দেশে প্রথমবারের মতো যুদ্ধশিশুর স্বীকৃতি পেয়েছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের ফলে জন্ম নেওয়া মেরিনা খাতুন। এখন থেকে তিনি বাবার পরিচয় ছাড়াই সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পাবেন।
গতকাল রোববার সকালে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির চিঠি মেরিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়। মেরিনা খাতুন তাড়াশ উপজেলার তাড়াশ গ্রামের মৃত পচি বেগমের মেয়ে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) উপ–পরিচালক (উন্নয়ন) প্রমথ রঞ্জন ঘটক স্বাক্ষরিত চিঠিটি তাড়াশ পোস্ট মাস্টার আইয়ুব আলীর কাছ থেকে গ্রহণ করেন মেরিনা। খবর বাংলানিউজের।
গত ৭ জুলাই ইস্যু হওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মেরিনা খাতুনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ও গত ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৮৯তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো।
যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতির চিঠি পেয়ে মেরিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। ছেলেমেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। ফলে বর্তমানে অভাব অনটনে চলে সংসার। আবার কিছুদিন আগে আমার স্বামী ওমর আলী অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংকট বেড়েছে। যুদ্ধশিশু হিসেবে সরকারের কাছে রাষ্ট্রীয় ভাতা ও সম্মানীর দাবি জানান তিনি।
তাড়াশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কামান্ডার মো. আরশেদুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধশিশু হিসেবে মেরিনা খাতুন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি মেরিনাকে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মানী ও ভাতা দেওয়ারও দাবি জানাই।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাড়াশের ফাজিল আকন্দের বিধবা স্ত্রী পচি বেওয়াকে স্থানীয় কয়েকজন রাজাকার হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেন। আর সেখানে হানাদার বাহিনীর সেনাদের কাছে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এতে করে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন এবং পরে মেরিনা খাতুনের জন্ম হয়। ২০২২ সালে ৮ সেপ্টেম্বর বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত পচি বেওয়ার মেয়ে মেরিনা খাতুন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন পাঠান। আবেদনে মেরিনা খাতুন উল্লেখ করেন, তার মা পচি বেওয়াকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০১৮ সালের ৪ জুলাই বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যার মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নম্বর ২০৫। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান।