পতেঙ্গা সৈকত : বেসরকারি খাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন

| সোমবার , ১৬ মে, ২০২২ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একটি অংশ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে নাগরিক মনে। জায়গাটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)-এর না হওয়া সত্ত্বেও তাদের ইজারা দেয়ার এখতিয়ার আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত ১০ মে দৈনিক আজাদীতে ‘পতেঙ্গা সৈকতের একাংশ যাচ্ছে বেসরকারি খাতে’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তোলা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একটি অংশ বেসরকারি কোম্পানির হাতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সৈকতের একাংশ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে। তবে জায়গাটি সিডিএর নয়। তাই সিডিএর ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অবশ্য সিডিএ বলছে, যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সৈকতের ছোট্ট একটি অংশ প্রাইভেট জোন হিসেবে ইজারা দেয়া হবে। বাকি সৈকত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আর ক্ষুদ্র অংশটির আয় দিয়ে পুরো সৈকতকে নান্দনিক রাখা হবে। বর্তমানের বেহাল দশা থেকে পতেঙ্গা সৈকতকে রক্ষা করে বিশ্বমানের একটি সৈকতে পরিণত করতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নগরীর অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র পতেঙ্গা সৈকত বেসরকারি খাতে দেয়ার জন্য আহ্বান করা টেন্ডারে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সিডিএ আগামী দুই-চারদিনের মধ্যে টেন্ডার মূল্যায়ন ও যাচাই বাছাইয়ের কাজ শুরু করবে। এর পর আগামী কিছুদিনের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তবে পতেঙ্গায় যেখানে সৈকত গড়ে তোলা হয়েছে সেই ভূমির মালিক সিডিএ নয়। সিডিএ শুধুমাত্র উন্নয়ন করেছে। জায়গাটি সিডিএকে হস্তান্তর করার একটি প্রক্রিয়া বেশ আগে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি কার্যকর হয়নি। বর্তমানে পতেঙ্গার সৈকত এলাকার জায়গার মালিক সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। মালিকানা না থাকলে ইজারা দেয়ার সুযোগ থাকে না উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিডিএ পরের জায়গা ইজারা দেয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে, যা বেআইনি এবং পরবর্তীতে জটিলতা তৈরি করবে। ইজারা দেয়ার প্রধান ও প্রথম শর্ত হচ্ছে মালিকানা। মালিকানা পাওয়ার আগে ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করায় সিডিএর কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো একে একে চলে যাচ্ছে বেসরকারি খাতে। তুলে দেওয়া হচ্ছে ইজারাদারদের হাতে। সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে এটি করা হলেও প্রকৃতক্ষেত্রে সেগুলো হয়ে উঠছে ব্যবসায়িক কেন্দ্র। সাধারণ মানুষের যে স্বস্তিতে ঘোরাঘুরির সুযোগটাও সংকুচিত হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নিঃশ্বাস ফেলার জায়গাও। পরিবেশবিদদের মতে, একারণে প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্যের সর্বনাশও ঘটিয়ে চলেছে।
চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতকে বেসরকারি খাতে তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করছেন অনেকে। এখানকার নাগরিক সমাজ, পরিবেশকর্মী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে কর্মসূচি পালন করেছেন। বিবৃতি দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। এতে তাঁরা বলেছেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের অজুহাত দেখিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একাংশকে প্রাইভেট জোন ঘোষণা করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা এই গণবিরোধী, তুঘলকি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ বিবৃতিতে বলা হয়, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের সর্বশেষ বিনোদন কেন্দ্র, যেখানে মানুষ অবসর সময়ে গিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারে। এটি প্রকৃতির দানে গড়ে ওঠা সম্পদ, কোনো ব্যক্তিবিশেষের তৈরি নয়। চট্টগ্রাম শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত যেসব জায়গা ছিল, উন্নয়ন আর আধুনিকায়নের নামে একে একে সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ফয়’স লেককে বেসরকারি খাতে ইজারা দিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে ডিসি হিল বন্ধ হয়ে আছে। সংস্কারের নামে ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দান বন্ধ করে রাখা হয়েছে। জাতিসংঘ পার্ককে ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে। এখানে যে সবুজ, শ্যামল প্রান্তর ছিল সেখানে শিশুপার্ক বানিয়ে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। নাগরিক সমাজ এ কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একাংশ উন্নয়নের নামে ইজারাদান ও টিকেট ধার্য করলে সর্বজনের স্বীকৃত প্রবেশাধিকার হরণ হবে। প্রাকৃতিক সৈকতের বিকৃতি ঘটবে। একই সৈকতে দুই ধরনের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম মানে প্রাণ বৈচিত্র্যের শহর। পাহাড়, নদী আর সমতলের অপূর্ব সমন্বয়। এরকম গণবিরোধী উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে এই শহর ক্রমশ বিভীষিকায় পরিণত হবে। পরিণত হবে অসুস্থ নগরীতে।
আমরা চাই, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সিডিএ পিছিয়ে আসবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে