পাইকারি বিদ্যুতের দাম ৫৮% বাড়ানোর সুপারিশ

| বৃহস্পতিবার , ১৯ মে, ২০২২ at ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ভর্তুকি থেকে মুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি তা ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে; যদিও শুনানিতে এই দাম বৃদ্ধির বিরোধিতা করেছে ক্যাব ও ব্যবসায়ী নেতারা। খবর বিডিনিউজের।

মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধির মধ্যে পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে খুচরায়ও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারিগরি কমিটির এই সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে বিইআরসি। কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল স্বীকার করেছেন, পাইকারি দাম ঘোষণা হলে খুচরায় তার প্রভাব পড়বে। পাইকারি বিদ্যুতের একমাত্র ক্রেতা ও বিক্রেতা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনে বিতরণকারী সংস্থাগুলো। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন খুচরায়ও দাম বেড়েছিল। তখন পাইকারিতে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুতের সরবরাহ মূল্য ৪০ পয়সা করে বাড়িয়ে (৮ দশমিক ৪ শতাংশ) ৫ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হলেও পাইকারি দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে সরকার ৪৭ পয়সা ভর্তুকি দেওয়া শুরু করে। দুই বছর পর পিডিবি ‘ভর্তুকির ধারা থেকে মুক্ত হতে’ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিদ্যমান মূল্যহার ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা করার প্রস্তাব করে।

তাদের সেই প্রস্তাব নিয়ে গতকাল বুধবার বিইআরসিতে শুনানি হয়। শুনানি শেষে কারিগরি কমিটির বিশ্লেষণে মূল্যহার প্রস্তাবের চেয়ে ৪০ পয়সা কমিয়ে ৮ টাকা ১৬ পয়সা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। তাতে বিদ্যমান দরের চেয়ে দাম বাড়ছে ৫৮ শতাংশ। তবে সরকার ভর্তুকি দিলে তা যে পরিমাণে দেবে, সে পরিমাণে সমন্বয় করে দাম ঠিক করা যাবে বলেও শুনানিতে জানানো হয়।

মূল্যায়ন কমিটির হিসাবে, ২০২১২২ অর্থবছরে ৮ হাজার ১৯৪ কোটি ৯০ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাকোম্পানিগুলোর কাছে সরবরাহ করতে হবে পিডিবিকে। এ জন্য এক বছরে পিডিবির দরকার হবে ৬৬ হাজার ৮৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বিদ্যমান দরে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হলে এক বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। ঘাটতি না রাখতে হলে পিডিবিকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ১৬ পয়সায় বিক্রি করতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে সরকার ভর্তুকি দিলে পাইকারি মূল্যহার কমবে। যে হারে ভর্তুকি দেবে সে হারে মূল্যহার কমবে।

শুনানিতে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ‘অযৌক্তিক ও অন্যায্য’ হবে। বরং অপচয়, সিস্টেম লস এবং সরকারের করের পরিমাণ কমিয়ে এবং দুর্নীতি দূর করে গ্রাহককে সহনীয় এবং ন্যায্য দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়।

তিনি ক্যাবের পক্ষে সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, পাইকারি বিদ্যুতের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি সমন্বয়ে মূল্যহার বাড়ানো কিংবা ভর্তুকি দিতে হবে না। বরং অন্যায়, অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়বৃদ্ধি বন্ধ করলেই চলবে। সরকার যদি ৬ শতাংশ ট্যাঙ নতুনভাবে আরোপ না করে, জ্বালানি তেলে শুল্ককর অব্যাহতি সুবিধা পুনর্বহাল করে, কয়লার ওপর ৫ শতাংশ নতুনভাবে আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার করে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত তেল ব্যক্তি খাতের পরিবর্তে বিপিসির মাধ্যমে আমদানি করে তাহলে ৮ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা ঘাটতি কমানো যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচাক্তাইয়ে দুই ঘণ্টা দোকান বন্ধ রেখে প্রতিবাদ
পরবর্তী নিবন্ধবিয়ের দাবিতে যশোর থেকে চন্দনাইশে ছুটে এলেন প্রেমিকা