প্রত্যাশা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বড় চ্যালেঞ্জ

| শনিবার , ২৫ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

রমজান মাসে ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। তবে সিএনজি ও আবাসিক খাতে গ্যাসের সরবরাহ কমানো হবে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, রমজান মাসে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, গরম বাড়লে বাড়তি চাহিদা সামলানো মুশকিল হতে পারে।

 

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার রমজান ও সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে দিনে ১৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চেয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। পেট্রোবাংলা সর্বোচ্চ ১১০১২০ কোটি ঘনফুট দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। গত বুধবার দেশে বিদ্যুতের

চাহিদা সর্বোচ্চ ছিল ১১ হাজার ২৫৯ মেগাওয়াট। এর পুরোটাই সরবরাহ করা হয়েছে দাবি করে পিডিবি জানিয়েছে, দেশে কোনো লোডশেডিং ছিল না সেদিন। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। গত রোববার বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে ১০৩.৮৫ কোটি

ঘনফুট। বিতরণ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, গরম কম থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা কম ছিল। গরম বাড়লে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। বিশেষ করে ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় চাহিদা বেড়ে যায়। পাশাপাশি সেচ মৌসুম চলছে। রাতেই জমিতে সেচ দেওয়া হয়। ফলে সামনের দিনগুলোতে গরম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে

বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়লে লোডশেডিং করতে হবে। সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগ রমজানে সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠক করে জ্বালানি তেল আমদানি স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ডলার সংকট কাটাতে বিদ্যুৎ বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

এর আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির সার্বিক বিষয় নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বৈঠকে বলা হয়, ইফতার, তারাবির নামাজ ও সাহরির সময়ে কোনোভাবেই লোডশেডিং করা যাবে না। বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোকে ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার পরীক্ষা করে প্রতিস্থাপন এবং স্টোরে পর্যাপ্ত ট্রান্সফরমার মজুদ রাখতে হবে।

যেভাবেই হোক উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে এবং তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। আমরা জানি, রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা আশা করি এমন পরিস্থিতি থেকে দ্রুতই

বেরিয়ে আসতে পারবে আমাদের বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় বাধা জ্বালানি সংকট। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে সময়মতো পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রীষ্মে লোডশেডিং মোকাবিলায় সরকার ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রাখার যে পরিকল্পনা করেছিল তার মধ্যে রয়েছে

পায়রা ও রামপাল কেন্দ্র। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা, কয়লার অভাবে এই দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেবল তেল, গ্যাস ও কয়লার ওপর নির্ভর করলে চলবে না; জলবিদ্যুৎ, বায়ুকল, সৌরবিদ্যুৎ, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সম্ভাব্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্র নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকে।’

তুলনামূলক কম গুরুত্বর্পূণ খাতে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে। তবে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বড় চ্যালেঞ্জ। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা যতই আশ্বাস দিন না কেন, রমজানেও লোডশেডিং হতে পারে। তবে সেটা যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ পত্রিকান্তরে বলেন, ‘রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি পুরোপুরি নিরবচ্ছিন্ন না হলেও স্বাভাবিক থাকবে’।

দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে বিকল্প উপায় বের করা জরুরি। তবে সাধারণ মানুষকেও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন ও মিতব্যয়ী হওয়া দরকার। বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ হলেই তা সবার জন্যই সুফল বয়ে আনবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে