পৌরকর : মেয়র সমীপে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৯ জুন, ২০২১ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’। নগরবাসীর অবস্থাও হয়েছে তেমন। নাগরিকদের সমস্যা ও দুর্ভোগ লাঘবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পৌরকর সংক্রান্ত দুটো প্রস্তাবের কারণেই শঙ্কিত নগরবাসী। গত ৩ জুন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে চসিক প্রস্তাব করে, পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নে ২০১৭ সালের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে কর আদায় করার। অথবা স্থগিতকৃত পুনর্মূল্যায়ন বাতিল করে নতুন করে এসেসমেন্ট করার। ভবন মালিকদের শঙ্কা, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে সেই ‘অতিরিক্ত’ কর পরিশোধ করতে হবে তাদের। এছাড়া চলমান করোনা পরিস্থিতিতে নানা কারণে আর্থিক সক্ষমতা কমেছে ভবন মালিকদের। এ অবস্থায় পৌরকরের হার বাড়লে তা হবে তাদের জন্য আরো অসহনীয়। এ বিষয়ে নাগরিক মতামত আহবান করে দৈনিক আজাদী। এতে সাড়া দিয়ে যারা আমাদের ইমেইলে ‘নাগরিক মতামত’ পাঠিয়েছেন, তাদের সে-সব মতামত আমরা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো। আশা করছি সিটি মেয়র নাগরিক মতামত বিবেচনায় নিবেন। আজ প্রকাশিত হলো প্রথম কিস্তি।

মোহাম্মদ ছৈয়দ আহমদ
২০১৭ সালের অ্যাসেসমেন্ট করা পৌরকরও সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়
পৌরকর মূল্যায়নে দুটি ধারা অনুসরণ করা হয়ে থাকে- বর্গফুট ও বাড়ির ভাড়া। পৌরকর মূল্যায়নের জন্য যারা এলাকায় আসেন তারা সাধারণত বর্গফুটের চেয়ে বাড়ির ভাড়াকে বেশি প্রাধান্য দিতে আগ্রহী হন। আমার মতো নগণ্য নাগরিকের কাছে বোধগম্য নয়। কারণগুলো নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করলাম :
১. ভাড়ার ভিত্তিতে এ কর নির্ধারণ জটিল। প্রথমত একটি বাড়িতে প্রতি তলার ভাড়া এক রকম হয় না। প্রায় ৯৯% বাড়িতে পানির জন্য আলাদা বিল নেয়া হয় না। এটা বাড়ির মালিকই বহন করেন। এছাড়াও এ পানি সরবরাহের জন্য বাড়ির মালিককে আরো অনেকরকম খরচ বহন করতে হয়। যেমন- লাইন থেকে পানি রিজার্ভ ট্যাংকে জমা করা ও সরবরাহ ট্যাংকে স্থানান্তরের জন্য দুটি মোটর প্রয়োজন হয়। আর মোটর দুটি চালানোর জন্য সার্বক্ষণিক একজন বেতনভুক্ত লোকের নিয়োগ দিতে হয়। এর পাশাপাশি ঐ লোকের থাকা-খাওয়া, মোটরের বিদ্যুৎ খরচ, মেরামত খরচ ইত্যাদি বাড়ির মালিককেই বহন করতে হয়। সুতরাং যদি ১০ হাজার টাকা ভাড়া হয় তাহলে এসব খরচ বাদ দিলে থাকে পাঁচ হাজার টাকা। এছাড়াও অনেক বাড়ির মালিক গ্যাস বিলও ভাড়ার সাথে একত্রে নিয়ে নেন। অথচ পৌরকর নির্ধারণের জন্য আগত পরিদর্শক ভাড়াটিয়ার থেকে জেনে গেলেন ভাড়া টাকা ১০ হাজার টাকা। এতে কি দাঁড়ালো? এছাড়াও ঘর অনেক সময় খালি থাকে, বিশেষ করে যেসব এলাকা অল্প বৃষ্টিতে পানিতে ডুবে। সুতরাং শুধু ভাড়ার ওপর ভিত্তি করে পৌরকর নির্ধারণ অযৌক্তিক। তাছাড়া ২০১৭ সালের অ্যাসেসম্যান্ট করা পৌরকরও সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
শহরে বাড়ি আছে যেহেতু সেহেতু পৌরকর দিতেই হবে। সুতরাং বর্তমানে চলমান পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ২০১৭ সালের পূর্বের নির্ধারিত পৌরকর আদায় বহাল রাখা উচিত। তবে যেসব বাড়ি বর্ধিত এবং নতুন করা হয়েছে সেসবের বর্ধিত অংশ এবং নতুন বাড়ির ক্ষেত্রে এলাকা, বাড়ির মান ও বর্গফুটের উপর ভিত্তি করে ২০১৭ সালের পূর্বের পদ্ধতিতে পৌরকর নির্ধারণ করে আদায় করা যেতে পারে। এছাড়াও যখন দেশ ও জনগণের অবস্থা সার্বিকভাবে স্বাভাবিক হবে, তখন এলাকা, বাড়ি নির্মাণের মান ইত্যাদি বিবেচনা করে ঘরের পরিমাপের ভিত্তিতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে পুনর্মূল্যায়ন করা যেতে পারে।

