পাঠকের আবদার রক্ষায় ব্যস্ত লেখক

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ

স্টলের সামনে জটলা। ভিড় ঠেলে কাছে যেতেই দেখা গেল কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরীকে। পাঠককে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন তিনি। এত পাঠক দম নেয়ারও যেন ফুরসৎ পাচ্ছে না। এরপরও চোখেমুখে বিরক্তির চাপ নেই। পাঠকের ভালোবাসা যেন সব ক্লন্তি দূর করে নিয়েছে। গতকাল এ দৃশ্য দেখা গেছে প্রথমা প্রকাশনা’র স্টলে। এবার বিশ্বজিৎ চৌধুরীর উপন্যাস ‘আশালতা’ বের করেছে প্রথমা।

শৈলী প্রকাশনার স্টলেও দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র। সেখানে শিশুসাহিত্যিক শুকলাল দাশকে ঘিরে আছেন পাঠকরা। তাদের হাতে ‘আনন্দপুরের দিন’। এর লেখক শুকলাল দাশকে কাছে পেয়ে অটোগ্রাফ নিচ্ছেন তারা, তুলছেন ছবিও। হাসিমুখে পাঠকের আবদার পূরণ করছেন শুকলাল দাশ। আজাদীকে বললেন, পাঠকের ভালোবাসায় লেখার শক্তি পাই।

নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে চলছে অমর একুশে বইমেলা। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে পাঠকের উপচেপড়া ভিড় ছিল মেলায়। বিভিন্ন স্টলে উপস্থিত ছিলেন লেখকও। তাদের কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন পাঠক। নতুন বই কিনে সে বইয়ের লেখক থেকে অটোগ্রাফ নেয়া এবং লেখকের সঙ্গে ছবি তোলায় মজেছিলেন পাঠক। ক্লান্তিহীনভাবে পাঠকের সব আবদার রক্ষা করে গেছেন লেখকও।

 

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের স্টলে পাঠকের আবদার রক্ষা করতে দেখা গেছে কবি এজাজ ইউসুফী, গল্পকার আবু মোশাররফ রাসেল এবং লেখক আহমেদ কুতুবকে। এজাজ ইউসুফী’র কাব্যগ্রন্থ ‘মধুব্রত অধুনা নগরে’ ঘিরে ছিল পাঠাকের উচ্ছ্বাস। এছাড়া শৈলীতে ‘জলছবি সংসার’ লেখক বিচিত্রা সেন, সময় প্রকাশনার স্টলে ‘এই ছুটিতে চাঁদে যাব’ এর লেখক ফিরোজ আহম্মদ এবং আপন আলো স্টলে ‘আপনাকে বলছি স্যার’ এর লেখক শামসুদ্দীন শিশির’ ছিলেন পাঠকের ভালোবাসার চাদরে।

এদিকে গতকাল বিক্রির তালিকায় এগিয়ে থাকা গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বজিৎ চৌধুরীর উপন্যাস ‘আশালতা’, শুকলাল দাশের গল্পগ্রন্থ ‘আনন্দপুরের দিন’ খালেদ হামিদীর উপন্যাস ‘হেলিকপটার ও সোনার তলোয়ার’, লিপি বড়ুয়ার গল্পগ্রন্থ ‘তোমার বসন্তদিনে’, হাসনাত শোয়েবের ‘সন্ধ্যায় ভুল পথে আহির ভৈরব’ ও মুহাম্মদ রমিজ উদ্দিনের উপন্যাস ‘অগ্নিপুষ্প’।

বিশ্বজিৎ চৌধুরীর উপন্যাস ‘আশালতা’র ফ্ল্যাপে হয়, ‘কবি নজরুলকে ভালোবেসে জাতকুল ছেড়েছিলেন আশালতা। কবি তাঁর নাম রেখেছিলেন প্রমীলা। সমাজের ভ্রুকুটি, অজস্র নিন্দামন্দ সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে। শুধু পাশে ছিলেন মা গিরিবালা।

খ্যাতিমানের সঙ্গে প্রেম বিষয়টি কল্পনায় রোমাঞ্চকর মনে হতে পারে, কিন্তু তাঁর সঙ্গে সংসারের দৈনন্দিনতায় জড়ানো কতটা কঠিন, এক জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তা উপলব্ধি করেছেন প্রমীলা। একদিকে পুরো দেশ কাঁপিয়ে তুলছেন বিদ্রোহী কবি, অন্যদিকে প্রেমিক কবির সঙ্গে বিভিন্ন নারীর নানামাত্রার সম্পর্ক তাঁর স্ত্রীর জীবন করে তুলছে যেন অপার সমুদ্রে এক দিশাহীন জলযান।

প্রেম ও বিরহ, সংগ্রাম ও সাফল্য, বৈভব ও দারিদ্র্য ছাপিয়ে নজরুলের উত্থানপতনময় জীবনে চিরঅবিচ্ছেদ্য নাম আশালতা’।

