দরবারের কর্ণদার হযরত বড় হুজুর কেবলা কুত্‌বুল আলম সুলতানুল আউলিয়া হযরত আলহাজ্ব শাহ মাওলানা আবদুল মজিদ (রহ.)’র স্মৃতিতে নামকরণ করেন “শাহ মজিদিয়া সড়ক”।

চট্টগ্রামকক্সবাজার আরাকান মহাসড়কের লোহাগাড়া তেওয়ারি হাট থেকে এই শাহ মজিদিয়া সড়কের উৎপত্তি। আঁকাবাঁকাপথে প্রায় ৬ কি.মি যাওয়ার পর গারাংগিয়া তরিকতের দরবার তথা ইসলামী কমপ্লেক্স। এখানে শায়িত আছেন হযরত বড় হুজুর কেবলা ও হযরত ছোট হুজুর কেবলা। গারাংগিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা, গারাংগিয়া রব্বানী মহিলা কামিল মাদ্রাসা, ২টি এতিমখানা, হেফজখানা, খানকাহ, প্রকান্ড জামে মসজিদ, প্রাইমারী স্কুল, শাহ মজিদিয়া মার্কেট, বাজার মিলে বিশাল ইসলামী কমপ্লেক্স তথা তরিকতের জংশন।

ডলুখালের উপর ১৯৮০ এর দশকে ব্রীজ নির্মিত হয়ে এই দরবারের পাশ দিয়ে প্রায় ২ কি.মি পশ্চিমে গিয়ে বাংলা বাজার। সংলগ্ন রয়েছে মির্জাখীল তরিকতের দরবার, ইউনিয়ন পরিষদ, মাদ্রাসা, হাই স্কুল। এখান থেকে ৩ কি.মি উত্তরে গিয়ে দেওদিঘী সাতকানিয়াবাঁশখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে সংযোগ করা আছে এই সড়ক।

চট্টগ্রামকক্সবাজার আরাকান মহাসড়ক এবং চট্টগ্রাম থেকে আনোয়ারাবাঁশখালীচকরিয়া হয়ে কম দূরত্বের দ্বিতীয় মহাসড়কের অবস্থান। এই দুই মহাসড়কের সংযোগ হয়েছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে চট্টগ্রামকক্সবাজার আরাকান মহাসড়কের সাতকানিয়া রাস্তার মাথা হয়ে উত্তরদক্ষিণ বাঁশখালী মহাসড়কের গুনাগরী পয়েন্টে প্রায় ২০ কি.মি দীর্ঘ এই আঞ্চলিক মহাসড়কের অবস্থান। এই আঞ্চলিক মহাসড়ক ক’বছর আগে কোটি কোটি টাকা খরচ করে উন্নয়ন করা হয়।

বাঁশখালী, আনোয়ারা এবং সাতকানিয়া পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ দেওদিঘী হয়ে মির্জাখীল ও গারাংগিয়া দরবারে স্রোতের মত যাওয়া আসা করছে। আবার ঐ দিকের হাজারও লোক তেওয়ারি হাট আরাকান সড়কে এসে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়ক ব্যবহার করে চকরিয়া, কঙবাজার যাওয়া আসা করছে। মাত্র ১১ কি.মি এর এ সড়কে স্থানে স্থানে রয়েছে বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল। এই শাহ মজিদিয়া সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে বিলম্ব হতে থাকায় দৈনন্দিন হাজারও মানুষের দুর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে।

১৯৮০ এর দশকে নির্মিত এই সড়কে ডলুনদীর ওপর শাহ মজিদিয়া ব্রীজ অনেকটা মেয়াদ উত্তীর্ণ। এটি বেইলী ব্রীজ সিস্টেমে লোহা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল হযরত ছোট হুজুর কেবলার প্রচেষ্টায়। আমি প্রচেষ্টা চালিয়ে চট্টগ্রাম ড্রাইডক থেকে ক’বছর আগে ডলুনদীর উপর এই শাহ মজিদিয়া ব্রীজ পরিদর্শন করাতে একাধিক প্রকৌশলী আনার ব্যবস্থা করি। তারা এই ব্রীজ পরিদর্শন করে বলেন, এই ব্রীজ মজবুত আকারে পুনঃ নির্মাণ জরুরী। ভারি ট্রাক এই ব্রীজ দিয়ে পার হতে গেলে ব্রীজ ভেঙে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।

