পাইপলাইনের জন্য মার্চ থেকে কাটা হবে নগরীর রাস্তা

স্যুয়ারেজ প্রকল্পের অধীনে বসবে ২০০ কিমি পাইপলাইন ওয়াসাকে বলেছি এক সাথে সব রাস্তা কাটতে পারবে না : মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি ৬টি জোন বা ক্যাচমেন্টে বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্যে প্রথম জোনের হালিশহর এরিয়ায় পুরোদমে কাজ চলছে। হালিশহরে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও মার্চ থেকে নগরীতে পাইপলাইন স্থাপনে কাজ শুরু করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ জন্য নগরীর অনেক গুলো রাস্তা কাটতে হবে। রাস্তা কাটতে গিয়ে যাতে কোন ধরনের জনদুর্ভোগ না হয় সেভাবে রাস্তা কাটার পরিকল্পনা করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

 

হালিশহরে ১৬৫ একর প্রকল্প জায়গায় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ যাবতীয় কার্যক্রম শুরু করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রকল্পের অধীনে মোট ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ১৫টি পাম্প স্টেশন, ১৪৪ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন ও ৮০ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার পয়ঃশোধনাগার স্থাপন করা হবে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য ওয়াসা নগরীতে রাস্তা কাটার অনুমতি চেয়ে দরখাস্ত করেছে। আমি ইঞ্জিনিয়ারের সাথে তাদের বসতে বলেছি। এক সাথে সব রাস্তা কাটতে পারবে না। একটা রাস্তায় তাদের কাজ শেষ হওয়ার পর সাথে সাথে মাটি ভরাট করে দিয়ে আমাদেরকে বলে অন্য রাস্তায় যেতে হবে।

কাটা রাস্তা দ্রুত মেরামতের জন্য আমি আমাদের প্রকৌশলীদেরকে নির্দেশ দিয়েছি। এখন তারা (ওয়াসা) একটি রাস্তা কাটার পারমিশন নিয়ে অন্য রাস্তা কেটে ফেলে। তাদেরকে রাস্তা কাটার সময় অনুমতি পত্র সাথে রাখতে বলেছি। এখন তারা (ওয়াসা) একটি রাস্তা কাটার অনুমতিপত্র নিয়ে রাতে যত্রতত্র রাস্তা কেটে ফেলে। এরকম রাতের আধাঁরে রাস্তা কাটার সময় আমি অনেক মালামাল জব্দ করেছি। যেহেতু স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণসেজন্য আমরা এই প্রকল্পটিকেও গুরুত্ব দিচ্ছি।

যে কোনো আধুনিকউন্নত নগরীর জন্য স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূূর্ণ। এটা থাকতেই হয়। আমরাও চায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হোক। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নগরীর যত্রতত্র রাস্তা কাটতে দেয়া হবে না। পরিকল্পিত ভাবে রাস্তা কাটতে হবেযাতে নগরবাসীর দুর্ভোগ না বাড়ে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি দুই ধাপে কাজ করবে। এর মধ্যে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের আওতায় (এসটিপি) রান্নাঘর, গোসলের পানি সংগ্রহ করা হবে, অন্যটি ফিকেল স্ল্যাজ কালেকশন (এফএসটিপির) আওতায় টয়লেটের বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে।

এক্ষেত্রে গ্রাহকের বাসায় স্যুয়ারেজের পাইপলাইন বসানো হবে। ওই পাইপলাইনের সহায়তায় গৃহস্থালী ও গোসলের ব্যবহার করা পানি সরাসরি ক্যাচমেন্ট এরিয়ার পরিশোধনাগারে চলে যাবে। সেখানে এসব পানি পরিশোধিত হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়বে। অপরদিকে বাসাবাড়ির বর্জ্য গুলোও পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিশোধনাগার হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়বে। ফলে নগরের কোনো সেপটিক ট্যাংকের প্রয়োজন পড়বে না।

একই ভাবে নগরীর ছয়টি ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় পানি পরিশোধনাগার বসানো হবে।

হালিশহরের ১৬৫ একর ভূমিতে ক্যাচমেন্ট১ এর পরিশোধনাগার এরিয়া হিসেবে ধরা হয়েছে। মালয়েশিয়ার কারিগরি প্রতিষ্ঠান জেবিও এরিনকো ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় মাঠ পর্যায়ের কার্যাদেশ পায়। এ ক্যাচমেন্ট এরিয়াকে তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে দুটি চীনা ও কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের বিশাল এলাকা জুড়ে এখন পুরোদমে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও স্যুয়ারেজের প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, নগরীতে স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি ছয়টি জোনে ভাগ হয়ে চলবে। এখন ক্যাচমেন্ট(প্রথম জোন) এর কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। মার্চের ১ তারিখ থেকে পাইপ লাইনের কাজ শুরু হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০৩৫ সালের মধ্যে পুরো নগরীকে স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যাচমেন্ট১ এর কাজ শেষ হলে ২০ লাখ মানুষ এর সুবিধা পাবে। এর মধ্যে ১০ লাখ এসটিপি (সরাসরি পাইপলাইন) এবং ১০ লাখ ফিকেল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্টের (বর্জ্য সংগ্রহ) আওতায় আসবে। এর মধ্যে এসটিপি দৈনিক ১০ কোটি লিটার এবং এফএসটিপিতে ৩০০ টন পানি পরিশোধন করা সম্ভব হবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, পুরো নগরীকে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য ৬টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রথম জোনের অধীনে নগরীর হালিশহর, সাগরিকা, সল্টগোলা ক্রসিং, শেখ মুজিব রোড, কদমতলী, সদরঘাট, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, লালখান বাজার, নিউমার্কেট, কোতোয়ালী, জামালখান, আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এসব এলাকাবাসী প্রথম জোনের সুবিধা পাবেন। পুরো এলাকার স্যুয়ারেজ বর্জ্য পাইপলাইন ও খালনালার মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা হালিশহর কেন্দ্রীয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পরিশোধন করা হবে। প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে ধরা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল। তবে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরে ক্যাচমেন্ট১ এর কাজ শুরু হয়। প্রায় ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং বাকি টাকা দিবে কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাংক। মালয়েশিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এরিনকো এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৭ জঙ্গিসহ গ্রেপ্তার ২০
পরবর্তী নিবন্ধপ্রমাণ করেছি, আওয়ামী লীগ আমলেই নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়