বাংলাদেশভারত সীমান্তে দুটি গ্রাম হচ্ছে ‘আনন্দপুর ও সীমান্তপুর’। আনন্দপুর গ্রামে স্কুলকলেজমাদ্রাসাহাসপাতাল আছে। সীমান্তপুরে নেই। কারণ তারা ছিটমহলের বাসিন্দা। আনন্দপুরের স্কুলে প্রতি বছর মহান বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, মহান শহীদ ও ভাষা দিবস উদযাপন হলেও সীমান্তপুরবাসী এসব উদযাপন করতে পারে না।

তাই এ গ্রামবাসীর মনে অনেক দুঃখ। বাংলাদেশভারত সরকারের ঐতিহাসিক চুক্তির আওতায় ছিটমহলগুলো দুইদেশের ভূখণ্ডের সাথে একীভূত হয়। এতে হাসি ফুটে সীমান্তপুরবাসীর মুখে, তারা দুইদিন ধরে উৎসব করে। এতে যোগ দেয় আনন্দপুরের লোকেরাও। অবশ্য সীমান্তপুরবাসীর আসল আনন্দটা তখনও বাকি ছিল। সেটা এল সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবসে।

সীমান্তপুরবাসী তাদের জীবনের প্রথম বিজয় দিবস উদযাপন করল। সেদিন তারা প্রথম গলা খুলে গেয়েছিল, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ এর চেয়ে আনন্দ আর কী হতে পারে? সীমান্তপুরবাসীর এ আনন্দ পাঠকের সামনে তুলে ধরেন কবি ও শিশু সাহিত্যিক শুকলাল দাশ। তাঁর এর ‘আনন্দপুরের দিন’ গল্পগ্রন্থে। কিশোর গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে শৈলী প্রকাশন।

সমকালীন দৈশিক ও বৈশ্বিক বিবিধ সংকট, মানবপরিস্থিতি, রাজনীতি এরকম অনেক বিষয় চিত্রিত হয়েছে খালেদ হামিদীর উপন্যাস ‘হেলিকপটার ও সোনার তলোয়ার’ এ। উপন্যাসটি নিয়ে বহুমাত্রিক লেখক ও সমালোচক মহীবুল আজিজের মূল্যায়ন হচ্ছেপ্রবাসী অনেকগুলো চরিত্র, তাদের মনোজগৎ, তাদের চোখে দেখা আরবভুবন ও সমকালীন বিশ্ব, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মুক্তিযুদ্ধ এসবই বাস্তবতার উপাদান হিসেবে গৃহীত হয়। আবার তন্ময় ও শান্তির পারিবারিক কাহিনী, সেখানে ব্যক্তি ও তার অন্তর্জগৎ, সামাজিকতা, দাম্পত্য জীবনের সমস্যার সঙ্গে ব্যক্তিত্বের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব এমনতর কাহিনীউপকাহিনীর সূত্র ও সমান্তরালতা উপন্যাসে সৃষ্টি করেছে ওঠানামা।

নিঃসন্দেহে প্রবাসীদের পর্যবেক্ষণে উঠে আসা আরবচিত্র উপন্যাসটির পরম সম্পদ। বিচিত্র তথ্য ও প্রামাণ্য ঘটনা, ঘটনার বিশ্লেষণ এবং সেসবের পরিণামপ্রতিক্রিয়া সংযোজন ঘটায় ভিন্নতর দ্যোতনার। কখনও কখনও এটি ভ্রমণোপাখ্যানের স্বাদও আনে, যদিও তা ভ্রমণকাহিনী নয়। উপন্যাসের সমাপ্তিটাও মানানসই।

লিপি বড়ুয়ার ‘তোমার বসন্তদিনে’ মূলত গল্পগ্রন্থ। শৈলী প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে বইটি। গত সপ্তাহে বইমেলায় শৈলীর প্রকাশনার স্টলে উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে , পাঠক এসে খুঁজছেন ‘তোমার বসন্তদিনে’। এসময় লেখক পাঠকের আবদার রক্ষায় অটোগ্রাফ কিংবা পাঠকের সঙ্গে ছবি তোলায় ছিলেন ব্যস্ত। এর ফাঁকেই আজাদীকে বললেন, বেশ সাড়া পাচ্ছি।

মুহাম্মদ রমিজ উদ্দিনের ‘অগ্নিপুষ্প’ উপন্যাসে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া চারপাশের গল্পগুলো উঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কিছু স্বপ্নবাজ তরুণের বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও প্রতিবাদের গল্প এটি। উপন্যাসের চরিত্র আকলিমা, রাহাতদের গল্প কল্পিত নয়, জীবন থেকে নেয়া।

মানবতার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অসহায় মানুষের পিঠে চড়ে ক্ষমতার আসনে বসা মুখোশধারী হালিম শিকদারদেরও আমাদের আশেপাশে দেখতে পাই। একটি সুন্দর, স্বপ্নময় ও নিপীড়ন বিরোধী সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে যে প্রতিবাদী চরিত্রগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে তা পাঠকের মনকে নিশ্চিত আলোড়িত করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে আগুনে নিঃস্ব সাত জেলে পরিবার
পরবর্তী নিবন্ধভাসানচরে জাতিসংঘ প্রতিনিধি ও চার দেশের রাষ্ট্রদূত