লোহাগাড়া তেওয়ারি হাট থেকে গারাংগিয়া দরবার এবং মির্জাখীল অপর দরবারের পাশ দিয়ে দেওদিঘি পর্যন্ত এই ১১ কি.মি দীর্ঘ সড়কে যানজটের পাশাপাশি দুর্ঘটনা লেগেই আছে। যেহেতু সড়কটি আঁকাবাঁকা সরু।

জনকল্যাণে গুরুত্ব দিয়ে এই সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীত করে দ্বিগুণের মত সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন অত্যাবশ্যক।

চট্টগ্রামকক্সবাজার রেল লাইন শাহ মজিদিয়া সড়ক অতিক্রম করেছে। দুঃখের বিষয় রেল কর্তৃপক্ষ রেল লাইনের নিচে শাহ মজিদিয়া সড়কের যান চলাচলের জন্য সরু আন্ডারপাস নির্মাণ করেছে। যাতে একটি মাত্র বড় ট্রাক বা কোস্টার যেতে সমস্যা হতে পারে। বর্ষাকালে অতি বৃষ্টিতে আন্ডারপাসে পানি জমে এই জন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে।

মনে হয় না রেল কর্তৃপক্ষ সড়ক কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে এই আন্ডারপাস নির্মাণ করেছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার নতুন রেল লাইন নির্মাণ করতে এই রকম অসংখ্য সড়ক অতিক্রম করেছে। জানি না ঐ সব সড়কে আন্ডারপাস বা ওভারপাস কি রকম করা হয়েছে। রেল যেমন জনকল্যাণে, স্থানীয় সড়কও জনকল্যাণে। রেল কর্তৃপক্ষের এই শাহ মজিদিয়া সড়কে আন্ডারপাস নির্মাণে অবহেলা অদক্ষতার পরিচয় বহন করছে বলে মনে করি।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যেয়ারতের উদ্দেশ্যে অসংখ্য মানুষ আরাকান মহাসড়ক হয়ে তেওয়ারি হাটে নামতেছে। উদ্দেশ্যে গারাংগিয়া দরবারে গমন করে হযরত বড় হুজুর কেবলা ও হযরত ছোট হুজুর কেবলার যেয়ারত করা। আঁকাবাঁকা ভাঙ্গা এই রাস্তা দিয়ে যানজটে থেমে থেমে গারাংগিয়া দরবারে যাওয়াআসা করছে যেয়ারতকারীগণ। যা আমাদের জন্য লজ্জাকর ব্যাপার।

দেশে সড়ক যোগাযোগ ধারণাতীত উন্নত হয়েছে। সারা দেশে গ্রামেগঞ্জে পর্যন্ত মসৃণ রাস্তা। কিন্তু দুঃখের বিষয় জনগুরুত্বপূর্ণ এই রকম একটি সড়ক দীর্ঘদিন যাবৎ উন্নয়ন; বড় সংস্কারবিহীন অবহেলিত থাকা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেখানে গ্রামেগঞ্জের ভিতর কিলোমিটারের পর কিলোমিটার রাস্তা সুন্দর মসৃণভাবে কার্পেটিং হয়ে গেছে, সেখানে চট্টগ্রাম অঞ্চলে চট্টগ্রামেরআরাকান মহাসড়কের তেওয়ারি হাট থেকে গারাংগিয়া দরবার, মির্জাখীল বাংলা বাজার হয়ে দেওদিঘীতে সাতকানিয়াবাঁশখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে সংযুক্ত মাত্র ১১ কি.মি সড়ক কেন অবহেলিত রয়ে গেছে তা বোধগম্য নয়।

অতএব সাতকানিয়ালোহাগাড়া মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্যের প্রতি নিবেদন, তিনি যাতে এই মাত্র ১১ কি.মি দীর্ঘ “শাহ মজিদিয়া সড়ক”কে দ্রুততার সাথে আঞ্চলিক মহাসড়কে রূপ দেন। সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে এগিয়ে আসেন।

সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট নিবেদন চট্টগ্রাম তথা এতদঞ্চলের এই রকম একটি জনগুরুত্বপূর্ণ “শাহ মজিদিয়া সড়ক” সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে যাতে তহবিল বরাদ্দ করে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে
পরবর্তী নিবন্ধসাংবাদিক প্রদীপ চৌধুরীর পিতৃবিয়োগ