ফারহানা ইসলাম রুহী
মধ্যবিত্ত পরিবারের কষ্ট বাড়বে
গৃহকর বাড়লে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কষ্টের সম্মুখীন হবে। করোনা মহামারির কারণে নতুন করে শিক্ষিত বেকার যুক্ত হয়েছে। অভাব বেড়েছে প্রতিটি পরিবারে। প্রতিনিয়তই নানা ঘাত প্রতিঘাতে জর্জরিত। এই মধ্যবিত্ত সমাজ কারো কাছে হাত পাততে পারে না। আত্মমর্যাদা এই সমাজের মানুষদের প্রখর। তারা দেশকে বিনাশ করে, ব্যাংক লুট করে বিদেশও পাড়ি দেন না। দেশের নীতি নির্ধারণকারীর কাছে বিনীত অনুরোধ এই শ্রেণির জনগণের কথা ভেবে একটু সদয় হওয়া উচিৎ। কারণ যেকোনো কর বৃদ্ধি মধ্যবিত্ত সমাজকে ভোগায় বেশি।

তসলিম খাঁ
বাড়ির মালিকদের পড়তে হবে চরম দুর্দশায়
এমনিতে করোনায় বাড়ছে হতাশা, তার উপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে পৌরকর আদায় অথবা স্থগিতকৃত পুনর্মূল্যায়ন বাতিল করে নতুন করে অ্যাসেসমেন্ট করা হলে সব সমস্যা কি সমাধান হয়ে যাবে! তাছাড়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলেই পৌরকর বাড়বে এটা নিশ্চিত। যদি তা হয়, নগরবাসীর মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে বাড়ির মালিকদের পড়তে হবে চরম দুর্দশায়। এর প্রভাব কিন্তু ভাড়াটিয়াসহ সব জায়গায় পড়বে।
আজ হয়ত নগরবাসীর অনেকে আর্থিক দুরবস্থার কারণে ঠিকমত পৌরকর পরিশোধ করতে পারছেন না। তবুও বলতে হয়, নগরবাসী পৌরকর না দিলে সিটি কর্পোরেশন চলছে কিভাবে! এছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষদের পৌরকর মুক্ত রাখা এখন সময়ের দাবি। এর মাঝে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে পৌরকর আদায় বা স্থগিতকৃত পুনর্মূল্যায়ন বাতিল করে নতুন করে নতুন অ্যাসেসমেন্ট করা কোনটাই ঠিক হবে না। এ বিষয়ে মাননীয় মেয়র মহোদয়ের জোরালো আন্তরিকতাই যথেষ্ট। মাননীয় মেয়র, নগরবাসীকে ঠিক রাখতে হবে। তা যে কোনো মূল্যে। কারণ আপনি জনগণের প্রতিনিধি।

তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী
পৌরকর বাড়ানোর উদ্যোগ অমানবিক
করোনা মহামারির ভয়াল গ্রাসে সামগ্রিক নাগরিক জীবন আজ পর্যুদস্ত। ঘরবন্দী থাকার কারণে আয়ের গণ্ডিও সীমিত হয়ে পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকর্তা- কর্মচারী ছাঁটাই করেছে এবং করছে। ফলে নাগরিকদের আয়ের সক্ষমতা কমে গেছে। এমতাবস্থায় অনেকেই তাদের বাসাবাড়ি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। ভাড়াটিয়ার অভাবে প্রতিটি এলাকায় এখনো অনেক বাসা খালি পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এহেন দুঃসময়ে সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না করে পৌরকর বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন, যা বর্তমান সময়ে একেবারে অমানবিক। অথচ চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকা মহানগরীর গৃহকর অনেক কম। ঢাকার গৃহমালিকদের সাথে আলোচনা করে তাই জেনেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুদক কর্মকর্তার বদলি নিয়ে যত আলোচনা
পরবর্তী নিবন্ধগাড়ি পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণ করতে হবে চসিককে