প্রতিষ্ঠা করতে চাই আমাদের সত্যিকার বাংলাদেশ

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী | মঙ্গলবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

২০ জন মেধাবীর মৃত্যুদণ্ড, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজীরবিহীন ঘটনা। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে নৃশংসভাবে হত্যায় জড়িত ছিলো এই বিশজন ছাত্র,সাথে আরও পাঁচজন যারা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে,এটাই স্বাভাবিক অবশ্যই সঠিক বিচার পেয়েছে আবরারের পরিবার এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। দেশের মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে এই রায়ে।খুবই দরকার ছিলো এরকম শাস্তির, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন জঘন্য অপরাধ করার সাহস না পায়,কারো পরিবার যাতে সন্তানহারা না হয়,কোনো পরিবার যাতে জীবনের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে না যায়। কিন্তু অন্যদিকে এই রায় মেনে নিতে কিছুটা হলেও কষ্ট হচ্ছে কেননা এমন মৃত্যুদন্ড তো হওয়ার কথা ছিলোনা!দেশের সর্বোচচ বিদ্যাপীঠে পড়তে যাওয়া মেধাবী ছেলেগুলোর এই পরিণতি মেনে নেয়া কি এতই সহজ! যদিও এই মেধাবীরা দেশের শত্রু এরা দেশের কোন কাজে লাগতে পারেনা, এদের কাছ থেকে কোন কিছু আশা করা যায়না, এরা শুধুমাত্র একটা নষ্ট সমাজ তৈরি করে। কিন্তু তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় তাদেরকে নষ্ট কে বানালো, কারা দায়ী এজন্য! একজন মা অনেক কষ্টের বিনিময়ে তার সন্তানকে জন্ম দেওয়া থেকে শুরু করে লালনপালন করে বড় করে তোলেন।কোন মা বা বাবা কখনো চাইতে পারেননা তার সন্তান অন্যায় করুক বা খারাপ পথে পরিচালিত হোক। তারপরেও অনেক ক্ষেত্রে সন্তানেরা কুপথে যায়,অন্যায় করে।আবরারের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধেও এমন কথা বলা হচ্ছে যে তাদের পরিবার থেকে তারা সঠিক শিক্ষা পায়নি।তাদের মা,বাবা তাদের সত্যিকার মানুষ করে তুলতে পারেনি। কিন্তু যারা বুয়েটের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ার গৌরব অর্জন করেছিলো তারা পরিবার থেকে খারাপ শিক্ষা পেয়েছে এটা বলাটা কি অন্যায় হবেনা! আবরার ঠিক যেভাবে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলো তার হত্যাকারী সেই ২০ জনও কিন্তু একইভাবে ভর্তি হয়েছিলো। আবরারের মেধার সাথে সেই বিশ জনের মেধাকে কোনভাবেই আলাদা করা যায়না তা নাহলে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ার অধিকার তারা রাখতোনা। একজন মেধাবীর স্বপ্নকে শেষ করতে গিয়ে ২০জন মেধাবী নিজেরাই নিজেদের শেষ করে দিলো। একজন মায়ের যন্ত্রণা আরও বিশজন মায়ের যন্ত্রণায় পরিণত হলো,তাদের স্বপ্ন নিমিষেই ধূলিস্যাত হলো। কেন আজ এই অবস্থা!কেনই বা তারা এতটা নির্মম হলো! আমরা দেখতে পাই আমাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংঘর্ষ, মারামারি, হানাহানি লেগেই রয়েছে।কিছুদিন আগে ও চট্টগ্রাম মেডিকেলে এরকম একটা ঘটনা ঘটে গেলো। বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অহরহ ঘটে চলেছে ছাত্র সংঘর্ষ। বেশ কবছর ধরে র‌্যাগিং নামের নির্মম একটা শব্দ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অনেক ছেলেমেয়ে এই র‌্যাগিং নামক নির্যাতনের শিকার। এমনও হয়েছে র‌্যাগিং এর কারনে কলেজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে অনেক ছাত্র। এভাবে তো আর চলতে দেয়া যায়না।এখনই এসব নির্যাতন, মারামারি, হানাহানি, র‌্যাগিং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
এখনই হাল ধরতে হবে, এমনিতেই অনেক সময় কিন্তু নষ্ট হয়ে গেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, অভিভাবকদের ও সচেতন হতে হবে। তা না হলে আমরা মেধাবী ছাত্রদের হারিয়ে ফেলবো, তারা দেশের ভালো ভালো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। অনেক কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই বাংলাদেশ। এই ছাত্রসমাজই একদিন ভাষার জন্য নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলো, ছিনিয়ে এনেছিলো লাল সবুজ পতাকা। কত মায়ের বুক খালি করে চোখের জলে ভাসিয়ে গর্বিত বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলো পৃথিবীর বুকে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এরকম ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। আজকের বাংলাদেশের এই অবস্থা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হয়তো আমরা ফিরে পাবো আমাদের সত্যিকার বাংলাদেশ, যেই বাংলাদেশ তার সোনার ছেলেদের নিয়ে অতীতের মতন গর্ববোধ করবে।
লেখক : কবি, শিক্ষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিজেকে সংশোধন করি সমাজ পরিবর্তন হবে
পরবর্তী নিবন্ধলাখো শহীদের রক্তে কেনা দেশ