পাকিস্তানি হানাদাররা এখন প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ঘটনাবহুল আজকের দিনটি। এদিন মুজিবনগর থেকে দেওয়া এক বেতার ভাষণে জাতির উদ্দেশে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। পাকিস্তানি হানাদাররা এখন প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের পরাজয় এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। তাজউদ্দীন আহমদ আরও বলেন, আজ আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে শত্রুর ওপর শেষ আঘাত হানতে হবে এবং বাংলাদেশের মাটিতে তাদের কবর রচনা করতে হবে। দেশ যখন আমাদের আহ্বান জানাচ্ছে, তখন সে আহ্বানে যেন আমরা সাড়া দিতে পারি।

আগামীকাল যেন কখনো আমাদের অপবাদ দিতে না পারে যে, আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করিনি। একইসঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদ নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দেওয়ার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই উপমহাদেশে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রস্তাব তুলেছে, তাতে বোঝাই গেছে সংঘর্ষের মূলে সে পৌঁছায়নি। এর মূল কারণ বিষয়ে আমেরিকা চোখ বন্ধ করে আছে। এটা তার মানসিক বিকৃতির পরিচায়ক। চীন পাকিস্তানকে সবসময় বাংলাদেশে গণহত্যা চালাতে উসকানি দিয়েছে।

বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এইচ এফ জে মানেকশ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সময় দ্রুত এগিয়ে চলছে। পাকিস্তানি সেনাদের উচিত ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করা। বর্তমানে পাকিস্তানি সেনারা বরিশাল ও নানা বন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরে এসে সমবেত হচ্ছে। কিন্তু এখানেও তোমরা আশ্রয় নিতে পারবে না। শিগগির এখান থেকেও উচ্ছেদ হবে।

ইতোমধ্যে তোমাদের বিমানবাহিনী অকেজো, তাদের থেকে তোমাদের সাহায্য পাওয়ার কোনো উপায় নেই। বহিঃবিশ্বের কোনো দেশ থেকেও তোমরা সাহায্য পাবে না। আমরা তোমাদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেছি। সমুদ্রপথেও কেউ তোমাদের কাছে রসদ সাহায্য পাঠাতে পারবে না। তোমাদের হাতে এখন প্রাণ বাঁচানো একটিই সুযোগ। সেটি হলো আত্মসমর্পণ। আর যদি আত্মসমর্পণ না করো, তবে তোমাদের ভাগ্যে রয়েছে নিশ্চিত মৃত্যু।

যদি তোমরা আত্মসমর্পণ করো, তবে জেনেভা চুক্তি অনুযায়ী তোমাদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হবে। কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আগামী ৩ দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের ভেতরে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। তবে পশ্চিম রণাঙ্গনে আরো কয়েকদিন যুদ্ধ চলবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ বিতাড়িত। আমিও জাতিসংঘ বুঝি না। আমাদের নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী না বলা পর্যন্ত ভারতীয় সেনারা এগিয়ে যাবে। নিঙন কিংবা ইয়াহিয়া তাদের গতিরোধ করতে পারবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজনসভার টুকিটাকি
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে গড়ে তোলা হবে ৬ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল