প্রবাহ

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী | বুধবার , ২০ জুলাই, ২০২২ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

স্মৃতিতে মহাকাশ কেন্দ্র নাসা

যুক্তরাষ্ট্রের নাসা বিজ্ঞানীগণের পাশাপাশি বিশ্বে সচেতন নাগরিকের কাছে আলোকিত পরিচিত শব্দ। NASA-National Aeronautics and Space Administration.

নাসার সদর দপ্তরের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের হিউসটন শহরের নিকটে। এই নাসা তাদের অতি মূল্যবান জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রায় ১৩৫০ কোটি আলোক বর্ষ দূরের নক্ষত্ররাজির ছবি ধারণ করেছে। অর্থাৎ ১৩৫০ কোটি বছরের আগের মহাকাশের এক অংশের ছবি বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে সক্ষম হয়। জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (James Webb Space Telescope) মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা, কানাডীয় মহাকাশ সংস্থা ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত একটি মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র। এটিকে সংক্ষেপে ওয়েব (Webb) নামেও বলা হয়।

এটির সাহায্যে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে মহাবিশ্বে বিরাজমান বস্তু ও সংঘটিত ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।

এতে মহান আল্লাহ পাকের সৃষ্টি জগতের বিশালত্ব জানতে পেরে বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলে। যা প্রকাশ করা হয় গত ১১ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই তারিখের মধ্যে।
নাসার সদর দপ্তর হিউসটনে হলেও স্পেস স্টেশন ফ্লোরিডা ও ক্যালোফোর্নিয়ায়। এই দুই স্থান থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণকৃত মহাকাশযান উঠানামা করে। এই উভয় ঘাঁটিতে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ, অবতরণ উপযোগী বিস্তৃত পরিসরে রানওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। রানওয়েতে অবতরণকালে আবহাওয়ার অবস্থাভেদে আধুনিক অন্য প্রযুক্তিও ব্যবহৃত হয়। আবহাওয়া ও আনুষঙ্গিক অনুকূল সুবিধার কারণে মহাকাশসমূহ ফ্লোরিডা বা ক্যালোফোর্নিয়া যে কোন একটি থেকে উৎক্ষিপ্ত হলেও তার যাবতীয় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা হিউসটনের নাসা থেকে।

আমাদের দেশে অনেক কিছু অতি নিয়ন্ত্রণে। বিদেশী ভ্রমণকারীত নয়ই দেশের জনসংখ্যার বড় অংশ দেশের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দেখার ইচ্ছা থাকলেও প্রবেশ করতে অক্ষম। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে নানান বিধি নিষেধ মানতে হয়। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বসহ বহু দেশে নিয়ম শৃংখলা মেনে জনগণকে দেখার, জানার সুযোগ দেয়া হয়।

১৯৯৫ সালে আমেরিকা গমন করলে ডালাসে ছোট ভাই রায়হানের বাসায় মাসখানেক থাকা হয়। তখন রায়হান আগ্রহ করে বেশকিছু দর্শনীয় স্থানে নিয়ে যায়। তৎমধ্যে অন্যতম একটি হিউসটন। যা ডালাস থেকে ৩৮০ কি.মি দূরত্বে। হিউসটন মহানগরীর এক দিকে প্রায় ১ বর্গ কি.মি বা তারও বেশি এরিয়া নিয়ে নাসার সদর দপ্তর। যদিওবা প্রশাসনিকভাবে ওয়াশিংটন ডি.সিতেও তাদের দপ্তর রয়েছে। মৌলিকভাবে হিউসটনের নাসা থেকে যাবতীয় কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রকান্ড একাধিক দালান চোখে পড়ছিল। আমাদেরকে প্রথমে নিয়ে গেল বিশাল এক হল রুমে। যেখানে সাজিয়ে রাখা আছে মহাকাশে ব্যবহৃত সামগ্রী যা সত্যিই অপূর্ব এবং দেখেই পর্যটক মাত্র নয়নমন সার্থক হবে। এসব জিনিসগুলোর মধ্যে চাঁদে গমনকারী এ্যাপোলো-১১ ককপিট, চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণকারী সেই এ্যাপোলো-১১ এর ঐতিহাসিক চন্দ্রযান। সেই সময় চন্দ্রপৃষ্ঠে গাড়িটি চালানো হয়েছে সে ইতিহাস খ্যাত গাড়িটি। অর্থাৎ বিশাল হল রুমে এ দুর্লভ কিছু সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা আছে। এখানে নিকটে আরেকটি হলে মহাকাশ বিজয়ের শুরু থেকে সম্প্রতি পর্যন্ত নাসার ধারণকৃত চিত্রাবলী প্রদর্শন করা হয় যা ৪০/৪৫ মিনিট ব্যাপী।

মূল কন্ট্রোল রুমের অডিটরিয়ামের উপর তলায় আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে প্রায় শ’খানেক মানুষ বসতে পারে। সামনে পুরোটাই বুলেট প্রুফ গ্লাস। গ্লাসের অপর পাশে ২০/২৫ খানা চেয়ার সমেত মহাকাশযান নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। এক দিকে বড় আকারের একটি বড় স্ক্রিন। মহাকাশযান যখন ফ্লোরিডা কিংবা ক্যালোফোর্নিয়ার মাটি থেকে ঊর্ধ্ব আকাশে উৎক্ষেপণ হবে তখন সামনের স্ক্রিনে সবকিছু ভেসে উঠবে। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ এবং প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত তার সবকিছু পরিদৃশ্য হতে থাকে। মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ থেকে পুরো সময়টা স্ক্রিনের সামনে চেয়ারে উপবিষ্ট বিজ্ঞানীরা অবলোকন করে যাবেন একং মহাকাশযানের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে। এই স্ক্রিনে আমাদেরকে মহাকাশযান কিভাবে ৯০ মিনিট সময়ে সমস্ত পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে তার আংশিক দেখাল।

মহাকাশযান উৎক্ষেপণকালে পর্যটকের উল্লেখিত চেয়ার পর্যন্ত আসা নিষিদ্ধ। তখন কেবল মাত্র মহাকাশযানে গমনকারীদের ঘনিষ্ঠ পরিবারবর্গ এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই সেখানে অবস্থান করে স্ক্রিনে এ মহাকাশযান অবলোকন করতে পারে। এই ১ কি.মি বা তারও অধিক এরিয়া নিয়ে আরও রয়েছে ছোট ট্রেনের ব্যবস্থা। অনেকটা ঢাকা শিশুপার্কের মত। ট্রেনে করে ট্যুরিস্টের যাবতীয় কিছু অবলোকন করানো হয়।

১৯৫৮ সালে ২৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের National Aeronautics and Space Administration (NASA) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ইহা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বাধীন সংস্থা। যা বিমানচালনা বিদ্যা ও মহাকাশ সম্পর্কিত গবেষণা করে থাকে। নাসার রয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। বছরে ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক ব্যয় করে থাকে। এ নাসা মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণা ও প্রয়োগে উৎসাহিত করার মাধ্যমে মহাকাশ গবেষণার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ মহাকাশ অনুসন্ধানের নেতৃত্বে নাসা প্রশংসার দাবীদার। এ্যাপোলো মুন লেন্ডিং মিশন, স্কাই ল্যাব স্পেস স্টেশন এবং স্পেস শাটল মিশন নাসার অবদানকে স্মরণ করে দেয়।

১৯৬০ সাল থেকে মঙ্গলগ্রহে মানুষের ভ্রমণ যাত্রায় নাসার সম্ভাব্য অভিযান হিসেবে আলোচিত হয়ে আসছে।

বস্তুতঃ মহান আল্লাহ পাকের সৃষ্টির বিশালত্ব এখনও আবিষ্কার হতেই আছে। আল্লাহ পাকের সৃষ্টির বিশালত্ব অনুধাবন করে বিশ্বের সাধারণ জনগণের পাশাপাশি বিজ্ঞানীরাও হতবাক হয়ে যাচ্ছে। আমরাও যাতে মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাকের ক্ষমতার বিশালত্ব নিয়ে ভাবি এবং তাঁর দেয়া দিক নির্দেশনা মতে চলি।
লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর বৈষম্যহীন শিক্ষাভাবনা
পরবর্তী নিবন্ধবন্ধুত্বের দ্বীপ