পাহাড়ে উৎসবের রং

ফুল বিজুর মাধ্যমে শুরু হলো বৈসাবির আয়োজন

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১৩ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

রীতি অনুযায়ী পুরনো বছরের দুঃখ, জরা ভুলে নতুন বছরের মঙ্গল কামনায় নদীর জলে দেবী গঙ্গার উদ্দেশ্যে ভাসানো হয় ফুল। চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ফুল ভাসানো শুরু হয়। আর এর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বৈসাবি উৎসব। পাহাড়ে এখন উৎসবের রং লেগেছে। করোনার কারণে গত দুই বছর আয়োজন ছিল সংক্ষিপ্ত। এবার খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে তাই অন্যরকম আমেজ।
খাগড়াছড়িতে ফুল বিজুতে বৈসাবির আমেজ : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, করোনার প্রকোপ না থাকায় খাগড়াছড়িতে নদীতে ফুল ভাসানোর মাধ্যমে শুরু হয়েছে চাকমাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজুর আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল সকালে চেঙ্গী নদী সংলগ্ন বৃহত্তর খবংপুড়িয়া বিজু উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ফুল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে ভোর ৬টা থেকে ফুল ভাসানো শুরু হয়।
সকালে চাকমা তরুণ-তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে বন থেকে সংগ্রহ করা বিজু, মাধবীলতা, রঞ্জনসহ নানা রকমের ফুল নদীর জলে ভাসায়। পরে নদীর পাড়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা হয়।
বৃহত্তর খবংপুড়িয়া বিজু উদযাপন কমিটির প্রধান ধীমান খীসা জানান, ফুল বিজুর মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়েছে।
ফুল ভাসানো বা ফুল বিজু চাকমাদের উৎসব হলেও সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধনে এই উৎসব সর্বজনীন রূপ নেয়। বৈসাবি উপলক্ষে গতকাল সকালে বর্ণিল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাঙফোর্স চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুপ্রু চৌধুরী ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ।
রাঙামাটিতে উৎসবের রঙ : রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, উৎসবের রঙে পাহাড়ে চলছে বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজু, বিষু, বিহুর বর্ণিল আয়োজন। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে পাহাড়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবির ধর্মীয় আচার। পাহাড় জুড়ে এখন উৎসবের আমেজ।
পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো দিনের বেদনা ভুলে নতুন দিনের প্রত্যয়ের কথা জানালেন মানুষেরা। ফুল ভাসাতে আসা তরুণ-তরুণীরা বলেন, বিগত দুটি বছর করোনার কারণে বৈসাবি উৎসব পালন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবার ধুমধাম করে পালন করব।
রাজবন বিহার ঘাটে বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজু, বিষু, বিহু উদযাপন কমিটির উদ্যোগে পানিতে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
শহরের গর্জনতলীতে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ও কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে বৈসুক উৎসবের সূচনা করেন। পাহাড়ে এখন নানা আয়োজন। অনুষ্ঠিত হয়েছে সাংস্কৃতিক আয়োজন আর খেলাখুলা। ঐতিহ্যবাহী বলিখেলায় উপস্থিত ছিলেন হাজারো মানুষ।
ত্রিপুরাদের ফুল ভাসানো ও ঐতিহ্যবাহী গড়াইয়া নৃত্য অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা ও ঝর্ণা খীসা।
নদীতে ফুল ভাসালেন তরুণ-তরুণীরা : বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসালেন চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়। গতকাল সকালে তিনদিনব্যাপী উৎসবের প্রথম দিনে বালাঘাটামুখ পুরনো নদীর ঘাটে ফুল ভাসাতে জড়ো হয়েছিলেন দুটি সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষেরা।
বিজু উৎসব কমিটির সদস্য বিকাশ চাকমা বলেন, পুরনো বছরের যত অমঙ্গল ও দুঃখকষ্ট রয়েছে, সেগুলো ধুয়ে মুছে ফেলতে নদীতে ফুল ভাসালেন চাকমারা।
বিষু উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বিষু হচ্ছে তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব। এই উৎসবের মূল আকর্ষণ হচ্ছে ঘিলা খেলা। ঘিলা খেলা টুর্নামেন্টে ৩২টি পাড়ার তরুণ-তরুণীরা অংশ নেয়।
এদিকে আজ সাংগ্রাই র‌্যালির মাধ্যমে মারমা অধ্যুষিত বান্দরবানে ৩ দিনব্যাপী জমকালো সাংগ্রাই উৎসব শুরু হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅতিরিক্ত বা কম ঘুম হৃদরোগসহ যেসব রোগের ঝুঁকি বাড়ায়
পরবর্তী নিবন্ধবরকল ইউপি কার্যালয়ে ভাঙচুর