দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন সেনাদের ধর্ষণের কথা তুলে ধরলেন ফরাসি নারী

| বৃহস্পতিবার , ৯ মে, ২০২৪ at ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে মিত্র বাহিনীর অবতরণের পর দুই মার্কিন সেনা এমি ডুপ্রির মা’কে ধর্ষণ করেছিল। ১৯৪৪ সালের আগস্টের ওই পৈশাচিক ঘটনার ৮০ বছর পর এমি এ ঘটনা নিয়ে কথা বলার সময় এসেছে বলে সিদ্ধান্ত টেনেছেন। ইউরোপে নাৎসি জার্মানির দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে ওই বছর জুনে প্রায় ১০ লাখ মার্কিন, ব্রিটিশ, কানাডীয় ও ফরাসি সেনা নরম্যান্ডি উপকূলে অবতরণ করেছিল। এমির তখন ১৯ বছর বয়স। থাকেন নরম্যান্ডির পার্শ্ববর্তী ব্রিটানি অঞ্চলের মোনতুর নামের এক গ্রামে। ‘মুক্তিদাতারা’ আসায় আশপাশের সবার মতো তিনিও উজ্জীবিত হয়ে ছিলেন। কিন্তু তার আনন্দ উবে যেতে বেশি সময় লাগেনি। ১০ আগস্ট সন্ধ্যায় দুই মার্কিন সেনা তাদের পারিবারিক খামারে হাজির হয়। বর্তমানে ৯৯ বছর বয়সী এমি আন্তর্জাতিক এক বার্তা সংস্থাকে বলেন, তারা মদ্যপ ছিলেন আর একজন নারী খুঁজছিলেন। এমি তার মার লেখা একটি চিঠি দেখান। তার মার নামও ছিল এমি, এমি হেলোদাইসো হেনোরে। তার মা লিখেছেন, কিছুই ভুলে যাওয়া হয় না।

পরিষ্কার হাতের লেখায় এমি হেনোরে ওই রাতের ঘটনা তুলে ধরেছেন। বলেছেন কীভাবে ওই মার্কিন সেনারা তার স্বামীর দিকে গুলি ছোড়ে আর তাতে তার মাথার টুপিতে গর্ত হয়ে যায়, তারপর তারা আতঙ্কজনকভাবে তার তরুণী কন্যার দিকে এগোতে থাকে। কন্যাকে রক্ষা করার জন্য তিনি মার্কিন সেনাদের সঙ্গে নিজেই যেতে রাজি হন। হেনোরে লিখেছেন, তারা আমাকে একটি মাঠে নিয়ে যায় আর তারা ধর্ষণ শুরু করে, প্রতিজন চারবার করে। মার লেখা চিঠি পড়তে পড়তে এমির গলা ধরে আসে। তিনি বলেন, আহ্‌ মা, তুমি কতো ভুগেছো, আমিও ভুগেছি। আমি এটা নিয়ে প্রতিদিন ভাবি। আমাকে রক্ষা করার জন্য আমার মা নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে। ওই রাতে তারা যখন তাকে ধর্ষণ করে, আমরা অপেক্ষায় ছিলাম, তিনি জীবিত ফিরে আসতে পারবেন না তারা তাকে গুলি করে মেরে ফেলবে কোনো ধারণা করতে পারছিলাম না। ওই সময় এই একটি ঘটনাই ঘটেছিল এমন নয়। ১৯৪৪ সালের অক্টোবরে নরম্যান্ডির যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর মার্কিন সামরিক কর্তৃপক্ষ ফরাসি নারীদের ধর্ষণ করার জন্য তাদের বাহিনীর ১৫২ জন সেনাকে বিচারের মুখোমুখি করেছিল। তবে সত্যি হচ্ছে ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৬ সালে মার্কিন সেনারা চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ফ্রান্সে শত শত বা হাজার হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান মার্কিন ইতিহাসবিদ মেরি লুইস রবার্টস। এই ঘটনাকে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ‘একটি নিষিদ্ধ’ অংশ হিসেবে বর্ণনা করেন। এসব ঘটনা নিয়ে হাতে গোনা যে কয়েকজন গবেষণা করেছেন তিনি তাদের একজন।

তিনি বলেন, অনেক নারী চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ধর্ষণের সঙ্গে লজ্জার বিষয়টি জড়িত ছিল। তিনি জানান, সব জায়গায় আমেরিকানদের জয় নিয়ে এতো উল্লাস ছড়িয়ে ছিল যে তার সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা খাপ খাচ্ছিল না, তাই তাদের পক্ষে এ নিয়ে কিছু বলা কঠিন হয়ে উঠেছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রাম্পের সঙ্গে যৌন অভিজ্ঞতার বিবরণ আদালতকে শোনালেন সাবেক পর্ন তারকা
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু